Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বাতিল দুই পড়ুয়ার রেজাল্ট

কেন শীর্ষে বাচ্চাবাবুর কলেজ, শুরু হল তদন্ত

দাদুর বাবার নামে কলেজ। দাদু বাহুবলী নেতা হওয়ার পাশাপাশি অছি পর্ষদের চেয়ারম্যান। বাবা কলেজটির অধ্যক্ষ।পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই কলেজ থেকেই ২০১৫ সালে বিহার উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হয়েছিলেন সোনালি রায়।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভগবানপুরে লালুর সঙ্গে এক মঞ্চে বাচ্চাবাবু (চিহ্নিত)। —ফাইল ছবি।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভগবানপুরে লালুর সঙ্গে এক মঞ্চে বাচ্চাবাবু (চিহ্নিত)। —ফাইল ছবি।

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

দাদুর বাবার নামে কলেজ। দাদু বাহুবলী নেতা হওয়ার পাশাপাশি অছি পর্ষদের চেয়ারম্যান। বাবা কলেজটির অধ্যক্ষ।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই কলেজ থেকেই ২০১৫ সালে বিহার উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হয়েছিলেন সোনালি রায়। কিন্তু চলতি বছর মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা কলেজের দুই পড়ুয়ার রেজাল্ট বাতিল হওয়ায় কলেজটির অনুমোদন সাময়িক ভাবে প্রত্যাহার করল বিহার বিদ্যালয় শিক্ষা সমিতি।

বিহারের বৈশালী জেলার ভগবানপুরের বিষুণ রায় কলেজ নিয়ে এমন প্রশ্ন ওঠায় অস্বস্তিতে নীতীশ কুমার সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, গোটা বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুখে কুলুপ এঁটেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

পটনা থেকে গাঁধী সেতু পেরিয়ে সোজা মুজফ্ফরপুরের দিকে চলে গিয়েছে ৭৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই জাতীয় সড়কের পাশেই বৈশালী জেলার অন্যতম জনপদ ভগবানপুর। জাতীয় সড়ক থেকে মাত্র একশো মিটার দূরেই বিষুণ রায় কলেজ।

বিষুণ রায়ের নামে গোটা ভগবানপুর এলাকায় এক সময়ে বাঘে-গরুতে জল খেত। দাদাগিরিতে হাত পাকিয়েছিলেন তিনি। সেই বিষুণ রায়ের ছেলে রাজদেও রায় রাজ্য রাজনীতিতে নাম লেখান। বাহুবলী এই নেতা আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের ঘনিষ্ঠ বলেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ সালে আরজেডি ক্ষমতায় থাকার সময়ে সেই রাজদেও তাঁর বাবা বিষুণ রায়ের নামে কলেজ খুলে বসেন। পরে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব তুলে দেন ‘উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য’ ছেলে অমিত কুমার ওরফে বাচ্চাপ্রসাদের হাতে।

বাবার তৈরি কলেজকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন বাচ্চাবাবু। কলেজে ভর্তি করানোর জন্য নেতারা পর্যন্ত বাড়ির দরজায় লম্বা লাইন দেন। কেন না এই কলেজে এক বার ভর্তি হলে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করাটা পাক্কা। তারপর রাজ্যের বাইরে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই ভর্তি হওয়া যাবে। ২০১৫ সালে বিহারে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে বাচ্চাবাবুর মেয়ে সোনালি রায়। তার এমন কৃতিত্বে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছিলেন ভগবানপুরের বাসিন্দারা। লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়ে ভাল ফল করানোর গ্যারান্টি দেওয়া বাচ্চাবাবু এ বার ফেঁসেছেন অন্য দুই ‘টপার’ রুবি রায় এবং সৌরভ শ্রেষ্ঠের জন্য। বিষুণ রায় কলেজের এই দুই ছাত্রছাত্রী টিভি চ্যানেলের সামনে ভুলভাল উত্তর দেওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে কলেজের ‘কর্মকাণ্ড’।

শুক্রবার বিহার বিদ্যালয় শি‌ক্ষা সমিতি মেধা তালিকার শীর্ষে থাকা ১৩ জন পড়ুয়াকে ফের পরীক্ষার জন্য ডেকেছিল। রুবি রায় সেখানে হাজির হয়নি। এক চিঠিতে রুবির বাবা সমিতিকে জানিয়েছেন, ‘মানসিক অবসাদে’র চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বাইরে পাঠানো হয়েছে তাকে। মেধা তালিকায় থাকা অন্য ১১ পড়ুয়া অবশ্য হাজিরা দিয়েছিল। আজ বৈঠকে বসেন বিদ্যালয় শিক্ষা সমিতির শীর্ষ কর্তারা। সমিতির চেয়ারম্যান লালকেশ্বর প্রসাদ সিংহ জানিয়েছেন, সৌরভ শ্রেষ্ঠ এবং রাহুল কুমার নামে অন্য এক পড়ুয়ার রেজাল্ট বাতিল করা হয়েছে। রুবি রায়কে ফের পরীক্ষা দিতে আসার জন্য ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সাময়িক ভাবে সাসপেন্ড হয়েছে বাচ্চাবাবুর কলেজের অনুমোদন। ওই কলেজের কাজকর্ম নিয়ে তদন্ত হবে।

মোবাইলে অবশ্য বাচ্চাবাবু দাবি করছেন, ‘‘আমার কলেজের ফল ভাল হচ্ছে। পরিকাঠামো ভাল। তাই হিংসাতে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mizoram Assam Refugees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE