Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

চিন, আমেরিকার দ্বৈরথে হু-র শীর্ষ নেতৃত্ব কাঁটার মুকুট হবে না তো ভারতের?

২২মে প্রথম বৈঠকে বসবে ৩৪টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া নতুন এগজিকিউটিভ বোর্ড। যার নেতৃত্বে থাকবে ভারত।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ১৪:৩০
Share: Save:

আর ক’টা দিন। তার পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নিয়ন্ত্রক কমিটির মুকুট উঠতে চলেছে ভারতের মাথায়। ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অ্যাসেম্বলি (ডব্লিউএইচএ)-র এগজিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ার হতে চলেছেন ভারতের প্রতিনিধি। কিন্তু অতিমারির পর হু আর তার দুই শক্তিশালী দেশ চিন ও আমেরিকা যে ভাবে পরস্পরবিরোধী বাগবিতন্ডায় সরব হয়ে উঠেছে, তাতে হু-র নিয়ন্ত্রক কমিটির সেই মুকুট ভারতের পক্ষে ‘কাঁটার মুকুট’ হয়ে ওঠারও আশঙ্কা রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই মুহূর্তে খুব মেপে পা ফেলতে হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অ্যাসেম্বলির নতুন এগজিকিউটিভ বোর্ডের নতুন সদস্যদের বেছে নিতে দু’দিনের ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু হচ্ছে আর পাঁচ দিন পর, ১৮ মে থেকে। ফিবছরই জেনিভায় বসে ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অ্যাসেম্বলির এই বৈঠক। সেখানেই হু-র নীতি নির্ধারিত হয়, বেছে নেওয়া হয় হু-র পরবর্তী ডিরেক্টর জেনারেল, গৃহীত হয় বিভিন্ন আর্থিক নীতি আর খতিয়ে দেখা হয় হু-র বিভিন্ন কর্মসূচির বাজেট।

এ বার ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অ্যাসেম্বলির নতুন এগজিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ার পদে ভারতের প্রতিনিধিকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগেই। ২২মে প্রথম বৈঠকে বসবে ৩৪টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া নতুন এগজিকিউটিভ বোর্ড। যার নেতৃত্বে থাকবে ভারত।

যাতে অতিমারির পর হু, চিন আর আমেরিকার বিরোধ মেটানোর দায়টা বর্তাবে চেয়ার পদে থাকা ভারতেরই উপর। অতিমারির সতর্কতা জারি করা ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটানোর জন্য ইতিমধ্যেই হু-কে দায়ী করেছে আমেরিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে চিনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাৎসরিক মার্কিন অর্থসাহায্য। অতিমারি পরিস্থিতিতে হু-র পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিয়ে আলাদা ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই রকমের তদন্তের জন্য হু-র কাছেও দাবি জানিয়েছে আমেরিকা। চিনের বিরুদ্ধেও হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অ্যাসেম্বলির এগজিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ার পদটি ভারতের কাঁটার মুকুট হয়ে উঠবে না তো?

আরও পড়ুন: করোনার আতঙ্কের মাঝে ৩৫ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রীকে দেখে ভরসা পাচ্ছেন দেশবাসী

আরও পড়ুন: এ বার করোনার টিকা আবিষ্কার? ইতালির বিজ্ঞানীদের দাবি ঘিরে আশার আলো

আসন্ন বৈঠকে আমেরিকা যে সুর চড়াবে হু-র বিরুদ্ধে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই বিশেষজ্ঞদের। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, অতিমারি, হু-র ভূমিকা নিয়ে হু-র সদস্য রাষ্ট্র ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইজরায়েল ও ব্রাজিলের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পায়ো। তাতে অতিমারির সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে হু-র বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব। অভিযোগ করেছেন চিনের বিরুদ্ধেও। পরে মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মর্গ্যান ওর্টাগাসের বিবৃতিতেও তার ইঙ্গিত মিলেছে।

ভারত যে এই পরিস্থিতিতে খুব মেপে পা ফেলতে চাইছে, তার প্রমাণ মিলেছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতিতে। মার্কিন বিদেশসচিবের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে হু বা চিন নিয়ে কোনও কথা উঠছে কি না, তার উচ্চবাচ্য করেননি জয়শঙ্কর। ভারতের বিদেশমন্ত্রী শুধু বলেছেন, ‘‘আলোচনা হয়েছে অতিমারি পরিস্থিতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য রক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ও দেশগুলির মধ্যে কী ভাবে যাতায়াত শুরু করা যায়, এই সব নিয়েই।’’

হু-কে বাৎসরিক মার্কিন অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও এখনও পর্যন্ত ভারতকে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। বিদেশমন্ত্রকের তরফে শুধু এইটুকুই বলা হয়েছে, ‘‘আগে সঙ্কট (অতিমারি) থেকে বেরিয়ে আসা যাক, তার পর এই সব নিয়ে ভাবা যাবে।’’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে দু’তরফেরই। আগামী দিনে ভারতে লগ্নি না বাড়ানোর যেমন প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত থাকছে আমেরিকার দিক থেকে, তেমনই দিল্লিকে আসন্ন বৈঠকে ‘চুপ করিয়ে রাখতে’ চিনকে ভারত সীমান্তে ‘বাহুবল’ দেখানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে। তাই আমেরিকার যথেষ্ট প্রভাব থাকা অর্থনৈতিক ভাবে খুবই শক্তিশালী জি-২০ জোটের শীর্ষ বৈঠকে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে নিজেকে সংস্কারের প্রয়োজন আছে হু-র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE