Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হুঁশিয়ারি দিয়ে গ্রামে ফিরলেন চাষিরা

‘অহিংসার’ গাঁধী জয়ন্তীতেই দিল্লিতে ঢুকতে গিয়ে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামানের মুখে পড়তে হয়েছিল হাজার কুড়ি কৃষককে। জনা পনেরো আহত কৃষককে হাসপাতালেও পাঠাতে হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকেও সব দাবি মানা না-হওয়ায় কৃষকরা স্থির করেন, দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানাতেই রাত কাটাবেন। কিন্তু সময় চায় সরকার। 

— ফাইল চিত্র।

— ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩৯
Share: Save:

ফুটপাতেই রান্নাবান্না সেরে খেয়েদেয়ে সবে ট্র্যাক্টরে ঘুমোতে গিয়েছেন কৃষকরা। কয়েক জন জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

রাত দেড়টায় পুলিশের হঠাৎ ফরমান এল। ব্যারিকেড তুলে দেওয়া হচ্ছে। দিল্লির কিসান ঘাট ছুঁয়ে এখনই যে-যাঁর গ্রামে ফিরুন সকলে।

‘অহিংসার’ গাঁধী জয়ন্তীতেই দিল্লিতে ঢুকতে গিয়ে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামানের মুখে পড়তে হয়েছিল হাজার কুড়ি কৃষককে। জনা পনেরো আহত কৃষককে হাসপাতালেও পাঠাতে হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকেও সব দাবি মানা না-হওয়ায় কৃষকরা স্থির করেন, দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানাতেই রাত কাটাবেন। কিন্তু সময় চায় সরকার।

আপাতত তাই কিসান-ঘাট হয়ে ফেরত গিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নরেশ টিকায়েত বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করেন, সরকারকে দিন পনেরো সময় দেওয়া হোক। তাতেও কোনও সুরাহা না-হলে ফের হবে দিল্লি অভিযান। অতএব রাতেই গন্তব্য কিসান ঘাট। ভোরের আলো ফোটার আগেই কৃষকদের দিল্লির গণ্ডি পার করিয়ে দেয় পুলিশ। কয়েক জন তবুও দুপুর পর্যন্ত বসে ছিলেন কিসান ঘাটে। তাঁদের ক্ষোভ, কৃষকদের পুরো জঙ্গি বানিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। এর মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে।

কৃষকরা দিল্লি ছাড়ায় সরকারের স্বস্তি তো হল। প্রধানমন্ত্রী তড়িঘড়ি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে রবিশস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও বাড়ালেন। সরকারের দাবি, এর ফলে কৃষকেরা আরও ৬২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা বাড়তি হাতে পাবেন। রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহকে সামনে এনে ‘কৃষক-দরদি’ হওয়ার চেষ্টাও চালান মোদী। কিন্তু কৃষকদের মূল দু’টি দাবি— ঋণ মাফ এবং ফসলের দাম চাষের সার্বিক খরচের দেড় গুণ করার সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গেল কেন্দ্র। মন্ত্রীদের জবাব, একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটিই তা দেখবে।

গত কাল মহারাষ্ট্রে ছিলেন রাহুল গাঁধী। সেখান থেকেই ভূপেন্দ্র সিংহ হুডাকে আজ কৃষকদের বিক্ষোভে শামিল হতে বলেন। রাতে কংগ্রেসের কৃষক নেতা হরেন্দ্র মালিকও পৌঁছন। ঝামেলার আশঙ্কায় রাতে হরেন্দ্রর সামনেই কৃষকদের জন্য দিল্লির দরজা খুলে দেওয়া হয়। হরেন্দ্র আজ বলেন, ‘‘নরেশ টিকায়েত আসলে ভালমানুষ। সরকার চাপ দিয়ে এই কাজ করাল। কিন্তু কংগ্রেসও এ বার কৃষকদের নিয়ে বড় আন্দোলনে নামবে।’’ দলের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও বলেন, ‘‘মিথ্যার সর্দার নরেন্দ্র মোদী আজ রবিশস্যের যে দাম ঘোষণা করেছেন, সেটি করারই ছিল। খরিফের পরে এখন এমনিতেই রবিশস্যের বর্ধিত দাম ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু এই দাম চুকোবে পরের সরকার। রাতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৃষকদের ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি। যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ’ পুরস্কার নিতে পারেন। নরেন্দ্র মোদী আসলে ‘চ্যাম্পিয়ন অব অনর্থ’।’’

কংগ্রেসের মতে, কৃষকদের মোহভঙ্গ হয়েছে। এ বার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেরত গিয়েছেন তাঁরা। পরের বার যখন আসবেন, মোদীকে গদিচ্যুত করেই শান্ত হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE