সংসদে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিএমও।
লোকসভা নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণা হয়নি এখনও। তবে ভোটযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিজেপিকে মাত দিতে প্রিয়ঙ্কা-ঘুঁটি চেলেছে কংগ্রেস। মোদী-যোগীর গড় পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর হাতে। তবে বিজেপির তরফে নির্বাচনী কৌশল গোপনই রাখা হয়েছে এখনও পর্যন্ত। তার মধ্যেই বুধবার সংসদে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম দফার শেষ ভাষণ ছিল তাঁর। তাই চেনা ভঙ্গিতেই ধরা দিলেন তিনি। নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সংসদে দাঁড়িয়ে, গত ৪ বছর ৮ মাসে নিজের সরকারের কাজকর্মের হিসাব দিতে দেখা গেল তাঁকে। বিরোধীদের সঙ্গে কৃতিত্ব যদিও ভাগাভাগি করে নিয়েছেন, তবে তোপ দাগতে ভোলেননি। বিশেষ করে কংগ্রেস এবং রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে।
চলতি বাজেট অধিবেশনের শেষদিনে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। খুব শীঘ্র দেশের অর্থনীতি ৫ লক্ষ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলবে। তাঁর সরকারের আমলেই এই কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে ভারতের প্রতি আস্থা বেড়েছে গোটা দুনিয়ার। বিশ্বের তাবড় সংস্থাগুলি আমাদের নিয়ে আলোচনা করছে। ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজের জায়গা পাকা করে নিতে পেরেছি আমরা। মেক ইন ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্পের হাত ধরে অর্থনৈতিক কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছি। আর এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। তাঁদের জন্যই কেন্দ্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠিত হয়েছে। গত ৩০ বছরে এই প্রথম কংগ্রেস মুক্ত সরকার গঠিত হয়েছে। তা-ও আবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। যা নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। ভারতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে সকলে। কারণ তারা জানে, সর্বসম্মতিতে যিনি নেতা হয়েছেন, তাঁর উপর আস্থা রাখা যায়। তাই বিশ্ব দরবারে আজ ভারতের যে অবস্থান, তার কৃতিত্ব আর কারও নয়, না মোদীর, না সুষমা স্বরাজের, এই কৃতিত্ব দেশের ১২৫ কোটি নাগরিকের।’’
Speaking in the Lok Sabha. Watch. https://t.co/gZe2KPyjh3
— Narendra Modi (@narendramodi) February 13, 2019
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ।
আরও পড়ুন: যন্তরমন্তরে মধ্যমণি মমতা, বাম-কংগ্রেসকে ঠুকেও জোটবার্তা ‘বঙ্গাল কি শেরনি’র
প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি করেন, ‘‘বর্তমান সরকারের আমলে সংসদে ২১৯টি বিল উত্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে ২০৩টি পাশ হয়েছে। এই সংসদেই বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকার বিরুদ্ধে আইন পাশ হয়েছে। দুর্নীতি রুখতে আনা হয়েছে কড়া আইন। কোটি কোটি টাকা লুঠ করে যাঁরা বিদেশে পালিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে মান্ধাতা আমলের ১৪০০টি আইন।’’ রাফাল দুর্নীতি নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করতে সংসদে কাগজের উড়োজাহাজ বানিয়ে উড়িয়েছিলেন বিরোধীরা। তা নিয়েও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশের সামনে নিজেদের আচরণ নিয়ে সাংসদদের আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে সতর্ক করেন তিনি।
গত বছর জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা বিল পেশ হয়েছিল। কৃষি ঋণ মকুব, মূল্য বৃদ্ধি, ব্যাঙ্ক দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সেই সময় সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন বিরোধীরা। আবার সেই অধিবেশনেই পাপ্পু তকমা কাটিয়ে রাতারাতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ হিসাবে উঠে এসেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। বিজেপি এবং সঙ্ঘ তাঁকে যতই হেয় করুন না কেন, তিনি কখনও প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করবেন না বলে জানিয়েছিলেন রাহুল। কংগ্রেসের আদর্শ ও নীতির প্রমাণ দিতে আসন ছেড়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গনও করেছিলেন। আসনে ফিরে আবার সেই নিয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে চোখ টিপে ইশারা করতেও দেখা যায় তাঁকে।
আরও পড়ুন: মনে রাখব আমরা, ক্ষোভ সামলাতে না পেরে সনিয়াকে বললেন মমতা
বুধবার সংসদে সেই ঘটনাও টেনে আনেন নরেন্দ্র মোদী। নাম না করেই রাহুলকে কটাক্ষ করেন তিনি। ভালবেসে কাউকে বুকে টেনে নেওয়া আর ইচ্ছাকৃতভাবে কারও গলায় ঝুলে পড়া, দুটোর মধ্যে কী পার্থক্য, তা বোঝার মতো বোধবুদ্ধি রয়েছে তাঁর। ১৯৯৯ সালের ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবির জনপ্রিয় গান ‘আখোঁ কি গুস্তাখিয়াঁ’র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘সংসদে প্রথমবার আখোঁ কি গুস্তাখিয়াঁ দেখার সুযোগও হয়েছে আমার। সংবাদমাধ্যমও তাতে বেশ মজা পেয়েছিল।’’ তিনি মুখ খুললে মাটি কেঁপে উঠবে বলে কয়েকমাস আগে করেছিলেন রাহুল গাঁধী। তার পর রাফাল দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ‘চৌকিদার’মোদীকে সরাসরি ‘চোর’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে রাহুল মুখ খোলায় কেউ কোনও কম্পন অনুভব করেননি বলে বিদ্রূপ করেন তিনি।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy