Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এখন সরব কেন জয়ন্তী, তোপ কংগ্রেসের

সাত দিন বাদে দিল্লিতে ভোট। তার আগে একদা রাজীব গাঁধী ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের বোমায় বেসামাল কংগ্রেস। ঠিক এখনই কেন জয়ন্তী কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তথা গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে সরব হলেন সেই প্রশ্ন তুলে আসরে নেমেছে কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেও অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সেনাপতিরা।

কংগ্রেস ছাড়ার কথা জানাচ্ছেন জয়ন্তী নটরাজন। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

কংগ্রেস ছাড়ার কথা জানাচ্ছেন জয়ন্তী নটরাজন। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

সাত দিন বাদে দিল্লিতে ভোট। তার আগে একদা রাজীব গাঁধী ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের বোমায় বেসামাল কংগ্রেস। ঠিক এখনই কেন জয়ন্তী কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তথা গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে সরব হলেন সেই প্রশ্ন তুলে আসরে নেমেছে কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেও অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সেনাপতিরা।

৯ মাস হল ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছে মনমোহন সিংহ সরকার। তারও চার মাস আগে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিয়েছেন জয়ন্তী। পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেতে দেরি হওয়া নিয়ে শিল্প মহলের ক্ষোভের জেরেই তাঁকে সরানো হয়েছিল বলে তখনই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছিল। এখন খোদ জয়ন্তী জানিয়েছেন, রাহুল গাঁধীর নির্দেশেই পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র আটকে রাখতেন তিনি। পরে তাঁকেই বলির পাঁঠা করে সরানো হয়েছিল। শিল্প মহলকে বোঝানো হয়েছিল, ছাড়পত্র পেতে দেরির জন্য তিনিই দায়ী। প্রাক্তন পরিবেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, আদানি শিল্পগোষ্ঠীর ফাইল ইউপিএ জমানায় বাথরুমে পড়েছিল। এক মহিলার ফোনে আড়িপাতার ঘটনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করতে তাঁকে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বাধ্য করেছিলেন।

স্বভাবতই জয়ন্তীকে আক্রমণ করে আসরে নেমেছেন সনিয়া-রাহুলের সেনাপতিরা। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “সংবাদমাধ্যম থেকেই জানছি, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জয়ন্তী। মহিলার ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সামোলচনা করেছিলেন তা নিয়ে এখন জয়ন্তীর অস্বস্তি স্বাভাবিক।” ওই আড়িপাতা কাণ্ডে মোদীর সঙ্গে অভিযোগের আঙুল ছিল অমিত শাহের দিকেও। সিঙ্ঘভির দাবি, দিল্লি বিধানসভা ভোটে জমি হারানোয় বিতর্কের মুখ ঘোরাতে চাইছে বিজেপি। তাই জয়ন্তীকে দিয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে কথা বলানো হল। পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ায় অনিয়ম নিয়ে জয়ন্তীর বিরুদ্ধে পাঁচটি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। সিঙ্ঘভির কথায়, “সিবিআই তদন্তের ভয়েই জয়ন্তী রাহুলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এর পর জয়ন্তীর বক্তব্য সভায় তুলে ধরবেন মোদী।”

জয়ন্তীর দুর্নীতি নিয়েও আজ সরব সনিয়া-ঘনিষ্ঠ শিবির। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা দাবি করেছেন, ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে মুম্বইয়ে একটি বণিকসভার গোলটেবিল বৈঠক হয়। সেখানে আদি গোদরেজ, কুমারমঙ্গলম বিড়লার মতো শিল্পপতিরা জয়ন্তীর নামে অভিযোগ করেন। আনন্দের দাবি, পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে গেলে চেন্নাই গিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক অফিসারের কাছে সই করাতে হতো বলে দাবি করেন শিল্পপতিরা। জয়ন্তীকে সরানোর পরে চেন্নাই থেকে ১০০টিরও বেশি ফাইল উদ্ধার হয়। সনিয়া ঘনিষ্ঠদের প্রশ্ন, কেন ১৩ মাস পরে মুখ খুললেন জয়ন্তী? তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক ছকটা খুব স্পষ্ট।

কিন্তু তার পরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। রাহুল যে পরিবেশবিদ, আদিবাসীদের দাবি পরিবেশ মন্ত্রকে পাঠিয়েছিলেন তা অস্বীকার করছে না কংগ্রেস। তাদের ব্যাখ্যা, রাহুল ওড়িশায় গিয়ে আদিবাসীদের বলেছিলেন দিল্লিতে তিনি তাঁদের সৈনিক। তার পরে আদিবাসীদের দাবি তিনি মন্ত্রকে পাঠিয়ে থাকলে আপত্তির কী আছে?

কিন্তু জয়ন্তী দুর্নীতিপরায়ণ জেনেও কেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেনি ইউপিএ সরকার? কেন দলীয় মুখপাত্র করে রাখা হয়েছিল তাঁকে? জবাবে সিঙ্ঘভি বলেন, “খাতায় কলমে সাক্ষ্যপ্রমাণ তখনও মেলেনি।” পরে ঘরোয়া আলোচনায় নেতারা বলেন, একে দুর্নীতির অভিযোগে বেকায়দায় ছিল কংগ্রেস। তার উপরে জয়ন্তীর দুর্নীতি ফাঁস হলে লোকসভা ভোটে দু’টো আসনও পেত না দল।

আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেন জয়ন্তী। তিনি কোন দলে যোগ দেবেন তা জানা যায়নি। তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাবও নেই তাঁর। সনিয়া ঘনিষ্ঠদের দাবি, তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন।

ঘটনাপ্রবাহে স্বভাবতই খুশি বিজেপি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “ইউপিএ আমলে আর্থিক বৃদ্ধির হার দ্রুত হারে কমার প্রধান কারণ ছিল প্রকল্পের অনুমোদনে দেরি হওয়া। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প কার খামখেয়ালিপনায় আটকে ছিল তা এ বার বোঝা গেল।” তাঁর দাবি, কাউকে শিক্ষা দেওয়া বা কাউকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার সুবিধেবাদী পুঁজিবাদ চালু করেছিল ইউপিএ সরকার। তাই বেহাল হয়েছিল অর্থনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE