মঙ্গলা মানি।
তাপমাত্রা সেখানে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। সেই শীতলতম মহাদেশ আন্টার্কটিকাতে টানা ৪০৩ দিন কাটিয়ে রেকর্ড গড়লেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর মহিলা বৈজ্ঞানিক, ৫৬ বছর বয়সি মঙ্গলা মনি।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ২৬ জনের একটি দল নিয়ে দক্ষিণ মেরুর ভারতীয় গবেষণা কেন্দ্র ‘ভারতী’তে পৌঁছেছিলেন মঙ্গলা। ইসরো থেকে সেই প্রথম কোনও মহিলাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলাই ছিলেন দলের একমাত্র মহিলা সদস্য।
গত ডিসেম্বরে সফল ভাবে গোটা মিশনটি সম্পূর্ণ করে দেশে ফিরেছেন মঙ্গলা। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, ‘‘দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া ভীষণ শুষ্ক। তার উপর ওই ঠান্ডা! গবেষণা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া ছেড়ে বেরোতে হলে যথেষ্ট সতর্কতা নিতে হত। পরতে হত বিশেষ ঠান্ডারোধী জামাকাপড় (পোলার ক্লোদিং)। এমনকী ২-৩ ঘণ্টা টানা বাইরে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকত।’’ মঙ্গলা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মের সময়ে বছরের বাকি মাসগুলোর জন্য খাবার ও জ্বালানি সংগ্রহ করে রাখতে হত তাঁদের। তা ছাড়া, প্রথামাফিক সমস্ত বর্জ্যও জমিয়ে রাখা হত। দক্ষিণ মেরুকে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে বেশির ভাগ বর্জ্যই সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন মঙ্গলারা।
শুধু ভারতীয়দের মধ্যেই নয়, চিন এবং রাশিয়া থেকে আসা বিজ্ঞানীদের মধ্যেও ২০১৬-র নভেম্বর থেকে ২০১৭-র ডিসেম্বর— এই ১৩ মাস দক্ষিণ মেরুতে মঙ্গলাই ছিলেন একমাত্র মহিলা। দলের অন্য সদস্যরা তাঁকে সব রকম ভাবে সাহায্য করেছেন, জানালেন মঙ্গলা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জন্মদিন পালনও হয়েছিল ওই গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে।’’
তবে শুধু অভিযানই যে কঠিন ছিল তা নয়, শক্ত ছিল প্রস্তুতিপর্বও। প্রথমে বেশ কয়েক সপ্তাহ শারীরিক ও মানসিক জোরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। দিল্লির এইমসে ধারাবাহিক ভাবে মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছিল তাঁর। সব শেষে দু’সপ্তাহ ধরে উত্তরখণ্ডের আউলিতে ৯০০০ ফুট এবং বদ্রীনাথে ১০ হাজার ফুট ট্রেক। শারীরিক ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য পিঠে চাপিয়ে দেওয়া হত ভারী ব্যাকপ্যাক।
আরও পড়ুন: পুঞ্চে পাক গোলায় নিহত একই পরিবারের পাঁচ জন
ছোট থেকেই প্রযুক্তির প্রতি টান ছিল মঙ্গলার। পছন্দের বিষয় ছিল ভূগোল। পাশাপাশি, দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছেই এই কাজে উৎসাহ দিয়েছিল। মঙ্গলার বস তথা হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের (এনআরএসসি) অধিকর্তা ড. ওয়াই ভি এন কৃষ্ণমূর্তি জানালেন, মঙ্গলা ও তাঁর দলের কাজই ছিল, মেরুপ্রদেশে নজর রাখে এমন কৃত্রিম উপগ্রহগুলির তথ্য সংগ্রহ করা। দক্ষিণ মেরুই একমাত্র জায়গা যেখান থেকে ১৪টি কক্ষপথ স্পষ্ট দেখা যায়। দক্ষিণ মেরুর গবেষণা কেন্দ্র থেকে সেই তথ্যই সংগ্রহ করতেন মঙ্গলারা। প্রথম থেকেই গবেষণার স্বপ্ন ছিল মঙ্গলার। কৃষ্ণমূর্তি জানালেন, মঙ্গলার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে অনেক তরুণী বিজ্ঞানীই এখন দক্ষিণ মেরু সফরের জন্য এগিয়ে আসছেন।
আরও পড়ুন: বিরোধীরা সবাই চাইলে পেপার ব্যালটে রাজি, জানাল বিজেপি
আর বরফের দেশ জয় করে ফিরে মঙ্গলা বললেন, ‘‘ছেলেদের হয়তো শারীরিক ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বেশি, কিন্তু অনুভূতির দিক দিয়ে মেয়েরা অনেক বেশি শক্তিশালী। আর সেটাই মেয়েদের জোর।’’ বয়সকে পেছনে ফেলে দেওয়া পঞ্চাশ পেরনো মঙ্গলার মতে, ‘‘মেয়েদের উচিত সবার আগে নিজেকে বিশ্বাস করা, আর সেই বিশ্বাসে ভর করে নিজেকে যে কোনও কাজে এগিয়ে দেওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy