সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
দু’টি প্রশ্নকে ঘিরে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের টানাপোড়েন ছিলই। এক, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা কেন বিচারপতিদের হাতেই থাকবে? দুই, সেই নিয়োগের প্রক্রিয়ায় কেন যথেষ্ট স্বচ্ছতা থাকবে না?
সেই বিতর্ক নতুন করে উস্কে দিল শীর্ষ আদালতের প্রবীণ বিচারপতিদের কলেজিয়ামের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ঘিরে অসন্তোষ। কেন্দ্রের আইন মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় যে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, এত দিন সরকার তা বলে আসছিল। এখন প্রাক্তন বিচারপতিরাই তা বলছেন।
পাঁচ বিচারপতির কলেজিয়াম গত ডিসেম্বরে রাজস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ ও দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মেননের নাম সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল। কিন্তু জানুয়ারিতে সেই সিদ্ধান্ত বদল করে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম। তারা সুপারিশ করে কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দিনেশ মাহেশ্বরী ও দিল্লির হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নাম। রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দিলে, সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে হওয়া হয়। সেই মোতাবেক বিচারপতি মাহেশ্বরী ও বিচারপতি খন্না আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথও নিয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক এখানেই থামছে না। কলেজিয়াম ফের জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট, ইলাহাবাদ হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত বদল করেছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ সকালেই সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ দাবি তুলেছেন, কলেজিয়াম ব্যবস্থার এ বার বিদায় নেওয়া উচিত। কারণ, কলেজিয়াম ব্যবস্থায় এখনও স্বচ্ছতার অভাব ও গোপনীয়তা রয়ে গিয়েছে। কারও কাছে এর কোনও দায়বদ্ধতাও নেই। তাঁর প্রশ্ন, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি— এই এক মাসে কলেজিয়ামে মাত্র একটি বদল হয়েছে। বিচারপতি মদন লোকুরের অবসরের পরে কলেজিয়ামে এসেছেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র।
বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ও তাতে সরকারের ভূমিকাও নিশ্চিত করতে জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন বিল এনেছিল মোদী সরকার। সংসদে পাশ হওয়া সেই বিলকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। নিয়োগের ক্ষমতা থেকে যায় কলেজিয়ামের হাতেই। তবে সুপ্রিম কোর্ট বর্তমান নিয়োগ পদ্ধতিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে বলে। তা নিয়ে দর কষাকষির পর সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত খসড়া দিয়েছে কেন্দ্রকে। আইন মন্ত্রক তা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। সরকারের নীরবতাকেই সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নিয়েছেন বিচারপতিরা। কিন্তু তাতে সমস্যা যে মেটেনি, সেটা এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেই প্রাক্তন বিচারপতিদের মত।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার মন্তব্য, ‘‘স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করা উচিত কলেজিয়ামের। কেন সিদ্ধান্ত বদল হল, তা-ও খোলসা করা দরকার।’’ অতীতে বিচারপতি মাহেশ্বরীর নামে কলেজিয়ামে প্রাক্তন বিচারপতি চেলমেশ্বর আপত্তি তুলেছিলেন। নতুন কলেজিয়াম তাঁকেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই কারণেই আমি ২০১৬-তে কলেজিয়ামের বৈঠকে বসতে রাজি হইনি। আমাকে সকলে বলেছিলেন, পদত্যাগ করে মুখ খুলুন। এখন তো অবসর নিয়েছি। এ বার কি মুখ খুলব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy