Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সুরক্ষায় ‘তৃতীয় পক্ষ অডিট’

রেলের রোগ সারাতে বিদেশি ডাক্তার

হাজারো অনুযোগ-অভিযোগ, শোরগোল-সমালোচনা সত্ত্বেও রেলে যাত্রী-সুরক্ষা আর নিরাপত্তা তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। পরের পর দুর্ঘটনা তারই ফল। ঘরের ডাক্তারে কাজ বিশেষ হচ্ছে না।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

হাজারো অনুযোগ-অভিযোগ, শোরগোল-সমালোচনা সত্ত্বেও রেলে যাত্রী-সুরক্ষা আর নিরাপত্তা তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। পরের পর দুর্ঘটনা তারই ফল। ঘরের ডাক্তারে কাজ বিশেষ হচ্ছে না। অসুখটা ঠিক কোথায়, সেটা নির্ণয় করে নিরাময়ের পথ বাতলানোর জন্য তাই এ বার বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হচ্ছে রেল মন্ত্রক। পোশাকি ভাষায় এই ব্যবস্থার নাম ‘তৃতীয় পক্ষ অডিট’।

রেলে যাত্রী-সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে গত ডিসেম্বরে জাপান ও কোরিয়ার প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে আলোচনা হয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর। সেই সূত্র ধরেই ওই দু’টি দেশ থেকে প্রযুক্তিবিদেরা আসছেন। রেলে যাত্রী-সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য আরও কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, বিভিন্ন জোনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিশদ ভাবে তা জানাবেন তাঁরা। একই সঙ্গে বিদেশি বিশেষজ্ঞেরা যাচাই করবেন, সম্প্রতি পরপর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটল কেন। একটি দুর্ঘটনার পরে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা রোধে কেনই বা কার্যকর ব্যবস্থায় নেওয়া যায়নি। রেল মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণ আলাদা ভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিদেশি চোখ দিয়ে অডিট চালালে যাত্রী-সুরক্ষার বিষয়টি জোরদার হবে।

রেল সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ওই দু’টি দেশ থেকে আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞের দল এসে পৌঁছবে এ দেশে। তার পরে শুরু হবে সমীক্ষার কাজ। দেশের বিভিন্ন জোনের রেলপথ, ট্রেন, ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য-সহ সামগ্রিক পরিকাঠামো খুঁটিয়ে দেখবে তারা। তার পরে মতামত জানিয়ে দেবে রেল মন্ত্রককে। রেলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়াও ওই বিদেশি বিশেষজ্ঞেরা কানপুরের সাম্প্রতিক দু’টি দুর্ঘটনা এবং ওয়ালটেয়ার (বিশাখাপত্তনম) ডিভিশনে হিরাখণ্ড এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কারণ বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখে মতামত দেবেন। ওই তিনটি দুর্ঘটনায় দুই শতাধিক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত দেড়শোরও বেশি।

রেলের মূল দু’টি কাজের মধ্যে আছে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চালানো আর যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। অথচ যাত্রিসাধারণের অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে রেলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে, সময়ে ট্রেন তো চলেই না। যা-ও বা চলে, তাতে সুরক্ষার ব্যবস্থা ভীষণ নড়বড়ে। গত এক বছরে রেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে রেলের পরিকাঠামো ও পরিচালন ব্যবস্থা, বিশেষত দেখভালের বন্দোবস্তকেই।

এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ অডিটের কথা বলে রেলকর্তারা আসলে একটা আড়াল খুঁজছেন বলে অভিযোগ উঠছে রেলের অন্দরেই। এ বার সাধারণ বাজেটের সঙ্গে রেল বাজেট যুক্ত হয়ে গিয়েছে। সেই যৌথ বাজেট পেশ করা হবে দিন সাতেক পরেই। তার আগে হিরাখণ্ড-সহ পরপর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় রেল মন্ত্রক কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে। রেলকর্তাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, প্রথমে যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতার তত্ত্ব খাড়া করে এবং তার পরেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে তৃতীয় পক্ষ সুরক্ষা অডিটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যাবতীয় অভিযোগের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ারই চেষ্টা করছে রেল মন্ত্রক।

এই সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গে আছে ক্ষোভও। রেলের প্রযুক্তিবিদ এবং অফিসারদের একটি অংশের প্রশ্ন, নিজেদের সমীক্ষা ও সামর্থ্যের উপরে ভরসা রাখা হচ্ছে না কেন? বিদেশি প্রযুক্তিবিদেরা তো এক বার আসবেন। তার পরে কী হবে? কারা দেখবেন সুরক্ষা? গাইসালের দুর্ঘটনার পরে নিয়ম চালু হয়েছিল, এক জোনের সুরক্ষাকর্মীরা অন্য জোনে গিয়ে সেখানকার পরিকাঠামো এবং সুরক্ষা-স্বাস্থ্য যাচাই করবেন। খুঁজে বার করবেন ফাঁকফোকর। নিজেদের মধ্যে এই ধরনের পারস্পরিক অডি়টে রেলের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। সেই ব্যবস্থায় কাজও হয়েছিল অনেকটা। কিন্তু সেটা এখন আর করা হয় না।

‘‘ওই ব্যবস্থা আবার চালু করা হোক,’’ পরামর্শ দিচ্ছেন রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, বিদেশ থেকে প্রযুক্তিবিদেরা এলে আর কিছু না-হোক, রেলের জনসংযোগ বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE