Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
National News

হামলার সময় দুই পড়ুয়াকে কোয়ার্টারের বাথরুমে লুকিয়ে রেখেছিলেন অধ্যাপকের স্ত্রী

মুখে কাপড় বাঁধা ওই যুবকদের দেখেই ভয়ে পালাচ্ছিলেন গালিব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আরও এক ছাত্র।

শিবপ্রকাশ ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

শিবপ্রকাশ ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:৫৯
Share: Save:

মুখে কালো কাপড় বাঁধা এক দল যুবক। হাতে লোহার রড, লাঠি, বাঁশ। মারমুখী। শুধু জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর পড়ুয়া নয়, আতঙ্ক ছড়িয়েছিল অধ্যাপক-শিক্ষকদের কোয়ার্টারেও। ওই ‘রণমূর্তি’ দেখে দরজা আটকে গুটিসুটি মেরে গিয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। কিন্তু তার মধ্যেও মানবিকতার পাঠ ভোলেননি জেএনইউ-এর উর্দুর শিক্ষক শিব প্রকাশ এবং তাঁর স্ত্রী। এই ঘটনার পর তাঁরা বলছেন, এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেননি। পাশাপাশি ক্যাম্পাস ছাড়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

মুখে কাপড় বাঁধা ওই যুবকদের দেখেই ভয়ে পালাচ্ছিলেন গালিব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আরও এক ছাত্র। দু’জনকে শিব প্রকাশ দেখতে পান তাঁর কোয়ার্টার লাগোয়া ট্রানজিট হাউসের কাছে। দেখেই দু’জনকে নিজের কোয়ার্টারের ভিতরে নিয়ে যান শিব প্রকাশ। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর স্ত্রী সুনীতা দেবী দু’জনকে ঢুকিয়ে দেন বাথরুমে। রবিবার রাতের তাণ্ডবের পর সোমবার সেই অভিজ্ঞতার কথা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁরা।

সুনীতা দেবী বলেন, ‘‘সবার মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। সামনে যাকে পাচ্ছিল মারছিল। চলছিল ভাঙচুর। তবে তারা কাকে বা কী খুঁজছিল তা জানি না। সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ এমন চেঁচামেচি শুরু হল, যাতে মনে হল, যে কোনও সময় দাঙ্গা লেগে যাবে।’’

যুবকরা চড়াও হয়েছিল অধ্যাপক-শিক্ষকদের কোয়ার্টারেও। এমনকি, ভিতরে ঢুকে তল্লাশিও চালায় ওই যুবকের দল। কোয়ার্টারে তখন তাঁদের দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে শিব প্রকাশ ও সুনীতা দেবী ছিলেন। সুনীতা দেবী বলেন, ‘‘আচমকাই আমাদের বাড়ির দরজায় ধাক্কা মারতে শুরু করে ওই যুবকরা। কিন্তু না খোলায় দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু তার পরেই তাঁদের এক জন বলে, ইয়ে তো প্রফেসর হ্যায়,উই ওন্ট ডু এনিথিং হেয়ার(ইনি তো অধ্যাপক, আমরা এখানে কিছু করব না) এর পর তারা আমাদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।’’

২০০৫ সালে জেএনইউ-এর ছাত্রাবাসে থাকতেন শিব প্রকাশ। আর গত ছ’বছর ধরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু পড়াচ্ছেন। তিনি বলছেন, তাঁর ছাত্র জীবন বা অধ্যাপনার সময়কালে কখনও এমন ঘটনা দেখেননি। ঘটনার জেরে সারা রাত ঘুমোতে পারেননি সুনীতা দেবী। তিনি বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুমিয়েছি। এতটাই ভয় পাচ্ছি যে, আর এখানে থাকতে চাই না। এই ক্যাম্পাস ছাড়তে চাই। এখানে আমরা নিরাপদ নই।’’

হামলা হয়েছিল অন্যান্য কোয়ার্টারেও। শিব প্রকাশ-সুনীতা দেবীর প্রতিবেশী কোয়ার্টারের বাসিন্দা এক অধ্যাপকের স্ত্রী শ্রাবণী মণ্ডলেরও প্রায় একই অভিজ্ঞতা। তবে তিনি রুখে দাঁড়ানোয় ওই দলটি তাঁদের কোয়ার্টারের দরজা থেকেই ফিরে যান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ওদের জিজ্ঞেস করি, ‘এখানে কেন এসেছেন আপনারা?’ তার পরে তারা ফিরে গেলেও পরক্ষণেই আবার ফিরে এসে দরজায় ধাক্কা মারতে থাকে। কিন্তু আমি ভয়ে দরজা খুলিনি। পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ আমার কথা শুনলেও কিছু করেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE