Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রশ্নে জাপানের হাত ধরতে চায় ভারত

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ভারতের বিদেশনীতি রীতিমতো কোণঠাসা। এ ব্যাপারে সাউথ ব্লকের সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে চিন ঢুকে পড়ে গোল দিয়ে দিয়েছে— এমনটাই মনে করা হয়।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত এবং জাপান যৌথ ভাবে কাজ শুরু করতে চলেছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দু’দেশের রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। জাপানের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিপ্পন ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে বলে খবর।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ভারতের বিদেশনীতি রীতিমতো কোণঠাসা। এ ব্যাপারে সাউথ ব্লকের সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে চিন ঢুকে পড়ে গোল দিয়ে দিয়েছে— এমনটাই মনে করা হয়। সেপ্টেম্বরে মায়ানমারে গিয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণই করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বরং সে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে মায়ানমারকে খুশি করার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, ভারতের বরাবরের আশঙ্কা— মায়নমারকে তুষ্ট রাখতে না-পারলে দেশটি পুরোপুরি চিনের কব্জায় চলে যাবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের তৎপরতাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে ভাবে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে, তাতে গলা মেলাতে পারত নয়াদিল্লি। কিন্তু মোদী সরকার সেটাও করেনি। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের হাসিনা সরকার। সূত্রের খবর, এই বছরের মাঝামাঝি মোদীর বাংলাদেশে যেতে পারেন। তার আগে বাংলাদেশের জন্য ভারতের তরফে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া অন্তত তিনি নিয়ে যেতে চাইছেন।

কেন না রোহিঙ্গা নিয়ে ত্রিস্তরীয় সমাধানসূত্র ঘোষণা করে বাংলাদেশের মন জয় করে নিয়েছে চিন। বেজিং-এর ত্রিস্তরীয় প্রস্তাব— ১) রাখাইন প্রদেশে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা, রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করা এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা। ২) বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো। ৩) রাখাইনের দারিদ্র দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড়। এ ব্যাপারে সিংহ ভাগ দায়িত্ব নিতেও রাজি চিন।

এর পরেই নড়ে চড়ে বসেছে বিদেশ মন্ত্রক। সূত্রের খবর পরিস্থিতির উপর নজর রাখছিল জাপানও। মায়ানমারে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার সময় থেকেই সে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এসেছে জাপান। বহু দেনা মাফ করে দেওয়া হয়েছে। তদুপরি মায়ানমারে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পগুলির জন্য ১০০ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন ঋণও দেওয়া হয়। বেশ কিছু দিন আগে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহি সাসাকাওয়াকে বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে দৌত্য করার জন্য মায়নমারে পাঠায় জাপান সরকার। উদ্দেশ্য, সে দেশের বিভিন্ন আদি জনগোষ্ঠীকে মূল রাজনৈতিক স্রোতে নিয়ে আসা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সাসাকওয়াই সমন্বয় করছেন নয়াদিল্লির সঙ্গে। এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে জাপানেরও একটি স্বার্থের যোগ রয়েছে। চিন যাতে মায়ানমারে তার থাবা গেড়ে বসতে না-পারে— তা যেমন নয়াদিল্লি চায়, চায় টোকিও-ও। আর তাই এ ক্ষেত্রে দু’টি দেশ একযোগে কূটনৈতিক সহযোগিতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE