Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হুরিয়ত বাদ! কাশ্মীরে শান্তি বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন

উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে আলোচনায় রাজি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই আলোচনায় হুরিয়ত কনফারেন্স থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই।

নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে রবিবার শ্রীনগরে মৃত্যু হয় এক বিক্ষোভকারী যুবকের। সোমবার তাঁর দেহ বাড়িতে আনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। ছবি: পিটিআই

নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে রবিবার শ্রীনগরে মৃত্যু হয় এক বিক্ষোভকারী যুবকের। সোমবার তাঁর দেহ বাড়িতে আনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে আলোচনায় রাজি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই আলোচনায় হুরিয়ত কনফারেন্স থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই। এ দিন জম্মু-কাশ্মীরের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি ‘সাংবিধানিক গণ্ডির’ মধ্যেই আলোচনা চান। যা শুনে বিরোধী নেতারা মনে করছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় রাজি নয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যেই তা স্পষ্ট। ফলে বৈঠক হলেও কাশ্মীরের সমস্যা কতটা মিটবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে সব শিবিরে।

জঙ্গি নেতা হিজবুল ওয়ানির মৃত্যুর পরে গত ৪৪ দিন ধরে অশান্ত কাশ্মীর। জনতা-বাহিনী সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ষাটের বেশি মানুষ। অশান্তি থামাতে কেন্দ্র রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করছে না বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। এ নিয়ে কেন্দ্রকে চাপ দিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা দিল্লি এসে আজ মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

ভূস্বর্গের বিরোধী নেতারা জানাচ্ছেন, গত প্রায় দেড় মাস ধরে যে তরুণরা বাহিনীকে লক্ষ করে পাথর ছুড়ছে, বিশেষ কোনও রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও তাদের উপরে বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত কনফারেন্সের কিছুটা প্রভাব আছে। এমনিতেও উপত্যকায় হুরিয়তের যথেষ্ট প্রভাব আছে। এই অবস্থায় হুরিয়তকে বাদ দিয়ে বৈঠক হলে তাতে জট কতটা কাটবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লার কথায়, ‘‘প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে অন্তত হুরিয়তের সঙ্গে আলোচনা করুক কেন্দ্র।’’

সূত্রে খবর, এ দিন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন যে কেবল উন্নয়ন দিয়ে কাশ্মীরের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কথায় রাজি তিনি। কিন্তু তা হতে হবে ‘সাংবিধানিক গণ্ডি’র মধ্যে। বিরোধী প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ী মধ্যপন্থা নিয়ে চলার পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর আমলে হুরিয়তের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু মোদী জমানায় সেই মধ্যপন্থার লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।’’

এই প্রসঙ্গেই ফের উঠে আসছে বাজপেয়ী জমানায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গোপন আলোচনায় প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান এ এস দুলাতের ভূমিকার কথা। দীর্ঘদিন ধরে গোপনে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন দুলাত। ফলে আরও বড় আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। স্মৃতিকথায় দুলাত দাবি করেছেন, প্রয়াত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আব্দুল গনি লোনের সঙ্গে তাঁর আলোচনা এতটাই এগিয়েছিল যে পাকিস্তান আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দ্রুত লোনকে খুন করার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। কাশ্মীরের বিরোধী নেতাদের অনেকের দাবি, দুলাতের মতোই কোনও প্রতিনিধির মাধ্যমে হুরিয়তের সঙ্গে কথা বলুক মোদী সরকার। কারণ, কাশ্মীরের সব পক্ষকে আলোচনায় সামিল না করলে সমস্যা মিটবে না। আজ শ্রীনগরে এক অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক রঙের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। সুপ্রিম কোর্টও এক মামলার শুনানিতে জানিয়েছে, কাশ্মীরে আলোচনা ছাড়া পথ নেই।

আরও একটি বিষয়ে আজ হতাশ হয়েছেন বিরোধী নেতারা। কাশ্মীরে বিক্ষোভ সামলাতে ছররা বন্দুকের ব্যবহার নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য। এ দিনও ওই অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, এ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টে হলফনামা দিয়েছে সিআরপিএফ। তাতে তারা জানিয়েছে, ছররা ব্যবহার বন্ধ হলে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ সে ক্ষেত্রে চরম পরিস্থিতিতে গুলি চালানো ছাড়া উপায় থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে ছররা বন্দুক ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kashmir Hurriyat Peace
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE