প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন মার্কিন সফরে ভারতের বিশাল বাজারে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যবৃদ্ধির লক্ষে ঝাঁপাতে চলেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তার বিনিময়ে ভারতও যে নিজস্ব পাওনাগণ্ডা বুঝে নিতে পিছপা হবে না, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। আজ ভারত-আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতায় একটি যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। আলোচনায় উঠে এসেছে ‘ডি-কোম্পানি’ থেকে লস্কর প্রসঙ্গ। যৌথ বিবৃতিতে মুম্বই হামলার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিতেও ছাড়েনি সাউথ ব্লক ও হোয়াইট হাউস।
সীমান্তে যখন অবিরাম গুলিগোলা চলছে ও পাক অনুপ্রবেশের সমস্যাটি ক্রমশ জটিল হচ্ছে, সেই সময় মোদীর মার্কিন সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও একই সময়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন। সেখানে ভারতের সঙ্গে কোনও বৈঠক না হলেও চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চান নওয়াজ। আরও কিছু শক্তিধর দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান পাক শীর্ষ কর্তারা। এ ছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তৃতায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টাও করবে ইসলামাবাদ। যে হেতু বর্ণানুক্রমে পাকিস্তানের বক্তৃতার সুযোগ আসবে ভারতের পরে, তাই পাক অভিযোগের জবাব দেওয়ারও সুযোগ পাবে না দিল্লি।
এই অবস্থায় গতকাল এবং আজ মার্কিন স্বরাষ্ট্রসচিব জন কেরি ও সুষমার বৈঠক এবং বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ নয়াদিল্লির হাতে অস্ত্র তুলে দিল। যে যৌথ বিবৃতিটি আজ পেশ করা হয়েছে, সেখানে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে একটি পৃথক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ওবামা দু’জনেই সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দু’দেশের অংশীদারি গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।’’
এর আগে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে দফায় দফায় বিভিন্ন স্তরে কথা হলেও, কখনও আলাদা করে ঘোষণাপত্র পেশ করা হয়নি। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যে ভাষায় পাকিস্তানের মাটিতে বেড়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করা হয়েছে, সেটিও যথেষ্ট বিরল। বলা হয়েছে, ‘‘২০০৮-এ মুম্বই হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়াটা পাকিস্তানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’’ আল কায়দা এবং তার সঙ্গী লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, ডি কোম্পানি এবং হক্কানি নেটওয়ার্ক-সহ বেশ কিছু আঞ্চলিক গোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়ার সু-স্থিতি কী ভাবে নষ্ট করতেচাইছে, তা নিয়েও যৌথবিবৃতিতে আলোচনা হয়েছে।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে সুষমা বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের স্বর্গরাজ্য থেকে লস্কর এবং অন্যান্য গোষ্ঠী আমাদের দেশে সমানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’’ কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বেজিংয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদের সখ্যের দিকটি দীর্ঘদিন ধরেই ভাল চোখে দেখছে না আমেরিকা। আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর প্রশ্নেও পাক প্রশাসনের ভূমিকায় খুশি নয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। তাই বারতকে পাশে নিয়ে চিন ও পাকিস্তানের এই অক্ষের সমান্তরাল অন্য একটি অক্ষ তৈরি করার চেষ্টা করছে আমেরিকা।
আজকের এই যৌথ বিবৃতি তাই নিঃসন্দেহে মার্কিন সফরের আগে শরিফকে চাপের মধ্যে ফেলে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy