Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্‌ধের বাজারেও পাহাড় জুড়ে শুধু রাম রহিম

হরিয়ানার ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরু পাহাড়ে কী কারবার ফাঁদার চেষ্টা করেছিলেন তা নিয়ে টানা বন্‌ধের বাজারেও সরগরম দার্জিলিং। ধর্ষণের দায়ে জেলে যাওয়া ‘বাবা’র কাছে মোটা টাকার চাকরির লোভে গেলে কী হতো সেটা ভেবে শিউরে উঠছেন অনেকেই।

সে-দিন: সময়টা ২০১২। দার্জিলিঙে গুরমিত রাম রহিম সিংহ। —ফাইল চিত্র।

সে-দিন: সময়টা ২০১২। দার্জিলিঙে গুরমিত রাম রহিম সিংহ। —ফাইল চিত্র।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

দু’দিন ধরে ‘বাবা গুরমিত রাম রহিমে’র ছবি টিভিতে দেখছেন আর আঁতকে উঠছে কুইন অব হিলস। হরিয়ানার ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরু পাহাড়ে কী কারবার ফাঁদার চেষ্টা করেছিলেন তা নিয়ে টানা বন্‌ধের বাজারেও সরগরম দার্জিলিং। ধর্ষণের দায়ে জেলে যাওয়া ‘বাবা’র কাছে মোটা টাকার চাকরির লোভে গেলে কী হতো সেটা ভেবে শিউরে উঠছেন অনেকেই। গতিক সুবিধের নয় বুঝে সে যাত্রা দলমত নির্বিশেষে পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা জোট বেঁধে ‘বাবাকে’ পাহাড় ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন। ফলে, শহরের কাছে গাঁধী রোডে ১ একর জমিতে বাবার আশ্রম আর গড়ে ওঠেনি।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও মনে করেন, পাহাড়বাসীরা অতি মাত্রায় সতর্ক থাকায় ওই ধর্মগুরু দার্জিলিঙের কোনও ক্ষতি করতে পারেননি। শনিবার রোশন বলেন, ‘‘কিছু দিন যেতেই বাবা রাম রহিমের আচার আচরণ নিয়ে অনেকের সন্দেহ হয়। মেয়েরা ধর্মগুরুর আচরণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করতে শুরু করেন। সে সময়ে পাহাড়বাসীদের নিয়ে নারী মোর্চা পথে নামে। ওই ধর্মগুরু থাকলে পাহাড়ের মেয়েদের প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ-প্রশাসনকে। জনমতের চাপে রাম রহিম পাহাড় ছেড়ে চলে যায়।’’

সেটা ছিল ২০১২ সালের শীতকাল। দলবলকে উড়ানে পাঠিয়ে ‘বাবা’ নেমেছিলেন হেলিকপ্টারে। রাজভবনের পাশের অভিজা়ত হোটেলটি এক মাসেরও বেশি সময়ের জন্য ‘বুক’ করেছিলেন। সঙ্গে এসেছিল তাঁর নিজস্ব দমকল বাহিনী। তিনি থাকাকালীন একদিন চকবাজারের কাছে বিশাল আগুন লাগে। রাজ্যের দমকল পৌঁছনোর আগেই বাবার দমকল বাহিনী গিয়ে তা নিভিয়ে ফেলে। সেই সুবাদে জনপ্রিয়তা বাড়ে। চকবাজারের কয়েকজন দোকানদার এখন বলছেন, ‘‘সে দিন আগুন লাগার পরে দার্জিলিঙে সদ্য পা ফেলা ‘বাবা’র দমকল চট করে খবর পেয়েছিল কী করে, অত তাড়াতাড়ি পৌঁছেছিল কী ভাবে, সেটা তখন ভাবিনি। এখন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।’’

যে মাস দুয়েক রামরহিম দার্জিলিঙে ছিলেন, কী না করেছেন। শোনা যায়, একটা আস্ত চা বাগান কেনার চেষ্টা করছিলেন তিনি। দার্জিলিং সদরের কাছাকাছি একটা গোটা গ্রাম জনবসতি সমেত কেনার ছকও কষেছিলেন। প্রয়োজনে ১০০ কোটি টাকা খরচ করতেও ‘বাবাকো পরোয়া নেহি’ বলে শুনেছিলেন বাসিন্দারা। বাছাই মেয়েদের বিদেশে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে উচ্চ মানের নিরাপত্তা রক্ষী, বলিউড, হলিউডে সিনেমায় সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও ‘বাবার’ রয়েছে বলে অনুগামীরা রটিয়েছিলেন। অভিযোগ, কাজের টোপ দিয়ে বহু তরুণীকে ডেকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

সেই সময়ে কর্তব্যরত প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা এখন কলকাতায় কর্মরত। তিনি বলেন, ‘‘উনি কিছু অফিসারকে ডেকে রোজই আসর বসাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সেটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’’ ওই আমলাকে বদলি করে দেওয়ার হুমকি শুনতে হয়েছিল বাবার কাছে। ঘটনাচক্রে, তার পরেই পুলিশ-প্রশাসনের কড়া বার্তা পেয়ে বাবা পাহাড়ের পাট গুটিয়ে একদিন সকালে ফিরে গিয়েছিলেন হরিয়ানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE