Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

হায়দরাবাদে রাজনীতিবিদদের ঢল, দয়া করে রাজনীতি নয় আর্জি ছাত্রদের

দয়া করে রাজনীতি নয়! হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এটাই শুনতে হল রাহুল গাঁধীকে। দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার অস্বাভিক মৃত্যুর পর মঙ্গলবার তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা করেন রোহিতের মায়ের সঙ্গে। কিন্তু, এর পরেই আওয়াজ ওঠে ‘রাজনীতি নয়’। এই দিন সন্ধ্যাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের যাওয়ার কথা। তার আগে রোহিতের সতীর্থদের এমন সিদ্ধান্ত বিপাকে ফেলেছে তাঁদের।

রোহিত

রোহিত

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:৫৩
Share: Save:

দয়া করে রাজনীতি নয়!

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এটাই শুনতে হল রাহুল গাঁধীকে। দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার অস্বাভিক মৃত্যুর পর মঙ্গলবার তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা করেন রোহিতের মায়ের সঙ্গে। কিন্তু, এর পরেই আওয়াজ ওঠে ‘রাজনীতি নয়’। এই দিন সন্ধ্যাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের যাওয়ার কথা। তার আগে রোহিতের সতীর্থদের এমন সিদ্ধান্ত বিপাকে ফেলেছে তাঁদের।

এমনিতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনায় উত্তাল দেশের রাজনীতি। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এ দিন সকালে সরব হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই ঘটনার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতেও বলেন। শুধু কেজরীবাল নন, দলিত মৃত্যুতে সহানুভূতি দেখাতে হায়দরাবাদে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে তৃণমূলও।

এ দিন সকালে টুইটারে কেজরীবাল লিখেছেন, পাঁচ দলিত ছাত্রকে বয়কট এবং বহিষ্কার করটা সরকারের কাজ নয়। বরং সাংবিধানিক ভাবে তারা দলিতদের উন্নয়নে দায়বদ্ধ। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘এটা আত্মহত্যা নয়। হত্যা। গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং সমতার হত্যা। তাঁর মন্ত্রিসভার ওই সদস্যকে বহিষ্কার করে মোদীর দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

অন্য দিকে, এই ঘটনায় তৃণমূল হায়দরাবাদে এক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু, দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে দলের দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং প্রতিমা মণ্ডলকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

গত রবিবার হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে রোহিত ভেমুলা নামে এক ছাত্রের গলায় ফাঁস দেওয়া দেহ উদ্ধার হয়। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্র ছিলেন। এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় শ্রম ও রোজগার মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র নাম। মন্ত্রী দত্তাত্রেয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আপ্পা রাও, বিজেপির ছাত্র সংগঠন এভিবিপি-র স্থানীয় দুই নেতা সুশীল কুমার ও বিষ্ণুর বিরুদ্ধে তফসিলি পীড়ন প্রতিরোধ আইনে অভিযোগও দায়ের করেছে সাইবারাবাদ এলাকার গাচিবাউলি থানার পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের অগস্ট মাসে। ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ইয়াকুব মেননের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যলয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অম্বেডকর ইউনিয়নের সদস্য রোহিত ও তাঁর চার সতীর্থদের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি রোহিতদের ক্লিন চিট দেয়। কিন্তু পরে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, দত্তাত্রেয় চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে জানান ওই বিশ্বাবিদ্যালয় জাতিবাদের আখড়া হয়ে উঠেছে। চরমপন্থী এহং জাতীয়তাবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।

এর পরেই রোহিত-সহ পাঁচ ছাত্রকে ক্লাসরুম এবং গবেষণাগার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্য কোনও জায়গায় যেতে বারণ করা হয়। বের করে দেওয়া হয় হস্টেল থেকেও। এমনকী, ক্যান্টিনে ঢোকার অনুমতিও কেড়ে নেওয়া হয়। তার পর থেকে বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকছিলেন রোহিত-সহ পাঁচ জন। সেই তাঁবু ভেঙেও দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত রবিবার হস্টেলে এক সতীর্থের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় রোহিতের দেহ।

সুইসাইড নোটে কারও বিরুদ্ধে আঙুল না তুললেও রোহিতের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু বিজেপিকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE