Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

‘বুড়ো’ মিগেই পাকিস্তানের এফ-১৬ ধ্বংস করেছেন অভিনন্দন!

তা সত্ত্বেও কেন ব্যবহার হচ্ছে মিগ? বায়ুসেনা কর্তাদের দাবি, গতকালের আকাশ যুদ্ধে ফ্যালকন-১৬-কে ধ্বংস করে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে মিগ-২১ বাইসন।

বুড়ো মিগই ভেল্কি দেখাল অভিযানে। ফাইল চিত্র।

বুড়ো মিগই ভেল্কি দেখাল অভিযানে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

বায়ুসেনার পাইলটদের কাছে এ হল ‘উড়ন্ত কফিন’। মাঝে মধ্যেই ভেঙে পড়ার প্রবল বদনাম রয়েছে মিগ বিমানের। তা সত্ত্বেও কেন ব্যবহার হচ্ছে মিগ? বায়ুসেনা কর্তাদের দাবি, গতকালের আকাশ যুদ্ধে ফ্যালকন-১৬-কে ধ্বংস করে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে মিগ-২১ বাইসন।

১৯৬১ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয় রাশিয়ার মিকোয়ান-গুরেভিচ ডিজাইন সংস্থার তৈরি ওই বিমান। এক সময়ে গোটা বিশ্বে মিগ বিমানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হলেও এখন পুরনো প্রযুক্তির কারণে ভারত, উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশই ওই বিমান ব্যবহার করে থাকে। ভারতে বর্তমানে প্রায় শ’খানেক মিগ রয়েছে। বাংলাদেশ বা কার্গিলের লড়াইয়ে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া মিগকে এখন যুদ্ধের পরিবর্তে নজরদারির কাজেই ব্যবহার হয়ে থাকে। ঠিক রয়েছে যে, চলতি বছরের শেষ দিক থেকেই মিগকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া হবে। পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস।

নজরদারিতে থাকা ‘বুড়োটে’ মিগ যে ভাবে গতকাল ফ্যালকন-১৬-কে তাড়া করে মেরে নামিয়েছে তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বায়ুসেনা কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পাকিস্তান এফ-১৬ কেনার পরেই ২০০৬ সাল থেকে মিগ-২১-এর উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বিমানে ‘মাল্টি মোডাল’ রেডার বসানো হয়। উন্নত করা হয় যোগাযোগ প্রযুক্তি। আঘাতের ক্ষমতা বাড়াতে রকেট, আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে জমিতে আঘাত করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ফের সাফল্য সেনার, গুলির লড়াইয়ে খতম দুই জঙ্গি​

কিন্তু তাতেও ফ্যালকন-১৬বি-র সঙ্গে মিগের কোনও তুলনাই চলে না বলে জানাচ্ছেন বায়ুসেনার কর্তারা। তাঁদের মতে, মিগ প্রথম তৈরি হয় পঞ্চাশের দশকে। সেখানে ফ্যালকন আশির দশকে। ফলে শুরু থেকেই প্রযুক্তি, গতি ও আক্রমণের প্রশ্নে অনেক এগিয়ে ফ্যালকন। এতে যে ‘আকাশ থেকে আকাশ’ বা আমরাম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় তা মিগে ব্যবহৃত আচার্র শর্ট রেঞ্জ-আর ৭৩-এর থেকে অনেক আধুনিক ও নিখুঁত। অভিনন্দন দক্ষ পাইলট বলেই স্রেফ মিগ দিয়ে ফ্যালকনকে পেড়ে ফেলতে পেরেছেন বলে মনে করছেন বায়ুসেনা কর্তারা। বুড়িয়ে যাওয়া মিগ-২১ দিয়েই কার্যত অসাধ্যসাধন করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: সাহসী মায়ের জন্যই ডাকাবুকো অভিনন্দন

গতকাল সকাল থেকেই নজরদারির দায়িত্বে ছিল অভিনন্দনের মিগ। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার রেডারে কয়েকটি বিন্দু ফুটে ওঠে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বোঝা যায়, এক ঝাঁক বিমান পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসছে। ভারতীয় বায়ুসেনার মতে, জে এফ-১৭ ও মিরাজ মিলিয়ে অন্তত দেড় স্কোয়াড্রন বিমান ছিল ওই ঝাঁকে। ওই বিমানগুলি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে পৌঁছাতেই তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তিনটি ফ্যালকন-১৬ বিমান। এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কপূর বলেন, ‘‘হামলার আশঙ্কায় নজরদারি মিগের সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দেয় এক ঝাঁক সুখোই-৩০ ও মিরাজ-২০০০।’’

আরও পড়ুন: আজ মুক্তি অভিনন্দনের, ঘোষণা ইমরানের

ভারতীয় বায়ুসেনার মতে, এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী তিনটি এফ-১৬ কেবল নিয়ন্ত্রণরেখার কাছ থেকে সামরিক ছাউনিকে নিশানা করে। পাল্টা তাড়া করে ভারতীয় বায়ুসেনা। সবচেয়ে এগিয়ে ছিল অভিনন্দনের মিগ। বায়ুসেনার দাবি, অভিনন্দন একটি এফ-১৬-কে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ‘লক’ করেন। এক বার ক্ষেপণাস্ত্র ‘লক’ করার অর্থ হল দুই বিমানের মধ্যে মাঝে কোনও বাধা (যেমন পাহাড়) না এলে ক্ষেপণাস্ত্র সোজা গিয়ে আঘাত করবে নিশানা করা বিমানে। এ ক্ষেত্রে

নিশানা ‘লক’ করতেই নিজের স্ক্রিনে তা বুঝতে পারেন ফ্যালকন-১৬-এর চালক। কাশ্মীরের পাহাড়ের আড়ালের সুযোগ নিয়ে পালানো শুরু করে বিমানটি। জবাব দিতে তাড়া করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে ফেলেন অভিনন্দন। ফলে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তি।

ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে এফ-১৬ ধ্বংস করে মিগটি ভারতের দিকে ফেরার সময়ে সম্ভবত অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট বন্দুকের গুলির শিকার হয়। প্যারাশুটের সাহায্যে অভিনন্দন নেমে এলেও তাঁকে ধরে ফেলে পাক সেনা। ধ্বংস হয় মিগ বিমানটি।

(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় ছবির ক্যাপশনে ভুলবশত লেখা হয়েছিল মিগ এফ-১৬। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE