Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National

চিনা এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে নতুন সাজে ভারত-রাশিয়ার ব্রহ্মস

দু’টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার তৈরি করছে চিন। এই মুহূর্তে চিনা নৌসেনার হাতে ওই গোত্রের যুদ্ধজাহাজ মাত্র একটি। তাই যে দু’টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার এখন নির্মীয়মাণ, সেই দু’টির নির্মাণকাজ খুব দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের হাতে দু’টি এয়াক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইতিমধ্যেই রয়েছে। আরও একটি তৈরি হচ্ছে।

চিনের হাতে আপাতত এই একটি মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। আরও দু’টি তৈরি হচ্ছে। —ফাইল চিত্র।

চিনের হাতে আপাতত এই একটি মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। আরও দু’টি তৈরি হচ্ছে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ১৬:৪৮
Share: Save:

দু’টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার তৈরি করছে চিন। এই মুহূর্তে চিনা নৌসেনার হাতে ওই গোত্রের যুদ্ধজাহাজ মাত্র একটি। তাই যে দু’টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার এখন নির্মীয়মাণ, সেই দু’টির নির্মাণকাজ খুব দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের হাতে দু’টি এয়াক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইতিমধ্যেই রয়েছে। আরও একটি তৈরি হচ্ছে। তাই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের সংখ্যা নিয়ে নয়াদিল্লি খুব একটা চিন্তিত নয়। তার বদলে রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ধ্বংস করার পদ্ধতি রপ্ত করছে ভারত। কাজ প্রায় শেষের পথে। ডিসেম্বরেই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হতে চলেছে ভারতের সেই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার কিলারের।

ভারত এবং রাশিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রকে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার কিলার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী এবং শক্তিশালী এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় স্থলসেনা এবং নৌসেনা ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করেছে। প্রতিটি পরীক্ষাই সফল হয়েছে। শুধু বিমানবাহিনীর হাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দেওয়া বাকি। ব্রহ্মসের পাল্লা যতটা, ততটা দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করেনি। কিন্তু ভারত ও রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে বেশ কিছু দিন ধরেই সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান থেকে ব্রহ্মস ছোড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র বহনের উপযুক্ত করে তুলতে সুখোই-এর গঠনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সফল ভাবে আকাশে উড়েছে সুখোই যুদ্ধবিমান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, সুখোই থেকে ব্রহ্মস নিক্ষেপ করার ব্যবস্থাও তৈরি। চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হতে চলেছে ডিসেম্বর মাসে।

পরীক্ষামূলক প্রয়োগে বঙ্গোপসাগরের আকাশ থেকে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করবে সুখোই-৩০ এমকেআই। সমুদ্রে ভাসমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রটি। লক্ষ্যবস্তুটি হবে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের মতো কোনও কিছু। অর্থাৎ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ভারত প্রতিপক্ষের এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারে কি না, সেই পরীক্ষাই হতে চলেছে ডিসেম্বরে।

যে কোনও ধরনের যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার জন্য যে গোত্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাকে অ্যান্টি-শিপ মিসাইল বলা হয়। ভারতের হাতেও সেই ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। কিন্তু এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার যদি ৬০ হাজার টনেরও বেশি ওজনের হয়, তা হলে অ্যান্টি-শিপ মিসাইল দিয়ে তাকে ঘায়েল করা সম্ভব নয়। কারণ সুবিশাল ওই যুদ্ধজাহাজগুলিতে অনেক রক্ষাকবচ থাকে। অনেকগুলি অ্যান্টি-শিপ মিসাইলের আঘাত সহ্য করে নেওয়ার মতো চেম্বার থাকে এতে। চিনের হাতে এই মুহূর্তে যে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটি রয়েছে, তার ওজন ৬৭ হাজার টনের মতো। যে দু’টি নির্মীয়মান, তাদের ওজনও ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টনের মধ্যে হতে চলেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। অর্থাৎ চিনের এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারগুলিকে অ্যান্টি-শিপ মিসাইল দেগে বিধ্বস্ত করা যাবে না। তার জন্য এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার কিলার গোত্রের ক্ষেপণাস্ত্র চাই। ব্রহ্মসকেই ভারত ও রাশিয়া এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার কিলার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

আরও পড়ুন: চিনকে সামলাতে রুশ ডুবোজাহাজ

কী ভাবে ব্রহ্মস আঘাত করবে প্রতিপক্ষের এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারে? আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত ব্রহ্মস ৯০ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থান থেকে সরাসরি আঘাত হানবে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের ডেকে। প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা হয় এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারগুলি। ৭৫ মিটারের মতো চওড়া হয়। ফলে এই ধরনের সুবিশাল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা বেশ সহজ। বায়ুসেনার জন্য ব্রহ্মসের যে সংস্করণটি তৈরি হচ্ছে, তাতে সিকার প্রযুক্তি থাকছে। অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুকে এক বার চিনে নেওয়ার পর, লক্ষ্যবস্তু যে ভাবে অবস্থান বদলায় ক্ষেপণাস্ত্রও সে ভাবে অভিমুখ পরিবর্তন করে। ফলে চলমান লক্ষ্যবস্তুতেও অভ্রান্ত আঘাত হানে সিকার সমৃদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দের গতিবেগের চেয়েও প্রায় তিন গুণ বেগে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রটি ৯০ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক নিয়ে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের ডেকে যে প্রচণ্ড আঘাত হানবে, তার হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। ডিসম্বরেই বঙ্গোপসাগরে সুখোই-ব্রহ্মস যুগলবন্দির পরক্ষীমূলক প্রয়োগ হতে চলেছে বলেও জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE