Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সেনা নিয়ে রাজনীতির তরজায় মোদী

অভিনন্দন বলেননি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বললেন। প্রশ্ন ছিল, ‘‘ভারতের কোন এলাকা থেকে এসেছেন?’’

কন্যাকুমারীতে প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

কন্যাকুমারীতে প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

অভিনন্দন বলেননি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বললেন।

প্রশ্ন ছিল, ‘‘ভারতের কোন এলাকা থেকে এসেছেন?’’

‘‘আমার কি সেটা বলার কথা?’’ মুখে ক্ষত নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে বন্দি উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান সটান বলে দিয়েছিলেন পাক সেনা মেজরকে। আজ অভিনন্দন তখনও পাকিস্তানের কব্জায়, ভারতের সীমান্তের উদ্দেশে রওনাও দেননি। আর কন্যাকুমারী গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, অভিনন্দন তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। বক্তৃতার শুরুতেই বললেন, ‘‘সব ভারতীয় তামিলনাড়ুর বীর উইং কমান্ডার অভিনন্দনের জন্য গর্বিত।’’ দেশের প্রথম মহিলা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও এ রাজ্যের, তা-ও মনে করিয়ে দিলেন। ভোটের আগে তামিলনাড়ুর মন জয়ে।

আর এরই পরই মোদী আক্রমণ শানাতে শুরু করলেন বিরোধীদের। অভিযোগ আনলেন, ‘‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে গোটা বিশ্ব সমর্থন জানাচ্ছে। কিন্তু বিরোধী দলগুলি পাকিস্তানকে সাহায্য করছে। ক্ষতি করছে দেশের। পাক পার্লামেন্টে এবং সে দেশের রেডিয়োয় উদ্ধৃতি দেওয়া হয় এদের বক্তব্য। এমনকি গোটা দেশ যখন জওয়ানদের পাশে, এরা তখন সেনাবাহিনীকেও সন্দেহ করছে।’’

সেনাকে নিয়ে মোদী আর তাঁর সেনাপতিদের পুরোদস্তুর রাজনীতি এখন আর কারও চোখ এড়াচ্ছে না। বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা তো সরাসরিই বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানে মোদীর হামলার পর কর্নাটকে আসন বাড়বে।’’ রাজ্যে রাজ্যে মোদীর ৫৬ ইঞ্চির স্লোগান তুলে বিজেপির পোস্টার পড়েছে। বিজেপি সরকার মোদী আর যুদ্ধবিমানের ছবি দিয়েও বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেছে। বিজেপি নেতাদের মঞ্চে নিহত জওয়ানদের ছবিও রাখা হচ্ছে। আজই কন্যাকুমারীতে মোদীর মঞ্চে তামিলনাড়ুর উপমুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম মোদীকে ‘নরসিংহ অবতার’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও মোদী, অমিত শাহদের অভিযোগ, বিরোধীরাই রাজনীতি করছেন।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে অস্ত্র জাতীয়তাবাদই

দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে অমিত আজ একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে আসল কথাটি বলেই ফেললেন, ‘‘২৬/১১-র হামলার পর আমরা ভোটে ‘মজবুত’ সরকারের স্লোগান তুলেছি। ভোটের সময় সে বিষয় তোলাও উচিত। ভোটের সময় দেশের নিরাপত্তা নিয়ে চর্চা হবে না? অবশ্যই হবে।’’ মুখে শুধু বললেন না, এটি নিয়ে ‘রাজনীতি’ করবেন। জাতীয়তাবাদের আবেগকে ভোটের সঙ্গে জুড়ে দলের সকলকে খোলা ছুট দিয়ে দিলেন অমিত।

আরও পড়ুন: মুক্তির আগে অভিনন্দনের নতুন কী বয়ান রেকর্ড করাল পাকিস্তান?

আজ থেকে ভোটের প্রচার করতে বেরিয়ে রাহুল গাঁধী মোদীর সেই ‘দ্বিচারিতা’র মুখোশটিই খুলতে চেয়েছেন। মহারাষ্ট্রের সভায় তিনি বলেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাঁচ মিনিট নিজের প্রচার ছাড়া থাকতে পারেন না। জওয়ানের মৃত্যু হচ্ছে, লড়াই হচ্ছে, আমি দলের সব কর্মীকে বলেছি, সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করবেন না। কেন বলেছি? লড়াই চলছে, ভারতকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু পুলওয়ামায় বোমা পড়ছে, সেই সময় ইন্ডিয়া গেটে জাতীয় যুদ্ধ স্মারক উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী আক্রমণ করছেন কংগ্রেসকে!’’

ভুল বলেননি রাহুল। রাহুল যখন মহারাষ্ট্রে মোদীর মুখোশ খুলছেন, প্রধানমন্ত্রী সে সময় কন্যাকুমারীতে পরতে পরতে বিঁধছেন বিরোধীদের। মনমোহন জমানার কথা তুলে বললেন, সে সময় জঙ্গি হামলা হলে ‘অসহায়’ হয়ে বসে থাকত সরকার। ২৬/১১-র পর সেনা সার্জিকাল স্ট্রাইক করতে চাইলেও সরকার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু উরি, পুলওয়ামার পর হয়েছে। সেনাকে পুরো স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা সুদ সমেত ফেরত পাচ্ছে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল মোদীকে ঘৃণা করতে গিয়ে ভারতকেই ঘৃণা করছে।

বায়ুসেনা পাইলট অভিনন্দন মুক্তি পাবেন খবর পেয়ে মোদী গত কাল হেঁয়ালি করে বলেছিলেন, ‘‘এই মাত্র (আভি আভি) এক পাইলট প্রোজেক্ট শেষ হল। এ বার হবে আসল কাজ।’’ কিন্তু মোদীর সেই ‘পাইলট প্রোজেক্ট’-এ আদতে কত জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যম সমানে প্রশ্ন তুলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধী শিবিরের নেতারা সত্য জানানোর দাবি করেছেন ইতিমধ্যেই। ২০১৪ থেকে একটি বারও সাংবাদিক সম্মেলন না করা মোদীকে আজ সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন রাহুল।

পাল্টা আক্রমণে সেনা নিয়ে রাজনীতির মাত্রা চড়িয়ে মোদী প্রশ্ন ছোড়েন, ‘‘এই রাজনৈতিক দলগুলি কি সেনাকে ভরসা করে? নাকি, সন্ত্রাসকে মদত দেওয়া শক্তিকে? এই দলগুলিকে বলতে চাই, মোদী আসবে-যাবে। ভারত থাকবে।আপনাদের রাজনীতি অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু দেশের নিরাপত্তা সবার উপরে।’’ একই সুরে অমিতও বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহও ভারত ও পাকিস্তানকে এক সারিতে ফেলছেন। দু’দেশের ‘পাগলের মতো দৌড়ের’ কথা বলছেন। আর এ দেশের ২১টি বিরোধী দল যখন প্রস্তাব পাশ করল, তখনই পাকিস্তানের মুখে হাসি ফুটল।’’ মোদী-অমিতের নিশানায় যখন বিরোধীরা, তারই মধ্যে বেমক্কা বোমা ফাটিয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি-সঙ্গী, দক্ষিণী নেতা পবন কল্যাণ। তাঁর দাবি, দু’বছর আগেই বিজেপি বলেছিল, ভোটের মুখে যুদ্ধ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE