Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্পের শরণার্থী বিতর্ক এড়িয়ে আপন স্বার্থে নজর ভারতের

সতর্ক দিল্লি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরণার্থী-নীতি নিয়ে কোনও রকম বিতর্কে না জড়িয়ে আপাতত নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। চলতি বছরে ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আগে নতুন যে আমেরিকা-নীতি তৈরি হচ্ছে, তারও মূল থিম এটাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

সতর্ক দিল্লি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরণার্থী-নীতি নিয়ে কোনও রকম বিতর্কে না জড়িয়ে আপাতত নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। চলতি বছরে ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আগে নতুন যে আমেরিকা-নীতি তৈরি হচ্ছে, তারও মূল থিম এটাই।

এটা ঘটনা, ট্রাম্পের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী অবস্থান থেকে যথাসম্ভব কূটনৈতিক লাভ তুলতে চায় ভারত। এবং গরম থাকতে থাকতেই লোহা বাঁকানো সহজ বলে, ট্রাম্প জমানার প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে চেষ্টা শুরু করতে চাইছে দিল্লি। কিন্তু ট্রাম্পের মুসলিম-বিরোধিতা নিয়ে যে ভাবে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে, সে ব্যাপারেও সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। গোটা দুনিয়ার মুসলিম শরণার্থীদের মুখের উপর আমেরিকার দরজা বন্ধ করার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও আপাতত নীরবই থাকতে চাইছে সাউথ ব্লক। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সরকারি ভাবে আজ রা কাড়েননি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ। ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে, এই বিতর্কে কোনও এক পাল্লা ভারী না করে, কিছুটা নিরপেক্ষ থাকাই কাম্য। আপাতত নিজেদের শঙ্কা নিরসন এবং স্বার্থ আদায়কেই অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

সাউথ ব্লক মনে করছে, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই বড় অভিযানে নামতে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ইয়েমেনে আল কায়দার বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালিয়েছে মার্কিন সেনা। ৩০ দিনের মধ্যে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার জন্য তাদের তৈরি থাকতে বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এতে যথেষ্টই চাপে রয়েছে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটাই উপযুক্ত সময় ভারতের জন্য।’’

বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘ডেমোক্র্যাট জমানায় আমেরিকার পাক-নীতিতে কোনও ধারাবাহিকতা ছিল না। পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ধ্বংসের ব্যাপারে হাতেকলমে কোনও পদক্ষেপ করেনি বারাক ওবামার সরকার। আফ-পাক অঞ্চল যে সন্ত্রাসের অন্যতম কারখানা হয়ে উঠছে, সে ব্যাপারেও উদাসীন থেকেছে ওবামা প্রশাসন। এমনকী মুখে কড়া নিন্দা করলেও পাকিস্তানকে হাত উপুড় করে ডলার দিয়ে গিয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। এ বার সেই পরিস্থিতি বদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্যক যোগাযোগ গড়ে ওঠার আগেই ভারত তার বক্তব্য, তথ্য ও নথি হোয়াইট হাউসের টেবিলে রাখতে চাইছে। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, এতে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে সুবিধে হবে। ভারতের শর্ত মেনে তাদের আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা করা সহজ হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষেত্রেও ‘ট্রাম্প’ কার্ড ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি, জাপান ও আমেরিকার সঙ্গে নৌবাহিনীর যে অক্ষ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে, তাকে আরও মজবুত করে তোলার দিকে নজর দেবে ভারত। তাতে বেজিং ও ইসলামাবাদকে একই সঙ্গে কোণঠাসা করা যাবে।

কিন্তু এই ‘ট্রাম্প’ কার্ড আদৌ ব্যবহার করা যাবে কি না, কৌশলগত ক্ষেত্রে একে কাজে লাগালে নয়া রিপাবলিকান সরকার তার পাল্টা সুযোগ নেবে কি না, সে সবও ভাবতে হচ্ছে সাউথ ব্লকের সতর্ক কর্তাদের। আমেরিকার মতো ধনী দেশগুলি তাদের তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজ সস্তায় করিয়ে নেয় ভারতীয় সংস্থা ও প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে। ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলির পণ্যের অর্ধেকের বেশিটাই কেনে আমেরিকা। এবং এই কারণেই গত পঁচিশ বছরে ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প ১৪ হাজার কোটি ডলারের এক বিশাল সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু ট্রাম্প আসার পর এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত মিলছে, তাতে ভারতীয় পেশাদারদের ব্যাপক হারে চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে দেশে কর্মরত ভারতীয় পেশাদারদের অনিশ্চয়তায় পড়া, ভারত থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলি খাঁড়ার মতো ঝুলে রয়েছে ভারতের নাকের ডগায়।

এই অবস্থায় ভারসাম্য রেখেই আমেরিকার সঙ্গে নয়া ইনিংস শুরু করতে চাইছেন মোদী। উত্তরপ্রদেশ-পঞ্জাবের মতো রাজ্যের ভোট সামলানোর পর এটাই তাঁর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump USA President Immigrant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE