Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
ISRO

‘দেশদ্রোহী’ বদনাম ঘুচল! রায় জেনে যেতে পারলেন না ইসরোর বিজ্ঞানী

কিছুই দেখে যেতে পারলেন না কে চন্দ্রশেখর।শারীরিক অসুস্থতার জেরে গত এক মাস ধরে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

কে চন্দ্রশেখর।— ফাইল চিত্র।

কে চন্দ্রশেখর।— ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:২৮
Share: Save:

দীর্ঘ দু’-দশকের লড়াই। তার পর মিলেছে সুবিচার। হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু তা জানতেও পারলেন না কে চন্দ্রশেখর। অভিমান ও যন্ত্রণা বুকে নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।

নব্বইয়ের দশকে ইসরো গুপ্তচর কাণ্ডে যে তিন বিজ্ঞানীর নাম জড়িয়েছিল, কে চন্দ্রশেখর তাঁদের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘ ২৪ বছর পর শুক্রবার তা থেকে তাঁদের রেহাই দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ফিরিয়ে দেওয়া হয় হারানো সম্মান। ক্ষতিপূরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু তার কিছুই দেখে যেতে পারলেন না কে চন্দ্রশেখর।শারীরিক অসুস্থতার জেরে গত এক মাস ধরে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে আদালত রায় শোনায়। তার কিছুক্ষণ আগেই কোমায় চলে যান তিনি। সেই অবস্থাতেই রবিবার রাত ৮টা বেজে ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করন। বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

আরও পড়ুন: সাজানো ছিল চর-কাণ্ড, দাবি ইসরো বিজ্ঞানীর

তাঁর স্ত্রী, ‘হিন্দুস্তান মেশিন টুলস’-এর প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার, কে বিজয়াম্মা জানান, ‘‘খবরে আদালতের রায় দেখাচ্ছিল। আমরা ওঁকে তা দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওঁর তখন সংজ্ঞা ছিল না। তাই কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। অথচ ওই দিনটার জন্যই এতদিন অপেক্ষা করছিলেন। বড্ড দেরি হয়ে গেল বোধহয়।’’

১৯৯২ সাল থেকে রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা গ্লাভকোসমোসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন কে চন্দ্রশেখর। সেই সময়ই গুপ্তচরবৃত্তিতে নাম জড়ায় তাঁর। গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। হেফাজতে থাকাকালীন কেরল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা আইবি তাঁর ওপর চরম নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ। চন্দ্রশেখরকে নাকি নগ্ন করে অমানুষিক অত্যাচার চালায় কেরল পুলিশ! দফায় দফায় জেরা করা হয় চন্দ্রশেখরের স্ত্রী কে বিজয়াম্মাকেও।

আরও পড়ুন: গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত ইসরোর বিজ্ঞানীকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের​

তারপর থেকেই নাকি নিজেকে গুটিয়ে নেন কে চন্দ্রশেখর! উত্তর বেঙ্গালুরুর বিদ্যারণ্যপুরে নিভৃতে জীবন যাপন শুরু করেন। তবে আশা ছিল একদিন সত্যিটা সামনে আসবেই। আইনের চোখে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন তিনি। তেমনটাই হল, তবে বড্ড দেরি হয়ে গেল বলে আক্ষেপ তাঁর স্ত্রীর।

কেরল পুলিশ ও আইবি-র প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। বলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা সাজিয়ে কী লাভ হল? এত বছর ধরে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে, তার দায় কে নেবে? প্রশাসন শুধুমাত্র ওঁর কেরিয়ার শেষ করেই ক্ষান্ত হয়নি। মানসিক শান্তিটুকুও কেড়ে নেয়। কেরলে আমাদের বাড়িতে হামলা করা হয়। কপালে জোটে দেশদ্রোহী তকমা। আজ জানতে চাই, এত হেনস্থা কেন? কীসের জন্য?’’

তাঁদের আত্মীয় সুধীশ কুমার বলেন, ‘‘এক সময় ওঁকে ঘন ঘন বিদেশ যেতে দেখেছি। বিশিষ্ট লোকজনের সঙ্গে ওঠা বসা ছিল। জীবন যাত্রা ছিল যথেষ্ট বিলাস বহুল। কিন্তু ওই ঘটনার পর আচমকাই সব পাল্টে যায়। চরম অর্থ কষ্টে পডে় ওরা। বাড়ি ছেডে় বেরনোই বন্ধ করে দেন চন্দ্রশেখর। বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা ছিল ওঁর। বিশ্বাস করতেন, একদিন না একদিন নির্দোষ প্রমাণিত হবেনই।’’

১৯৯৪ সালে ইসরোর বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণন এবং ডি শশীর বিরুদ্ধে প্রথম চরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাতে নাম জড়ায় কে চন্দ্রশেখরের। বলা হয়, পাকিস্তানকে গোপন তথ্য পাচার করেছেন তাঁরা। পরে সিবিআই আদালতে জানায়, ওই অভিযোগে সারবত্তা নেই। সকলকে মুক্তি দেওয়া হয়। ছাড়া পেয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলেন চন্দ্রশেখর। বলেন, মার্কিন সিআইএ-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ভারতীয় গুপ্তচরদের একাংশ। তাদের নিশানায় রযেছে ইসরো। তাতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের কেরিয়ার তো নষ্ট হয়েইছে, ক্রায়োজেনিক প্রকল্পের কাজও ব্যাহত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE