Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘অচ্ছে দিন’-এর বাইশ কাহন এ বার ২০২২ পর্যন্ত ঠেলে দিলেন মোদী

অভিধান ঘেঁটে বাছাই করা বিশেষণগুলি নিজের উপরেই প্রয়োগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। বুলেট প্রুফ ঘেরাটোপে স্বাধীনতা দিবসে চলতি মেয়াদের শেষ বার লালকেল্লার বক্তৃতায় গরিব-দলিত-ওবিসি-আদিবাসী-মহিলা মন জয়ে ভোটের মন্ত্র আওড়ালেন। বোঝালেন, ভবিষ্যতে বাদ পড়বেন না মধ্যবিত্তরাও। যে মধ্যবিত্তরা এখন কর দিয়ে গরিবদের জন্য ‘পূণ্য অর্জন’ করছেন। কিন্তু আগের মতো আজও অধিকাংশ লক্ষ্যপূরণের সময়সীমা ঠেলে দিলেন ২০২২ সালে, ২০১৯ সালে ভোটের আরও তিন বছর পর।

প্রতিশ্রুতি: লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

প্রতিশ্রুতি: লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৩
Share: Save:

আকাশ ছোঁয়া তো দূর অস্ত, নিজের দেওয়া ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতিও চার বছরে রাখতে পারেননি। ২০১৯ সালের ভোটের আগে এ বারে নতুন করে ‘আশা’ জোগানোর প্যাকেজ আনলেন নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, তিনি ‘অস্থির, চঞ্চল, অধৈর্য, ব্যাকুল এবং ব্যগ্র’। কারণ, ‘নতুন ভারত’ গড়তে এ বারে তিনি দেশকে আকাশেরও উপরে নিয়ে যেতে চান।

অভিধান ঘেঁটে বাছাই করা বিশেষণগুলি নিজের উপরেই প্রয়োগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। বুলেট প্রুফ ঘেরাটোপে স্বাধীনতা দিবসে চলতি মেয়াদের শেষ বার লালকেল্লার বক্তৃতায় গরিব-দলিত-ওবিসি-আদিবাসী-মহিলা মন জয়ে ভোটের মন্ত্র আওড়ালেন। বোঝালেন, ভবিষ্যতে বাদ পড়বেন না মধ্যবিত্তরাও। যে মধ্যবিত্তরা এখন কর দিয়ে গরিবদের জন্য ‘পূণ্য অর্জন’ করছেন। কিন্তু আগের মতো আজও অধিকাংশ লক্ষ্যপূরণের সময়সীমা ঠেলে দিলেন ২০২২ সালে, ২০১৯ সালে ভোটের আরও তিন বছর পর।

কংগ্রেসের আহমেদ পটেল, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাদের বক্তব্য— আর ফিরছেন না জেনেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর তথাকথিত ‘অচ্ছে দিন’ আনার দায়িত্ব পরের সরকারকে দিয়ে গেলেন। গত লোকসভা ভোটের আগে লালকেল্লার মডেল বানিয়ে মনমোহন সিংহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন। এ বারে কি রাহুল গাঁধীর খোলা চ্যালেঞ্জ স্বীকার করবেন মোদী? দেশে ঘৃণা, হিংসার রাজনীতি, বেকারি, টাকা, অর্থনীতির বেহাল দশা, রাফাল-ব্যপম দুর্নীতি, ডোকলাম, ধর্ম-জাতির উন্মাদনা মোকাবিলা নিয়ে একটি কথাও নেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে। শুধু ভোটের কথা। তাঁর কথায়— ২০১৯-এর ভোট হল দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াই।

আরও পড়ুন: ২০২২-এ ভারতেরই যানে মহাকাশে মানুষ: মোদী

অতীতের বিতর্ক এড়াতে আজ লালকেল্লায় অমিত শাহের পাশেই রাহুল গাঁধীকে বসতে দেওয়া হয়। মোদী নতুন আশার গল্প শোনাচ্ছেন, মিটিমিটি হাসছেন রাহুল। ৮২ মিনিটের বক্তৃতায় নতুন ঘোষণা তিনটি। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন থেকে ‘মোদী কেয়ার’ শুরু করা। দুই, মহাকাশে পুরুষ বা মহিলাকে পাঠানো। সেটিও ২০২২ সালের মধ্যে। আর তিন, সেনায় মহিলাদেরও পুরুষদের সমান সুযোগ দেওয়া।

এর বাইরে প্রতিশ্রুতি দিলেন— সকলের জন্য ঘর, বিদ্যুৎ, নিকাশি, জল, স্বাস্থ্য, বিমা, দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগের ব্যবস্থা। কবেকার মধ্যে সেটা বলেননি। শুধু চার বছরের রিপোর্ট কার্ড দিতে মাপকাঠি করলেন কংগ্রেস জমানার ২০১৩ সালকে। তার নিরিখেই দাবি করলেন, কত দ্রুত কাজ করেছে তার সরকার। কংগ্রেস জমানায় ছিল নীতিপঙ্গুত্ব, আর এখন ‘শুয়ে থাকা হাতি দৌড় শুরু করেছে।’ এক ‘বিদেশি সংস্থাও বলছে’, ৫ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে গিয়েছে। কোন সংস্থা? তা অবশ্য বলেননি।

কংগ্রেস বলছে, আসলে সবই নাটক। মোদী ফের একটি ‘আশা’র প্যাকেজ বেচতে চাইছেন। তাই নিজেই স্বীকার করছেন, তিনি অস্থির-অধৈর্য। কিন্তু আগের প্রতিশ্রুতিই যিনি পালন করেননি, মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে কেন ফের বোকা হবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE