নিস্তার পায়নি শিশুও। মঙ্গলবার জম্মুতে পিটিআইয়ের ছবি।
সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আজ চরমে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া জম্মু-কাশ্মীরের সাম্বা জেলার রামগড়ে ও নিয়ন্ত্রণরেখার পাশে রাজৌরিতে পাক সেনার আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে আট জন গ্রামবাসীর। এঁদের অধিকাংশই শিশু ও মহিলা। কোনও একটি দিনে পাক বাহিনীর হামলায় এত জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা গত দু’দশকে ঘটেনি। পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। তাতে দু’জন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে। হামলার জবাব দিতে গিয়ে রামগড় ও আরনিয়ায় আন্তর্জাতিক সীমান্তের ও-পাশে ১৪টি পাক চৌকি ধ্বংস করে দিয়েছে বিএসএফ। উত্তেজনার মধ্যে এ দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত লাগোয়া জম্মু-কাশ্মীরের স্কুলগুলিও।
পাক সীমান্তের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে সকাল থেকেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় দিল্লিতে। বৈঠকে বসেন রাজনাথ সিংহ, মনোহর পর্রীকর, অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগরা। তত ক্ষণে কূটনীতির পথে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে পাকিস্তানও। সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় এতগুলি ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু কূটনৈতিক স্তরে তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বুঝেই পাল্টা চাল দিয়েছে ইসলামাবাদ। নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসলামাবাদে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার জে পি সিংহকে তলব করেছিল পাক বিদেশ মন্ত্রক। ইসলামাবাদের অভিযোগ, গত কাল নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নিকিয়াল ও জানড্রট সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণে ছয় জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এক জন মহিলাও রয়েছেন। নয়াদিল্লি বারবার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং ও-পারের গ্রামগুলিকে নিশানা করছে বলে পাকিস্তানের তরফে ক্ষোভ জানানো হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরে ভারত-পাক সীমান্ত লাগোয়া রামগড় গ্রামটিতে মঙ্গলবার সকালটাই ছিল অন্যরকম। ভোর থেকেই শুরু হয়েছিল গোলাগুলি। পরের পর গুলি, গ্রামের দিকে উড়ে আসছিল মর্টার। পাক বাহিনীর গোলায় ছারখার হয়ে গিয়েছে বসতি। প্রাণভয়ে পালাতে চেয়েছিলেন মানুষ। কিন্তু বিপর্যয় রোখা যায়নি। ও-পার থেকে আসা পাকিস্তানি গোলা ছিনিয়ে নিয়েছে পাঁচটি প্রাণ। তার মধ্যে রয়েছে পাঁচ, সাত বছরের শিশুরাও। আহত কুড়ি জন। রামগড়ে পাক বাহিনীর চরম আঘাতের মধ্যেই হৃদ্রোগে মৃত্যু হয়েছে এক জন গ্রামবাসীর। সাম্বা জেলার রামগড় ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মাঞ্জাকোট এলাকায় জনবসতিকে নিশানা করেছিল পাক বাহিনী। সেখানেও পাক বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে দু’জন মহিলার।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া গ্রামগুলি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাসিন্দাদের। কিন্তু যুদ্ধের উত্তেজনা শুরু হলেও সীমান্তের মানুষ যে ভিটেমাটি আঁকড়েই থাকতে চান, একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা তা-ই বুঝিয়ে দিচ্ছে। ও-পার থেকে আসা গোলাগুলিতে এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আহত প্রায় ৪০ জন।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ৬০ বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভেঙেছে পাকিস্তান। শুধু ভারতীয় বাহিনীর চৌকিগুলিতে আক্রমণই নয়, পাকিস্তান বেশ কিছু দিন থেকেই সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া গ্রামগুলিকে নিশানা করতে শুরু করেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় আজও বেশ কিছু গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া ১৭৪টি সরকারি-বেসরকারি স্কুলও আজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত চার মাস ধরে জম্মু-কাশ্মীরের স্কুলগুলি বন্ধ থাকায় এবং একের পর এক স্কুল পোড়ানোর ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। হুরিয়ত নেতারা এমনকী যার মৃত্যুকে ঘিরে উপত্যকায় এত অশান্তি, সেই হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির বাবা মুজফ্ফর ওয়ানি পর্যন্ত স্কুল পোড়ানোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার পরেও সেই ষড়যন্ত্র থামবে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় দিল্লি। তবে এরই মধ্যে আজ নিতান্ত বাধ্য হয়েই সীমান্ত লাগোয়া স্কুলগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy