Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বন্দর চুক্তি সই, ইরানকে বন্ধুত্বের বার্তা মোদীর

তেরো বছর আগে প্রথম স্বপ্নটা দেখা হয়েছিল। যা সফল হল আজ সকালে, তেহরানের মাটিতে। দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রয়াস সাফল্যের মুখ দেখল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম ইরান সফরে। ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ভারত এবং ইরানের যৌথ উদ্যোগে ছাবাহার বন্দর সংক্রান্ত চুক্তি সই হল আজ। ঐতিহাসিক এই চুক্তির পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত এবং ইরানের বন্ধুত্ব নতুন নয়। আমাদের দোস্তি ইতিহাসের মতোই প্রাচীন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তেহরানে।  ছবি: এএফপি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তেহরানে। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

তেরো বছর আগে প্রথম স্বপ্নটা দেখা হয়েছিল। যা সফল হল আজ সকালে, তেহরানের মাটিতে।

দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রয়াস সাফল্যের মুখ দেখল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম ইরান সফরে। ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ভারত এবং ইরানের যৌথ উদ্যোগে ছাবাহার বন্দর সংক্রান্ত চুক্তি সই হল আজ। ঐতিহাসিক এই চুক্তির পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত এবং ইরানের বন্ধুত্ব নতুন নয়। আমাদের দোস্তি ইতিহাসের মতোই প্রাচীন।’’ পাশাপাশি, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানিও বললেন, ‘‘ইরান ও ভারতের পারস্পরিক সহযোগিতার এক বড় প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে ছাবাহার।’’ ইরানের ধর্মীয় নেতা আলি খামেনেইয়ের সঙ্গেও আজ দেখা করেছেন মোদী। টুইটারে সে কথা জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ।

ছাবাহারই প্রথম বিদেশি বন্দর যেখানে ভারত একটা মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে চলেছে। প্রায় ২০ কোটি ডলার এখানে বিনিয়োগ করার কথা ভারতের।

এই বিনিয়োগ ভারতের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত—দু’দিক থেকেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেছে কূটনৈতিক শিবির। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট মহম্মদ খাতামির নয়াদিল্লি সফরের সময়ই এই বন্দর তৈরির পরিকল্পনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। ইরানের প্রয়োজন ছিল ভারতীয় বিনিয়োগে সে দেশে একটি বৃহৎ বন্দর তৈরির পরিকাঠামো। আর ভারত চাইছিল, আফগানিস্তানের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা তৈরি করতে। তাতে গোড়া থেকেই বাধা দিয়ে এসেছে পাকিস্তান। তাই স্থলপথে পাকিস্তানকে এড়িয়ে জলপথে ইরান হয়ে কাবুলের সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে একটি বন্দর ছিল অপরিহার্য। শুধু আফগানিস্তান নয়, ওই পথে মধ্য এশিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে ভারত। তাই শুধু বন্দরই নয়, ভারতীয় উদ্যোগে সেখান থেকে জাহেরান পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

ছাবাহার বন্দর তৈরির আরও একটি গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়াদরে বন্দর বানিয়ে ভারতকে পশ্চিম দিক থেকে ঘিরতে চাইছে চিন। চিনের অর্থে তৈরি হওয়া গোয়াদর বন্দর থেকে এই প্রস্তাবিত ছাবাহার বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। ফলে বেজিংয়ের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করে তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলার জন্যও এই পদক্ষেপ ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ভারতের এই কূটনৈতিক সাফল্য খুব সহজে আসেনি। ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি রুখতে একটা দীর্ঘ সময় আমেরিকা–সহ পশ্চিমের দেশগুলি সে দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আর তাতে ভারত-ইরান যৌথ বন্দর প্রকল্পের অগ্রগতি বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। সে সময় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ভোটাভুটিতে ভারত ইরানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কও ধাক্কা খায়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, ছাবাহার তৈরির পথ প্রায় বন্ধই হয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু হাল ধরেন নরেন্দ্র মোদী। মূলত তাঁর উদ্যোগেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সক্রিয়তা ফের বাড়ে। ইতিমধ্যে ইরানও তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে রাশ টানে। তাদের উপর থেকে পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞাও ওঠে। ফলে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা বাড়ানো ভারতের পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। ছাবাহার ছাড়াও বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বারোটি চুক্তি আজ সই হয়েছে দু’দেশের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Modi India iran
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE