Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গণনাট্যের ৭৫ বছরের উদ্‌যাপন প্রায় বঙ্গহীন

ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের ৭৫ বছরের উদ্‌যাপন শুরু হল পটনায়। সমস্ত আলোচনাতেই উঠে আসছে বাংলার ইতিহাস। বিজন ভট্টাচার্য থেকে উদয়শঙ্কর-রবিশঙ্কর, সলিল চৌধুরী থেকে ঋত্বিক ঘটক, উচ্চারিত হচ্ছেন সকলেই। অথচ তাঁদের পরিবারের কাউকে খবরটুকু পৌঁছে দেওয়া হয়নি।

মুখর: ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের ৭৫ বছর উদ্‌যাপনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অভিনেত্রী শাবানা অাজমি। সঙ্গে ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার (বাঁ দিকে) ও গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী (মাঝে)। শনিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই।

মুখর: ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের ৭৫ বছর উদ্‌যাপনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অভিনেত্রী শাবানা অাজমি। সঙ্গে ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার (বাঁ দিকে) ও গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী (মাঝে)। শনিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই।

স্যমন্তক ঘোষ
পটনা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৫
Share: Save:

শুরু হয়েছিল ‘ভুখা হ্যায় বঙ্গাল’ স্লোগান দিয়ে। সেটা চল্লিশের মন্বন্তর পর্ব। ৭৫ বছর পরের স্লোগান, ‘ভুখা হ্যায় দেশ!’

ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের ৭৫ বছরের উদ্‌যাপন শুরু হল পটনায়। সমস্ত আলোচনাতেই উঠে আসছে বাংলার ইতিহাস। বিজন ভট্টাচার্য থেকে উদয়শঙ্কর-রবিশঙ্কর, সলিল চৌধুরী থেকে ঋত্বিক ঘটক, উচ্চারিত হচ্ছেন সকলেই। অথচ তাঁদের পরিবারের কাউকে খবরটুকু পৌঁছে দেওয়া হয়নি। বাংলার গণনাট্যের কিছু প্রায় অপরিচিত মুখ আর শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দু’একজন ব্যক্তিত্ব ছাড়া নিমন্ত্রণ পাননি কেউ।

খানিক খেদ নিয়েই সলিলবাবুর মেয়ে অন্তরা চৌধুরী বলেন, ‘‘এত বড় ঘটনা, জানতেই পারলাম না?’’ শম্ভু এবং তৃপ্তি মিত্রের মেয়ে নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলী মিত্র অবশ্য বললেন, তিনি জন্মানোর আগেই বাবা-মা গণনাট্য সঙ্ঘ ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর সঙ্গে এই সঙ্ঘের কোনওই যোগাযোগ নেই। কিন্তু যাঁদের ছিল? সঙ্গীতকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, কারও কাছেই পৌঁছয়নি উৎসবের চিঠি। অভিজিৎবাবুর আক্ষেপ, ‘‘বাংলা কী এ ভাবে বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে?’’

গণনাট্যের ৭৫ বছরের কথা মনে রেখে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের পরিবার কলকাতায় অনুষ্ঠান করছে, তাদের কাছেও পটনার অনুষ্ঠানের খবর ছিল না। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও অজিতেশ তো গণনাট্যের নিরন্তর কর্মী ছিল। গোড়ার দিকে নান্দীকার গণনাট্য শাখা হিসেবে কাজ করেছে!’’

ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রাকেশ ‘ত্রুটি’ স্বীকার করে মার্জনা চাইছেন, ‘‘সকলকেই ডাকা উচিত ছিল, কিন্তু যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি। এটা আমাদেরই দুর্ভাগ্য।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ছাড়া ইপ্টা (গণনাট্য সঙ্ঘ) হয় না।’’ একই বক্তব্য অনুষ্ঠানের মুখ্য আয়োজক তনভীর আখতারেরও। তবে কলকাতার সাংস্কৃতিক মহলের অনেকরই ধারণা, ‘ওরা-আমরা’ রাজনীতির কারণেই পশ্চিমবঙ্গের গণনাট্য সঙ্ঘ এ রাজ্যের অনেককে নিমন্ত্রণ করার কথা মনে করায়নি। পশ্চিমবঙ্গ শাখার সহ-সম্পাদক তাপসকুমার মৈত্রের বক্তব্য, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।’’

শনিবার অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হল। পাঁচদিন ধরে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলবে অনুষ্ঠান। ২২টি রাজ্যের ১৪০০ কর্মী যোগ দেবেন। পুরো সময়টাই থাকবেন ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার। ছোটবেলা থেকেই এই সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। এসেছেন গুজরাতের জিগ্নেশ মেবাণী। যদিও গণনাট্যের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগ নেই।

তবে কানহাইয়া-জিগ্নেশদের সামনে রেখে পটনার বামপন্থীরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এ কেবল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়। শিল্প যে সংগঠনের কাছে রাজনৈতিক অস্ত্র, অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন গণনাট্যের প্রস্তুতি পর্বের অন্যতম কান্ডারি কইফি আজমির মেয়ে শাবানা আজমিও। মোদীর আমলে দেশ

কতটা ‘ভুখা’, ৭৫-এর গণনাট্য সুর বেঁধেছে সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE