Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হুইলচেয়ারই এখন ইনশাদের ইচ্ছেডানা 

বড় অস্ত্রোপচারের পরে চলাচলে ভরসা হয়ে দাঁড়ায় হুইলচেয়ার। সেই ইনশাই এখন জম্মু-কাশ্মীরের মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক।

একরোখা: জম্মু-কাশ্মীরের মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক ইনশা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।

একরোখা: জম্মু-কাশ্মীরের মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক ইনশা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৪
Share: Save:

তখন বয়স মোটে পনেরো। তার বছরখানেক আগে পেটে আলসার ধরা পড়েছিল কাশ্মীরের বদগামের বাসিন্দা ইনশা বশিরের। মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরত, মুখ দিয়ে পড়ত রক্ত। এক দিন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান নীচে। মেরুদণ্ডে আঘাত পান। বড় অস্ত্রোপচারের পরে চলাচলে ভরসা হয়ে দাঁড়ায় হুইলচেয়ার। সেই ইনশাই এখন জম্মু-কাশ্মীরের মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক।

ইনশা বলছেন, ‘‘বদগামে চিকিৎসার সুযোগসুবিধে এমনিতেই কম। হুইলচেয়ার ভরসা হয়ে যাওয়ার পরে প্রথম দিকে সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছি। তবে বাবা আমাকে সব সময়ে উৎসাহ দিতেন।’’ মোড় ঘোরে শ্রীনগরের এক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানে প্রতিবন্ধী যুবকদের বাস্কেটবল খেলতে দেখেন ইনশা। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাননি ছোটবেলা থেকেই বাস্কেটবলের ভক্ত এই যুবতী।

বদগামে খেলাধুলোর সুযোগও বিশেষ নেই। কিন্তু ইনশা হাল ছাড়েননি। ক্রমাগত অনুশীলন করতেন। প্রতিবন্ধী যুবকদের সঙ্গেই খেলতেন। পরে সাহায্যের হাত বাড়ায় শ্রীনগরের বেমিনা এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

ওই সংস্থার অন্যতম সদস্য ও বাস্কেটবল দলের ম্যানেজার আয়ুব বাটের কথায়, ‘‘২০১১ সাল থেকে আমরা চিকিৎসা হিসেবে বাস্কেটবলের মতো কিছু খেলায় প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি। এঁরা অনেক সময়েই মানসিক অবসাদে ভোগেন। খেলার মাধ্যমে সেটা অনেকটাই কাটানো যায়।’’ ওই সংস্থার সাহায্যেই ধীরে ধীরে স্বপ্নপূরণের পথে এগোতে থাকেন ইনশা। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আরও অনেক প্রতিবন্ধী কিশোরী-যুবতী। পুরুষ হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দলের পাশাপাশি তৈরি হয় মহিলা বাস্কেটবল দলও।

দলের কোচ শাহিদ রাজা সাফ বলছেন, ‘‘এই ধরনের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই কঠিন। এঁদের প্রশিক্ষণ দিতে দিতে আমিও অনেক কিছু শিখেছি।’’ অন্য খেলোয়াড়দের মতোই রীতিমতো ‘ডায়েট চার্ট’ মেনে চলতে হয় ইনশাদের। জিমে হয় নিয়মিত শরীরচর্চা।

কাশ্মীরের দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ ছায়া ফেলেছে ইনশার দলের কাহিনিতেও। দলের সদস্য ইশরাতের বাড়িতে হানা দিয়েছিল নিরাপত্তাবাহিনী। সেই সময়ে গোলমালের জেরে উপর থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পান তিনি। এখন বাস্কেটবলকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন ইশরাতও।

অনুশীলন ও দৃঢ়তার ফল পেয়েছেন ইনশারা। ইতিমধ্যেই জাতীয় মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা। ‘স্পোর্টস ভিজ়িটর প্রোগাম’-এর অধীনে অতিথি হিসেবে ইনশাকে আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। দলের ম্যানেজার আয়ুব বাটের কথায়, ‘‘এখন আর কেবল চিকিৎসা নয়, আমরা চাই বাস্কেটবল ওঁদের জীবিকার পথ হয়ে উঠুক।’’ ইনশার কথায়, ‘‘হুইলচেয়ারই এখন আমার ইচ্ছে-ডানা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inshah Bashir Kashmir Basketball
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE