প্রাক্তন বিচারপতি বি জি কোলসে-পাটিল এবং পি বি সবন্ত
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পুণেতে ‘এলগার পরিষদে’র সংগঠক কারা? ভীমা কোরেগাঁওয়ে পরবর্তী হিংসার জন্য ওই সম্মেলনকে দায়ী করে পুণে পুলিশ আদালতে দাবি করেছে, এ কাজ মাওবাদীদের।
সেই দাবি উড়িয়ে দুই প্রাক্তন বিচারপতি পি বি সবন্ত ও বিচারপতি বি জি কোলসে-পাটিল এক ওয়েবসাইটকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, ওই সম্মেলনের আয়োজক তাঁরা দু’জনই। ওই সম্মেলনের জন্য অর্থও তাঁরাই জোগাড় করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ভীমা কোরেগাঁও হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে যে বিশিষ্টজনদের গ্রেফতার করা হয়েছে, কয়েক জনের সঙ্গে তাঁদের পরিচয়ই নেই বলে জানান প্রাক্তন বিচারপতিরা।
বিচারপতি সবন্ত ১৯৯৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন। ২০০২ সালে গুজরাত হিংসার ঘটনা যে তিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তদন্ত করেছিলেন, বিচারপতি সবন্ত তাঁদের অন্যতম। ওই রিপোর্টে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল। অবসরের পর থেকেই ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যুক্ত তিনি। দরিদ্র মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলন করবেন বলেই অবসর নিয়েছিলেন বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি কোলসে-পাটিল। তাঁর কথায়, ‘‘বহুবার প্রকাশ্যে বলেছি এলগার পরিষদের সংগঠক আমরা দু’জনই। আমরা বামপন্থী। সাম্প্রদায়িক মনোভাব এবং হিংসার প্রতিবাদে আমরা এই সম্মেলনের আয়োজন করি। ২০১৫ সালেও আমরা পুণেতেই সম্মেলন করেছিলাম, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। আরএসএস মুক্ত ভারতের পক্ষে বলেছিলাম আমরা। আমাদের উদ্দেশ্য, দেশ ও সংবিধান রক্ষা করা।’’ প্রসঙ্গত, এলগার শব্দের অর্থ প্রকাশ্য ঘোষণা বা বিবৃতি।
পুণে পুলিশ দু’দফায় বিশিষ্টজনদের গ্রেফতার করলেও তাঁদের বাড়িতে এখনও অভিযান চালায়নি। দুই প্রাক্তন বিচারপতির কথায়, ‘‘পুলিশ আমাদের ধরলে তো প্রমাণই হয়ে যাবে যে ওই সম্মেলন মাওবাদীরা করেননি। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে আমাদের পরিচয়ই নেই। তাঁরা সমমনস্ক এবং যুক্তিবাদী।’’ পুণে পুলিশের দাবি, মোদী সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে ফাসিস্ত-বিরোধী ফ্রন্ট। ধৃত বিশিষ্টজনেরা ওই ফ্রন্টেরই সদস্য। দুই প্রাক্তন বিচারপতির বক্তব্য, ‘‘এতেই তো স্পষ্ট যে ওরা ফাসিস্ত শক্তিকেই ক্ষমতায় রাখতে চায়। আর পুলিশ ষড়যন্ত্রের কথা বলছে। আমরাও বলছি, ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে তা বিরোধী মতকে গলা টিপে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র এবং তা করছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার।’’ তাঁদের প্রশ্ন, পুণে পুলিশ সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করছে অথচ ভীমা কোরেগাঁও হিংসার জন্য যে দুই হিন্দুত্ববাদী নেতা মিলিন্দ একবত এবং সম্ভাজি বিড়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের গায়ে হাত পড়েনি। কেন? অথচ সুপ্রিম কোর্টও তাঁদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিল।
বিচারপতি সবন্ত বলেন, ‘‘ইন্দিরা গাঁধী আইনের ধারা প্রয়োগ করে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। আর যারা এখন ধরপাকড় করাচ্ছে, তারা জরুরি অবস্থার প্রতিবাদ করেছিল। ফলে এখন তারা ঘুরপথে সেই চেষ্টা করছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy