বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। ২০১৭ সালে কোচি মেট্রো রেল ২৩ জন যৌন সংখ্যালঘু কর্মী নিয়োগ করে। তাঁদের মধ্যে আট জন কাজে যোগ দেওয়ার এক সপ্তাহ পরেই ন’হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসমাইনের চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কারণ ভাড়া বাড়ি পাওয়াই যাচ্ছিল না। কোনও মতে যদি বা বাড়ি পাওয়া গেল, দৈনিক চারশোর বেশি টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছিল। ঘাটতি মেটাতে ভিক্ষা বা দেহ ব্যবসার জন্য ফের পথে নেমেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমাজকর্মীদের অভিযোগ, এ ভাবেই বৈষম্যের বলি হচ্ছেন সমকামী-রূপান্তরকামীরা। তার দাম শুধু যে ওঁদেরই চোকাতে হচ্ছে, তা নয়। দেশের অর্থনীতিকেও তার মাসুল গুনতে হচ্ছে বলে মনে করেন সমাজকর্মী সুমিতা বীথি। তথ্য-পরিসংখ্যানও এই বক্তব্যের পক্ষে সওয়াল করছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী ‘হোমোফোবিয়া’ বা সমকামীদের নিয়ে ভীতি বা বিদ্বেষের কারণে প্রতি বছর ৩১০০ কোটি ডলার খোয়াচ্ছে ভারত। ২০১৪ সলে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে হিজড়ে, রূপান্তরকামী ইত্যাদি গোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবু বৈষম্যের ছবিটা একটুও পাল্টায়নি। সুমিতা বলেন, ‘‘মানসিকতার বদল হলে ঘরের বাইরে বা কাজের জায়গায় অন্য মানুষ সেজে থাকতে হত না। দিনের পর দিন এই মানসিক চাপ কাজের ক্ষতি করতে বাধ্য। অর্থাৎ এতে উৎপাদনশীলতা কমে যায়। আখেরে মার খায় দেশের অর্থনীতি।’’
বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলছে, এ দেশে কর্মক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ সমকামী-রূপান্তরকামী বৈষম্যের শিকার হন। বাড়ির বাইরেই শুধু নয়। আপনজনের হাতেও নিগৃহীত হতে হয় তাঁদের অনেককে। পারিবারিক হিংসার শিকার হন ২৮ শতাংশ শহুরে লেসবিয়ান। আর এ ভাবেই শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ, বৈষম্য, চাকরির অভাব, সব মিলিয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে টেনে নামাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজকর্মী থেকে স্টার্ট আপ সংস্থার কর্ণধার। যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য প্রথম অ্যাপ নির্মাতা ঈশান শেঠি বলেন, ‘‘নিজের যৌন ঝোঁক লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হওয়ায় কাজের মান নেমে যেতে পারে। মার খায় দক্ষতা। অথচ এঁদের শিক্ষার জন্য অন্যদের মতোই সরকারি কোষাগার থেকে টাকা খরচ হয়েছে। লোকসান তো সরকারেরও।’’ সরকারের মতোই নিয়োগকারী সংস্থাও দক্ষ কর্মী হারায় বলে মনে করেন হিউলেট প্যাকার্ডে যৌন সংখ্যালঘুদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুরেশ রামদাস। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন আত্মসম্মানে আঘাত খেয়ে ক্রমশ অবসাদে ডুবে যান ওঁরা।’’
তবে দেরিতে হলেও সরকার এই লাভ-লোকসানের হিসেব কষেছে বলে মনে করছেন সমাজকর্মী মীনাক্ষী সান্যাল। সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে সমকামী-রূপান্তরকামীর সংখ্যা ২৫ লক্ষ। তাঁদের প্রতি সহমর্মী খোলা মনের মানুষের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ। মীনাক্ষীর দাবি, এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঘিরেও তৈরি হয়েছে বাজার। ‘‘বাজার যে রয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বিজ্ঞাপনের ঘনঘটাই তার প্রমাণ। পিঙ্ক ইকনমি বা রামধনু অর্থনীতির অমোঘ টান এড়ানো সহজ নয়,’’ বলছেন মীনাক্ষী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy