Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সারদা-আতঙ্কে তটস্থ অসমের প্রভাবশালীরা

শুরু হল গায়ক সদানন্দ গগৈকে দিয়ে। কিন্তু এর পর কে? তদন্তে নেমে সিবিআই সারদা কেলেঙ্কারির অসম-যোগে যাঁকে প্রথম গ্রেফতার করেছে, তিনি ওই সদানন্দ। গত কাল গ্রেফতার হওয়া সদানন্দকে আজ আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৬
Share: Save:

শুরু হল গায়ক সদানন্দ গগৈকে দিয়ে। কিন্তু এর পর কে?

তদন্তে নেমে সিবিআই সারদা কেলেঙ্কারির অসম-যোগে যাঁকে প্রথম গ্রেফতার করেছে, তিনি ওই সদানন্দ। গত কাল গ্রেফতার হওয়া সদানন্দকে আজ আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অসমের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শিবিরের অনেকেরই ধারণা, সদানন্দ সিবিআইয়ের কাছে ‘কান’ হয়ে উঠতে পারেন। তাঁকে টানলে কিছু ‘মাথা’-র সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের খবর, অসমের রাজনীতি ও পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত বহু ব্যক্তিকে দিন কয়েকের মধ্যেই জেরা করা হবে।

সদানন্দ অসমের প্রাক্তন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। স্বভাবতই সদানন্দকে গ্রেফতার করার পর সিবিআই ওই প্রাক্তন মন্ত্রীকে তলব করবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা অবশ্য আজ বলেন, “সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে আমি কোনও ভাবে জড়িত নই। সিবিআই ডাকলে সে কথাই বলব।” তবে প্রাক্তন মন্ত্রী আগে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, “আমাকে সিবিআই জেরা করলে আমি অনেকের কথা জানাতে পারব। তদন্তকারীদের বলব, অসমে সারদা কী ভাবে জাল বিস্তার করেছিল।”

তবে পশ্চিমবঙ্গে যেমন সারদা-কাণ্ডে মূলত তৃণমূলের দিকে বিরোধীরা অভিযোগের আঙুল তুলছেন, অসমের অবস্থাটা সে রকম নয়। কংগ্রেস, বিজেপি, অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)সকলেরই বিভিন্ন নেতার নাম যে ভাবে ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে, তাতে কেউই আর অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার মতো অবস্থায় নেই। গত ২৮ অগস্ট অসমের বিভিন্ন নেতা-বিধায়ক-প্রাক্তন পুলিশ কর্তা-ব্যবসায়ী-ছাত্র নেতা-শিল্পীর বাড়িতে সিবিআই হানার পরে সকলেই আতঙ্কে।

ধৃত সদানন্দ গগৈ যাঁর ঘনিষ্ঠ, সেই প্রাক্তন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কংগ্রেসে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রী পদে গগৈকে মানতে না পেরেই হিমন্ত পদত্যাগ করেন। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর, সদানন্দ গ্রেফতার হওয়ার পরে তরুণ গগৈ শিবির কিছুটা সুবিধেজনক অবস্থায়। কারণ, রাজ্য পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি ঘনশ্যাম মুরারি শ্রীবাস্তব ছাড়া গগৈ শিবিরের আর কারও নাম এখনও পর্যন্ত এই কেলেঙ্কারিতে জড়ায়নি। ডিজি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর শ্রীবাস্তব মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। অভিযোগ ওঠার পর তিনি তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাঁকে অবশ্য এখনও জেরা করেনি সিবিআই। গগৈপন্থী বিধায়ক অঞ্জন দত্তের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি করলেও অঞ্জনবাবু উল্টে সুদীপ্ত সেনের দেওয়া বাউন্স হওয়া সাতটি চেক ও সারদা পাবলিশার্সের সঙ্গে হওয়া চুক্তিপত্র দেখিয়ে দাবি করেছেন, সারদা মামলায় তিনি প্রতারক নন, বরং প্রতারিতের দলে।

উল্টো দিকে, খোদ হিমন্তের দু’টি বাড়ি, তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে তল্লাশি হয়েছে। সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে কয়েক কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হিমন্তের বিরুদ্ধে। অসমে সারদার বিস্কুট কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি। আবার হিমন্তের ঘনিষ্ঠ গায়ক সদানন্দ গগৈয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষক, রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি শঙ্কর বরুয়ার বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি হয়েছে। শঙ্কর বরুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পরীক্ষা করেছে তারা। হিমন্তের ঘনিষ্ঠ এক হোটেল মালিক ও এক পর্যটন সংস্থার মালিকের বাড়িতেও হানা দিয়েছে সিবিআই।

বিরোধীরাও সুবিধেজনক অবস্থায় নেই। তেজপুরের বিজেপি সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা অসমে সারদার আইনি উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে মাসিক মোটা অঙ্কের চুক্তি ছিল সুদীপ্ত সেনের। অন্য দিকে, সারদার কাছ থেকে সাড়ে সাত লক্ষ টাকার চেক নেওয়ায় আসু সভাপতি শঙ্করপ্রসাদ রায়ের বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে। ফলে, বেকায়দায় পড়েছে আসু। তারা বলছে, সারদার কাছ থেকে নেওয়া সব টাকা তারা ফেরত দিতে প্রস্তুত।

স্বস্তিতে নেই অসমের সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশও। সিবিআই সূত্রের খবর, মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা জেরায় অসমের কিছু সংবাদপত্রের সম্পাদক ও মালিকের নাম উল্লেখ করেছেন। সিবিআই অফিসাররা জানিয়েছেন, ওই সম্পাদক ও মালিকরা সুদীপ্ত সেনের থেকে টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মনোরঞ্জনা। সারদার বিস্কুট কারখানার উদ্বোধনে গিয়ে বিপাকে পড়া হিমন্তও জানান, দুই সংবাদপত্র মালিকের বার বার অনুরোধে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সিবিআই জানতে পেরেছে, সারদার মালিকানাধীন এক সংবাদপত্রের সম্পাদক সুদীপ্তের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে জঙ্গিদের হাতে তুলে দিয়েছেন। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সুদীপ্ত নিজেও অসমের কয়েক জন ব্যবসায়ীর নাম সিবিআইকে বলেছেন। তার মধ্যে এক টেলিভিশন চ্যানেল তথা ইস্পাত কারখানার মালিকের বাড়িতে ইতিমধ্যে সিবিআই হানা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam guahati sadananda gogoi cbi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE