Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘চেয়ে দেখি, খসে পড়লেন’  

ভোর সাড়ে তিনটে। ধুপধাপ শব্দ হচ্ছিল। ঘুম-চোখে জানলার দিকে তাকাতেই দেখি গোটা আকাশটাই লাল। দরজায় ধাক্কাটা ক্রমে প্রবল হচ্ছে। ভেসে আসছে আর্তনাদ।

পুড়ে খাক: করোলবাগের হোটেলের ছাদের অংশ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

পুড়ে খাক: করোলবাগের হোটেলের ছাদের অংশ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

বাদল রায়
নয়াদিল্লির করোলবাগের বাসিন্দা  শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

ভোর সাড়ে তিনটে। ধুপধাপ শব্দ হচ্ছিল। ঘুম-চোখে জানলার দিকে তাকাতেই দেখি গোটা আকাশটাই লাল। দরজায় ধাক্কাটা ক্রমে প্রবল হচ্ছে। ভেসে আসছে আর্তনাদ।

জানলা খুলে মুখ বাড়াতেই দেখি কয়েক হাত দূরে অর্পিত প্যালেস দাউদাউ করে জ্বলছে। একেবারে তড়িঘড়ি নীচে নামলাম। প্রতিবেশী জানালেন, আগুনের হলকা লাগছে আশেপাশের বাড়িতে। সকলকে বাড়ি ছাড়তে হবে। কথাটা বলেই অন্য প্রতিবেশীদের জাগাতে ছুটলেন তিনি। ততক্ষণে দুদ্দাড় করে নেমে এসেছেন বাড়ির সকলে। জড়ো হয়েেছেন আশপাশের বাড়ির লোকজনও।

হোটেলের দিকে একটু এগোতেই দেখি আগুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চারতলার বারান্দা দিয়ে ঝুলছেন এক ব্যক্তি। খুব বেশি হলে এক মিনিট। নীচে খসে পড়লেন। চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। পরে জেনেছি ওই ভদ্রলোক চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা। আয়কর বিভাগের ওই কর্মী প্রতি সপ্তাহে ওই হোটেলে এসে থাকতেন। পরে শুনলাম আরও বেশ কয়েক জন এ ভাবে ঝাঁপ দিয়েছেন। এক বিদেশি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। বাকিদের সেই সৌভাগ্য হয়নি। পাঁচতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রাজস্ব বিভাগের অফিসার সুরেশ কুমার, হোটেলের এক কর্মীও।

পঁচিশ বছর ধরে চলছে হোটেলটি। কত পুজোর বৈঠক, বাঙালি সাংসদেরা পাড়ায় এলে, ওই হোটেলে বসেছে আড্ডা। প্রশংসা করেছি এই হোটেলের কাঠের কাজের। শুনেছি সেই কাঠের কাজের জন্যই শর্ট সার্কিটের আগুন দ্রুত গ্রাস করেছে হোটেলকে।

শুনছি একের পর এক খুঁত বেরোতে শুরু করেছে এ বার। দমকল এসেছে প্রায় ৪৫ মিনিট পরে। তা-ও দমকলের আনা প্রথম সিঁড়ি কাজ করেনি। আরও পরে দ্বিতীয় সিঁড়ির সাহায্যে বার করে আনা হয় প্রায় কুড়ি জনকে। প্রথম সিঁড়িটায় কাজ হলে হয়তো আরও ক’জন বাঁচতেন... মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল শুনলাম পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যাঁদের গাফিলতিতে এতগুলি প্রাণ গেল, তাদের শাস্তি হবে তো? হলেও কি পূরণ হবে স্বজন হারানোর ক্ষতি?

একই প্রশ্ন সোমশেখরের। কেরলের লোক। কাল রাতে বৃন্দাবন থেকে ফিরেছিলেন। আজ হরিদ্বার যাওয়ার কথা ছিল। তিনি হারিয়েছেন বোন (৫৩), মা (৮৪) ও ভাইকে (৫৯)। গাজ়িয়াবাদে এক বিয়েবাড়িতে এসে হোটেলটিতে উঠেছিলেন। বললেন, ‘‘আমরা তখন তৈরি হচ্ছি। হঠাৎ আলো চলে যায়। ওঁরা জেনারেটর চালিয়ে দেয়। তখনই প্রথম পোড়া পোড়া গন্ধটা পাই। বোনই প্রথম আগুন লেগেছে বলে সতর্ক করে। বিপদ বুঝে ওদের রেখে জানলা খুলতে ছুটে যাই। ফিরতে পারলাম না।’’ টিভি দেখাচ্ছে, মায়ানমার থেকে এসেছিল আট জনের একটি দল। তাঁদের মধ্যেও দুই মহিলা-সহ তিন জন আর ফিরবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karol Bag Fire Delhi Fire Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE