অরুণাচলের মেচুকায় অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড। চিন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য মেচুকার মতো অনেকগুলি বিমানঘাঁটিও তৈরি রেখেছে ভারত। —ফাইল চিত্র।
সীমান্ত নীতিতে বেশ নীরবেই বড়সড় পরিবর্তন করে ফেলল ভারত। ডোকলামের মতো পরিস্থিতি আর চায় না নয়াদিল্লি। সীমান্তে ওই ধরনের সমস্যা তৈরি হলে যাতে আরও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে ভারতীয় বাহিনী, তা নিশ্চিত করতে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ খুব দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে রাস্তা তৈরির দায়িত্বে থাকা সংস্থা বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন-এর (বিআরও) জন্য তাই অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। ২০২১ সালের মধ্যে ভারত-চিন সীমান্তে যতগুলি রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, আগামী দু’বছরের মধ্যে সেগুলির কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এ বার ময়দানে নেমেছে বিআরও।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারত-চিন সীমান্তের ১০০ শতাংশ এলাকার সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ মসৃণ করে তুলতে মোট ৬১টি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই ৬১টির মধ্যে অন্তত ৫৮টি রাস্তা তৈরির কাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ডোকলামের সঙ্কট থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে ভারত সরকার নির্দেশ দিয়েছে, ২০২১ নয়, ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ করতে হবে রাস্তাগুলি তৈরির কাজ। সেই নির্দেশ এবং বর্ধিত বরাদ্দ পেয়েই কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিআরও।
ভারত-চিন সীমান্তে রাস্তা তৈরির কাজের গতি অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল। ভারত এবং চিনের সীমান্ত যে অঞ্চলে, তার প্রায় পুরোটাই পার্বত্য এলাকা বা অরণ্যাবৃত। ওই সব এলাকায় রাস্তা তৈরিকে দু’টি পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বের নাম ‘ফর্মেশন কাটিং’। এই পর্বে রাস্তা তৈরির জায়গা বানানো হয়। দ্বিতীয় পর্বের নাম ‘সারফেসিং’। রাস্তা তৈরির জন্য যে জায়গা বানানো হয়েছে, দ্বিতীয় পর্বে সেই জায়গার উপর দিয়ে অ্যাসফল্টের চাদর বিছিয়ে দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরে এই ফর্মেশন কাটিং এবং সারফেসিং-এর গতি অনেক বেড়েছে বলে খবর। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ফর্মেশন কাটিং-এর বার্ষিক গতি ছিল ১০৭ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭-তে তা বেড়ে হয়েছে ১৪৭ কিলোমিটার। একই ভাবে, সারফেসিং-এর বার্ষিক গতিও ১৭৪ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ২৩৩ কিলোমিটার হয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে নতুন নির্দেশ পাওয়ার পর এই গতি আরও বাড়ানো হচ্ছে।
ভারত এবং ভুটানের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বেশ মসৃণ। সেই কারণেই ডোকলামে বাহিনী পাঠাতে ও রসদ সরবরাহ করতে খুব বেগ পেতে হয়নি ভারতকে। চিন সীমান্তের অন্যান্য এলাকাতেও এই রকম মৃসণ সড়কই চাইছে নয়াদিল্লি। —ফাইল চিত্র।
ভারত-চিন সীমান্তে মোট ৩৪০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা। এই মুহূর্তে মাত্র ২৭০ কিলোমিটার-এর ফর্মেশন কাটিং বাকি রয়েছে বলে খবর। অর্থাৎ ৩১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ফর্মেশন কাটিং হয়ে গিয়েছে। ৬১টি রাস্তার মধ্যে ২৭-টির তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ। ৩৪টির কাজ চলছে। বিআরও সূত্রের খবর, ফর্মেশন কাটিং-এর কাজ বেশিরভাগটাই হয়ে যাওয়ায় এখন দু’প্রান্ত থেকেই সারফেসিং-এর কাজ শুরু করা যাবে। কাজের গতি যে ভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তাতে সারফেসিং শেষ করতে খুব বেশি সময়ও লাগবে না। ২৭০ কিলোমিটারের ফর্মেশন কাটিং-ও দ্রুতই শেষ হবে। তাই বছর দু’য়েকের মধ্যে ভারত-চিন সীমান্তের প্রায় ১০০ শতাংশ এলাকাকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে মসৃণ সড়কের মাধ্যমে জুড়ে ফেলতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে বিআরও কর্তারা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন: এ রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নে না মমতার
ডোকলামে ভারত খুব দ্রুত সেনা পাঠাতে পেরেছিল, কারণ ওই অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ খুব মৃসণ। শুধু সেনা পাঠানো নয়, রসদ সরবরাহও চলছিল বেশ মসৃণ ভাবেই। কিন্তু ভারত-চিন সীমান্তের সব এলাকার সঙ্গে ভারতের সড়ক যোগাযোগ এতটা মসৃণ নয়। ডোকলামের মতো ঘটনা সীমান্তের অন্য কোনও অঞ্চলে ঘটলে, ভারত সেখানে এত দ্রুত সেনা পাঠাতে এবং রসদ সরবরাহ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই দ্রুত রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডোকলামে ভারত যেমন সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল, সীমান্তের অন্য এলাকাগুলিতেও যাতে তেমনই মসৃণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব দ্রুত গড়ে তোলা যায়, বিআরও এখন সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy