হ্যাল-এর তৈরি এই কপ্টারই ভেঙে দিয়েছে সব দেশের রেকর্ড।
বিশ্বের সেরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার এখন ভারতের হাতে। সক্ষমতার পরীক্ষায় অন্য সব দেশের অ্যাটাক হেলিকপ্টারের রেকর্ড ভেঙে দিল ভারতের এলসিএইচ (লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার)। ৪০০ কিলোগ্রাম ওজনের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে সিয়াচেনে পৃথিবীর অন্যতম সর্বোচ্চ হেলিপ্যাডে সফল অবতরণ করেছে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল) তৈরি এই হেলিকপ্টার। ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম হেলিকপ্টারকে এত উঁচুতে ওড়ানো যায়, ভারতই তা প্রথম বার দেখাল বিশ্বকে।
চলতি মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে সিয়াচেনের একটি ল্যান্ডিং বেসে অবতরণ করেছে হ্যাল-এর তৈরি অ্যাটক হেলিকপ্টারটি। সে সেনাঘাঁটিতে কপ্টারটি অবতরণ করেছে সেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৮০০ মিটার অর্থাৎ প্রায় ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে। বিপুল ওজনের অস্ত্রশস্ত্র বহন করে পৃথিবীর কোনও অ্যাটাক হেলিকপ্টার এখনও পর্যন্ত এত উঁচুতে উড়তে পারেনি। অ্যাটাক হেলিকপ্টারকে এত উঁচুতে ওড়ানো ক্ষেত্রে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের কাছেও পথপ্রদর্শক হয়ে উঠল ভারত। হ্যাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৬ হাজার ফুট পর্যন্ত উড়ে যাওয়া এলসিএইচ-এর সর্বোচ্চ উড়ানসীমা নয়। এই হেলিকপ্টার ২১ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতাতেও পৌঁছতে পারে।
আরও পড়ুন:
কাবুলকে ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ দিয়েছে দিল্লি, বিপদের মেঘ দেখছে পাকিস্তান
শুধু উঁচুতে ওড়াই নয়, এলসিএইচ-এর বিধ্বংসী ক্ষমতাও মারাত্মক। আকাশ থেকে আগুন ঝরানোর জন্য এতে রয়েছে উন্নত মানের টারেট গান। রয়েছে রকেট লঞ্চার। ফলে অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফ্ট গান নিয়ে এই কপ্টারের মোকাবিলা করা প্রতিপক্ষের পক্ষে খুব কঠিন। কারণ অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফ্ট গান গোলাবর্ষণের আগেই অনেক দূর থেকে রকেট হেনে প্রতিপক্ষের বাঙ্কার উড়িয়ে দিতে পারে এলসিএইচ। এখানেই শেষ নয়, আকাশ-থেকে-আকাশ মিসাইল এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইলও ছুঁড়তে পারে এলসিএইচ। অর্থাৎ, খুব শক্তিশালী যুদ্ধবিমানের চেয়ে কোনও অংশে কম যায় না হ্যাল-এর তৈরি লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টারের বিধ্বংসী ক্ষমতা।
দেখুন গ্যালারি:
‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’-এর বিধ্বংসী রূপ
১৯৯৯ সালে এই ধরনের হেলিকপ্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। সে বছর কার্গিলের যুদ্ধ হয়েছিল। সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর নিখুঁত সমন্বয়ে সে যুদ্ধ ভারত জিতেছিল ঠিকই। কিন্তু ভাল হেলিকপ্টারের অভাব ভীষণবাবে অনুভূত হয়েছিল। ভারতের হাতে যে সব হেলিকপ্টার তখন ছিল, সেগুলি যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও, খুব উঁচু পাহাড়ের মাথার উপর দিয়ে উড়ে আক্রমণের ক্ষমতা সেগুলির ছিল না। তখনই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয়, এমন হেলিকপ্টার বানানো হবে, যা হালকা হবে অথচ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারবে। হ্যালকেই এই হেলিকপ্টার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। হ্যালের তৈরি ধ্রুব হেলিকপ্টারেই কিছু পরবির্তন এনে এলসিএইচ তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১০ সালে এই লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সে বছর মে মাসে এই হেলিকপ্টার প্রথম বার পরীক্ষামূলক ভাবে আকাশে ওড়ে। কিন্তু তখনই এই কপ্টার নিয়ে বেশি হইচই করেনি ভারত। বহু রকম পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় একের পর এক পরীক্ষামূলক উড়ান হয়েছে এলসিএইচ-এর। বিভিন্ন ছোটখাটো অক্ষমতা খুঁজে বার করে তার প্রতিকার করা হয়েছে। তার পর সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এলসিএইচকে। পাঁচ বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এলসিএইচ এখন বিশ্বের সেরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার। হ্যাল কর্তাদের দাবি অন্তত সে রকমই। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে তিন শ্রেণির এলসিএইচ তৈরি হয়েছে। সেনা ইতিমধ্যেই হ্যালক ১১৪টি এলসিএইচ তৈরির বরাত দিয়েছে। বিমানবাহিনী বরাত দিয়েছে ৬৫টির। বিশ্বের সেরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার ভারতের হাতে আসায়, চাপ বাড়বে ভারতের অনেক প্রতিবেশীর উপরেই। বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy