Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধে স্বাস্থ্য ফিরছে দেশের, গবেষণায় খড়্গপুর আইআইটি

দেশের প্রায় সাত হাজার ব্লকে সমীক্ষা চালিয়েছেন আইআইটির গবেষকেরা।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধ করায় ভারতীয় উপমহাদেশের জনস্বাস্থ্য কতটা ফিরছে, তা গবেষণা করে জানল খড়্গপুর আইআইটি। দেখা গেল, যেখানেই প্রকাশ্যে শৌচকাজ বন্ধ করার জন্য প্রচার চালানো হয়েছে কিংবা বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার বানিয়ে দিয়ে বাসিন্দাদের তা ব্যবহার করতে জোর করা হয়েছে, সেখানেই রোগভোগ কমেছে।

নেচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে আইআইটি-র ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের গবেষকেরা দেখিয়েছেন, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে মাটির নীচ থেকে তোলা জলে ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। এর ফলে কমেছে আন্ত্রিক সংক্রমণ এবং ওই সংক্রমণে মৃতের সংখ্যাও। উল্লেখ্য, এই ব্যক্টিরিয়ার জন্য সাধারণ আন্ত্রিক পর্যন্ত মারাত্মক আকার নিতে পারে ও কখনও-কখনও আক্রান্তের মৃত্যুও হয়।

দেশের প্রায় সাত হাজার ব্লকে সমীক্ষা চালিয়েছেন আইআইটির গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, ২০০২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে যেমন পানীয় জলে ফিক্যাল ব্যাক্টিরিয়ার পরিমাণ কমেছে, তেমনই কমেছে আন্ত্রিকের প্রকোপ। খড়্গপুর আইআইটির ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গত ৩০ বছরে প্রতি বছর ৩.০৯ শতাংশ হারে পানীয় জলে ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার পরিমাণ কমেছে। আন্ত্রিক সংক্রমণের হারও কমেছে বছরে ২.৬৯ শতাংশ হারে।

আরও পড়ুন: ব্যাঙ পরিবারে নতুন সদস্য, বাংলার গেছো ব্যাঙ

আইআইটির গবেষণায় ব্লকগুলিতে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন সমীক্ষকেরা। উন্নত, উন্নয়নশীল, কম উন্নত এবং তুলনায় পিছিয়ে পড়া। দেখা গিয়েছে শেষ দু’টি ব্লকের একটা বড় অংশের মানুষ এখনও খোলা জায়গায় শৌচকার্য করেন। সেখানে পানীয় জলে ফিক্যাল ব্যাক্টিরিয়ার পরিমাণ তুলনায় কমেনি। কমেনি আন্ত্রিকের হারও। তবে যেখানেই প্রশাসনের তরফে ব্যাপক ভাবে প্রচার চালানো হয়েছে কিংবা বাড়ি বাড়ি শৌচাগার বানিয়ে দিয়ে মানুষকে তা ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়েছে, সেখানেই কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা একেবারে কমে গিয়েছে। আন্ত্রিক সংক্রমণের হারও কমেছে দ্রুত।

জম্মু-কাশ্মীরের কোনও ব্লক এই সমীক্ষার আওতায় নেই। ঠাঁই পায়নি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি ব্লক। এই সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা দেশের অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক ভাল। পানীয় জলে ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার পরিমাণের নিরিখে কেরল, মহারাষ্ট্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান তালিকায় উপরের দিকে। একমাত্র উত্তর মালদহ, দুই দিনাজপুর এবং দক্ষিণ জলপাইগুড়ির কয়েকটি ব্লক উন্নয়নের নিরিখে শতকরা ৫০ ভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি।

এই গবেষণার প্রধান আইআইটি খড়্গপুরের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত, যে সব ব্লকে আমরা সমীক্ষা চালিয়েছিলাম, সেখানে পানীয় জলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ এবং আন্ত্রিকের প্রকোপ দু’টোই তলানিতে এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ জনস্বাস্থ্যের ‘স্বাস্থ্য’ ভাল হয়েছে।’’

আইআইটি খড়্গপুরের দাবি, দেশে এই ধরনের সমীক্ষা তারাই প্রথম করেছে। আইআইটি খড়্গপুর সমীক্ষায় প্রধান ভূমিকা নিলেও তাদের সহযোগিতা করেছে আইআইটি কানপুরের অর্থনীতি বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এই গবেষণার অন্য দুই সঙ্গী আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এনওএএ) এবং নাসা।

অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘নগরায়ণের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের হাল ফেরানোর সম্পর্ক আমরা খুঁজে পেয়েছি। বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার তৈরির সুযোগ করে দেওয়ার সঙ্গেও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া ও আন্ত্রিক সংক্রমণের।’’ এই পরিবেশ বিজ্ঞানী আরও বলেন, ‘‘আগামী সমীক্ষায় আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের এই বিষয়টির সম্পর্ক খুঁজে বার করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Open Defecation Kharagpur IIT Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE