২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ছবি: সংগৃহীত।
২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা মুক্ত ভারত গড়ার জাতীয় কর্মসূচি সফল করতে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ওষুধের দোকানগুলিকে উৎসাহ-ভাতা দেওয়ার কথা গত এপ্রিলে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সেই ঘোষণা খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির একটা বড় অংশ।
নতুন যক্ষ্মা রোগীর নাম-ঠিকানা এবং রোগের ধরন (ক্যাটিগরি) নথিভুক্ত করতে ২০১২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ‘নিক্ষয়’ নামে একটি অ্যাপ চালু করে। দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ঠিক কত, তা জানতেই ওই ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকই জানাচ্ছে, তার পরেও বেসরকারি ক্ষেত্রে
চিকিৎসা করাতে যাওয়া রোগীদের তথ্য গোপন করার প্রবণতা ঠেকানো যায়নি। এর পরেই মন্ত্রকের তরফে ঘোষণা করা হয়, ‘নিক্ষয়’ অ্যাপে নতুন রোগী নাম নথিভুক্ত করালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, চিকিৎসা-কেন্দ্র, ওষুধের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলি প্রত্যেকে এক হাজার টাকা করে পাবে। আরও বলা হয়, প্রথমে ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। রোগীকে সুস্থ ঘোষণার পরে পাওয়া যাবে বাকি টাকা। কিন্তু বেসরকারি চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘নিক্ষয়’ অ্যাপ সম্পর্কে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা না থাকায় গোটা বিষয়টি অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। গত সেপ্টেম্বরে সেই কর্মসূচির একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তার প্রেক্ষিতে ‘হু’ জানায়, যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্যে অধিকাংশ দেশ এখনও পিছিয়ে। বিশ্বের মোট যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর এক-চতুর্থাংশ রয়েছেন ভারতে। এই তথ্য সামনে আসার পরেই ভারত, রাশিয়ান ফেডারেশন, রোয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ ৫০টি দেশের নেতাদের নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে যক্ষ্মা নির্মূল করতে নির্ণায়ক পদক্ষেপ করতে জোর দেওয়া হয়।
এই কর্মসূচি সফল করতে এ বার সরকারি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। সংস্থার ‘এন্ড টিবি’ উদ্যোগের সেক্রেটারি-জেনারেল এবং চেয়ারম্যান আর ভি অশোকান মানছেন, এ কাজে বেসরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রকে এগিয়ে আসার যে ডাক দেওয়া হয়েছিল, তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। তাঁর কথায়, “এখনও ভারতে প্রায় ৩০ লক্ষ যক্ষ্মা রোগীর কোনও তথ্য নেই। অথচ তাঁরা যাতে বিনামূল্যে ওষুধ, শারীরিক পরীক্ষার সুবিধা এবং পুষ্টিগত সাহায্য পান, সে জন্য ওই তথ্য জরুরি। তাই বেসরকারি চিকিৎসকদের কাছে যাওয়া বড় অংশের রোগীকেও সরকারি নজরে আনতে হবে।”
সমস্যা আরও আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘নিক্ষয়’ অ্যাপ নিয়ে শহরের বেসরকারি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই। বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অংশুমান মুখোপাধ্যায় বলছেন, “কোনও উৎসাহ ভাতা (ইনসেন্টিভ) পাই না। অথচ প্রতিদিন নতুন নতুন যক্ষ্মা রোগী পাচ্ছি, যার হিসেব হাসপাতালের মাধ্যমে সরকারের কাছে পাঠানোও হচ্ছে। কিন্তু প্রায় ছ’মাস ওই রোগীরা নিয়মিত ওষুধ পাচ্ছেন না। রিভাইজ্ড ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (আরএনটিসিপি)-এর পক্ষ থেকে এই ফাঁক পূরণের দিকে নজর নেই।”
আর এক বেসরকারি হাসপাতালের বক্ষরোগ বিভাগের প্রধান রাজা ধর বলেন, ‘‘কোনও টাকা পাই না। অন্য চিকিৎসকেরাও পাচ্ছেন বলে শুনিনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। তবে যক্ষ্মার পরীক্ষা বিনামূল্যে করার জন্য সপ্তাহ তিনেক আগে সরকারের একটি চিঠি এসেছে বলে শুনেছি।’’ একই বক্তব্য মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের। শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ‘নিক্ষয়’ অ্যাপে নতুন রোগীর নাম নথিভুক্ত করা হলেও তাঁরা উৎসাহ ভাতা পান না।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, আরএনটিসিপি-র তরফে এ সব নিয়ে কোনও আলোচনা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয় না। বেসরকারি ক্ষেত্রে আসা রোগীরা কী ভাবে যক্ষ্মার ওষুধ পাবেন, তা নিয়েও উদ্যোগ দেখা যায় না। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন আর ভি অশোকান। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, আইএমএ-র তরফে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও আলোচনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গও সেই তালিকায় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy