মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার অরূপ পট্টনায়ক জানিয়েছেন, এই প্রথম খুনের মামলায় কোনও মাফিয়া ডনের শাস্তি হল।
সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে-র হত্যায় মাফিয়া ডন ছোটা রাজন-সহ ন’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত। প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়েছেন প্রাক্তন সাংবাদিক জিগনা ভোরা। রাজনের গোষ্ঠীর সদস্য পলসন জোসেফকেও প্রমাণের অভাবে মুক্তি দিয়েছেন বিচারক সমীর আদকর। মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার অরূপ পট্টনায়ক জানিয়েছেন, এই প্রথম খুনের মামলায় কোনও মাফিয়া ডনের শাস্তি হল।
২০১১ সালের ১১ জুন মুম্বইয়ের পওয়াই স্টেশনের কাছে গুলি করে খুন করা হয় প্রবীণ সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে-কে। পুরো ঘটনায় রাজন গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তোলে মুম্বই পুলিশ। মুম্বই অপরাধ জগতের সঙ্গে খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের যোগাযোগ থাকা নতুন নয়। কিন্তু সাংবাদিকদের উপরে এমন হামলার নজির কম। ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে অন্য একটি দৈনিকের সাংবাদিক জিগনা ভোরার গ্রেফতারির ফলে ঘটনা চাঞ্চল্যকর মোড় নেয়। পরে মুম্বই পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই।
তদন্তকারীদের মতে, প্রবীণ সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে-র উপরে দীর্ঘদিন ধরেই খাপ্পা ছিল রাজন। তার ধারণা হয়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বী দাউদ ইব্রাহিম গোষ্ঠীর সঙ্গে ওই সাংবাদিকের ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। একটি বইয়ে নাকি রাজনকে ছোট মাপের অপরাধী হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলেন জ্যোতির্ময়। সিবিআই জানিয়েছে, জ্যোতির্ময় তাঁর ব্রিটেন ও ফিলিপিন্স সফরের সময়ে রাজনের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কথা না মেনে রাজন তাঁকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। সিবিআইয়ের মতে, নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সতীশ কালিয়াকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল রাজন। তাকে জ্যোতির্ময়ের পরিচয় জানানো হয়নি। কেবল চেহারার বর্ণনা ও মোটরসাইকেলের নম্বর দেওয়া হয়েছিল। এই কাজের জন্য একটি দল তৈরি করে কালিয়া।
২০১১ সালের ১১ জুন জ্যোতির্ময়ের মোটরবাইককে দু’টি মোটরবাইকে অনুসরণ করে রাজন গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা। পিছনে ছিল তাদের একটি কোয়ালিস গাড়িও। কালিয়াই জ্যোতির্ময়কে পিস্তল থেকে গুলি করে। ঘটনার পরে জ্যোতির্ময়ের পরিচয় জেনে কালিয়াদের আতঙ্ক বাড়ে। তাদের কয়েক জন মহারাষ্ট্র ছেড়েও পালায়। ওই দুষ্কৃতীদের কর্নাটক ও তামিলনাড়ু থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে রাজনকে ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতে নিয়ে আসা হয়। আজ রাজন ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে সতীশ কালিয়া, অনিল ওয়াঘমোড়ে, অভিজিৎ শিন্দে, অরুণ ঢাকে, নীলেশ শেগড়ে, মঙ্গেশ আগাওয়ানে, সচিন গায়কয়াড়, দীপক সিসৌদিয়ার। মামলা চলাকালীনই দীর্ঘ অসুস্থতার জেরে মারা যায় এক অভিযুক্ত বিনোদ আনসারি। দিল্লির তিহাড় জেল থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে এই মামলায় হাজিরা দিয়েছিল রাজন। আজ রায় শুনে সে বলে, ‘‘ঠিক হ্যায়।’’
সাংবাদিক জিগনা ভোরা ‘পেশাগত শত্রুতা’র জন্য জ্যোতির্ময়ের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রে যোগ দেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তদন্তকারীরা। জিগনাই জ্যোতির্ময়ের ঠিকানা ও মোটরবাইকের নম্বর রাজনকে দেন বলেও অভিযোগ করা হয়। তবে এই অভিযোগ বিশ্বাস করেননি মুম্বইয়ের সাংবাদিকদের বড় অংশই।
আজ রায় শোনার পরে জিগনা বলেন, ‘‘আমি যে নির্দোষ তা আদালত মেনে নিয়েছে। আমি খুশি।’’ অন্য দিকে জ্যোতির্ময়ের বোন লীনার মতে, দোষীদের ফাঁসি হওয়া উচিত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি দোষীদের প্রত্যেকের ২৬ লক্ষ টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তা থেকে জ্যোতির্ময়ের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy