Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মায়ানমারে ফেরানো হল ৭ রোহিঙ্গাকে

অবশেষে মায়ানমারে মাটিতে পা রাখলেন ভারতে আটক সাত রোহিঙ্গা শরণার্থী। বৃহস্পতিবার তাঁদের সীমান্ত থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায় মায়ানমার সরকার।

দস্যি-দামাল: শরণার্থী শিবিরের বাইরে খেলা রোহিঙ্গা শিশুদের। নয়াদিল্লিতে। রয়টার্স

দস্যি-দামাল: শরণার্থী শিবিরের বাইরে খেলা রোহিঙ্গা শিশুদের। নয়াদিল্লিতে। রয়টার্স

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

অবশেষে মায়ানমারে মাটিতে পা রাখলেন ভারতে আটক সাত রোহিঙ্গা শরণার্থী। বৃহস্পতিবার তাঁদের সীমান্ত থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায় মায়ানমার সরকার।

৫ বছর আগে বাংলাদেশ হয়ে করিমগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন তাঁরা। রেল পুলিশের হাতে মোট ১৩ জন রোহিঙ্গা ধরা পড়লেও এখনও পর্যন্ত ৭ জনের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে মায়ানমার সরকার। বুধবারই কাছাড় পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের মণিপুরে নিয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার মোরে-তামু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আসে মায়ানমার পুলিশের দল। দুই দেশের মধ্যে বন্দি হস্তান্তর সংক্রান্ত নথি সাক্ষরিত হয়। পরে বেলা ১টা নাগাদ সীমান্ত পেরোন ওই সাত জন। এই প্রথম সরকারি ভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারের হাতে তুলে দিল ভারত। সরকারের শীর্ষ আইনজীবী তুষার মেটা জানিয়েছেন, মায়ানমার দূতাবাস এই সাত জনকে তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে শংসাপত্র দিয়েছে।

শিলচর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তরফে জানানো হয়েছে, অনেক দিন ধরেই বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়েছিলেন ওই বন্দিরা। তাঁরা রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা। আটক বাকি ৬ জনও অপেক্ষায় রয়েছেন দেশে ফেরার। তাঁদের ঠিকানা খুঁজে পেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মায়ানমার সরকার। প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুইয়ার বক্তব্য, নির্যাতনের শিকার হয়েই মায়ানমারের রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়ছেন। একই কারণে এ দেশে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হলে, রোহিঙ্গাদেরও একই মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন দুই শরণার্থী মহম্মদ সালিমুল্লা ও মহম্মদ শাকির। আজ তাঁদের হয়ে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। সুপ্রিম কোর্টে তিনি জানান, ওই রোহিঙ্গারা শরণার্থী, অনুপ্রবেশকারী নয়। ওই সাত জনের সঙ্গে কথা বলার জন্য আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের হাইকমিশনার বা তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠানো হোক। তাঁর আর্জি সরাসরি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত সাফ বলে, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা আমরা।’’ আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেছেন, ‘‘সাত রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে মায়ানমার সরকার। এর পর আর প্রত্যর্পণে আপত্তির কী আছে?’’ প্রশান্ত ভূষণ পাল্টা বলেন, ‘‘এটা ভুল তথ্য। ওদের চিহ্নিত করেনি যায়নি। তা ছাড়া আদালতের কর্তব্য রাষ্ট্রহীনদের রক্ষা করা।’’ প্রধান বিচারপতি জবাব দেন, ‘‘আপনাকে আমাদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।’’

একটি হলফনামায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সাত জন মায়ানমারে যেতে ইচ্ছুক। তাঁরা বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছিল। তাঁদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, জোর করে ওই রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারত।

রাজ্যের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অসমের জেলগুলিতে এখনও ৩২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে তেজপুরেই রয়েছেন ১৫ জন। তাঁদের সাত জন অপ্রাপ্তবয়স্ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE