Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National news

পাক ডেরা থেকে বেঁচে ফেরার গল্প শোনালেন কার্গিল হিরো

দেশের জন্য প্রাণ দিতে সদা প্রস্তুত তিনি। দেশের হয়ে লড়াই করেছেন কার্গিলের যুদ্ধেও। শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়ে সহ্য করেছিলেন অমানুষিক অত্যাচার। ১৭ বছর পরেও যে বিভীষিকা তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কে নচিকেতা। —ফাইল চিত্র।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কে নচিকেতা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ১১:৪৪
Share: Save:

দেশের জন্য প্রাণ দিতে সদা প্রস্তুত তিনি। দেশের হয়ে লড়াই করেছেন কার্গিলের যুদ্ধেও। শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়ে সহ্য করেছিলেন অমানুষিক অত্যাচার। ১৭ বছর পরেও যে বিভীষিকা তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। মৃত্যুর থেকেও ভয়ানক সে দিনের কথা বলতে গিয়ে আজও যেন গলাটা কেঁপে যাচ্ছিল কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম ‘নায়ক’ মিগ২৭ এর পাইলট কে নচিকেতার। আফসোস একটাই, পিঠের চোটের জন্য যুদ্ধবিমানের ককপিটে আর বসা হয় না তাঁর। কার্গিল হিরো নচিকেতা বর্তমানে ভারতীয় বায়ু সেনার পণ্যপরিবাহী বিমান চালান। তাঁর মুখ থেকেই শোনা গেল সে দিনের কথা।

সালটা ১৯৯৯। তখন সবে ভোর হয়েছে। নির্দেশ এল পাক অধিকৃত অঞ্চলে বোমা বর্ষণের। নির্ভয়ে যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়ে গেলেন সীমানার ওপারে। ১৭ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করলেন পাক অধিকৃত কার্গিল ভূখণ্ডে। পাক সেনার পাল্টা আক্রমণে তাঁর বিমানের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। মাঝ আকাশেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। নামতে শুরু করে বিমান। অনেক চেষ্টার পর কিছু ক্ষণের জন্য ইঞ্জিন চালু হয়েও ফের বন্ধ হয়ে যায়। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। মরিয়া চেষ্টায় প্যারাসুট নিয়ে যুদ্ধবিমানের ককপিট থেকে লাফ দেন শূন্যে। কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে প্যারাসুট জড়িয়ে গিয়ে কাছেই একটি জায়গায় পড়ে যান। চারদিক তখন কুয়াশায় ঢাকা। তার উপর পড়ে গিয়ে পিঠে প্রচণ্ড চোট পান নচিকেতা। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও ছিল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন, কুয়াশা ঠেলে কয়েক জন পাক সেনা তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছেন। পিস্তল বের করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ, পাক সেনার হাতে তখন একে-৫৬এস। এই অত্যাধুনিক রাইফেলের কাছে তাঁর পিস্তল ছিল নস্যি। পিস্তলের গুলির সঙ্গে ক্রমশ তাঁর সমস্ত শক্তিও ফুরিয়ে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ঘিরে ফেলে পাক সেনা। শুরু হয় অত্যাচার। বেধড়ক মার। পাক সেনার সেই হিংস্রতার কাছে হার মানতে বাধ্য হন তিনি। কিছু পরে এক সিনিয়র অফিসার এসে তাঁকে নিজেদের ডেরায় নিয়ে যান। নির্যাতন চালিয়ে তাঁর কাছ থেকে ভারত সেনার পরবর্তী পরিকল্পনা জানার মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকেন তাঁরা। এই ভাবেই কেটে যায় ৮টি দিন। বাঁচার আশা, দেশে ফেরার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। অপেক্ষা শুধু ছিল মৃত্যুর। ঠিক তখনই বার্তা আসে, তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ভারত সরকারের অদম্য চেষ্টায় মুক্তি পান নচিকেতা। ভারতে ফিরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে এখন সুখেই আছেন নচিকেতা। তবে মনটা আজও পড়ে রয়েছে যুদ্ধবিমানের ককপিটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pilot kargil fight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE