—ফাইল চিত্র।
সংসদের প্রথম দিনেই যখন বিজেপি-র প্রবীণ নেতা শান্তা কুমারের দলের ভিতরের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা পত্রবোমা বিজেপি-কে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলল, সেই সময় এনডিএ-র মঞ্চ থেকে প্রায় নিঃশব্দেই বিদায় হল দলের আর এক শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর গতকালই প্রথম এনডিএ-র বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের বাসভবনে এই বৈঠকের আগে বিজেপি-র সংসদীয় দলের বৈঠকও হয়। সেখানে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীর মতো দলের ব্রাত্য নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পর যখন এনডিএ-র বৈঠক হয়, সেই সময় সেখানে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি আডবাণীকে। এমনকী, সংসদীয় দলের বৈঠক ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আডবাণীকে থেকে যাওয়ার অনুরোধও করা হয়নি।
অথচ অমিত শাহ দলের সভাপতি হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত এনডিএ নতুন করে ঢেলে সাজা হয়নি। খাতায়কলমে এখনও এনডিএ-র চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর অসুস্থতার পর থেকে আডবাণীই বরাবর এনডিএ-র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। বিরোধী দলে থাকার সময় এনডিএ-র বৈঠকগুলি হত আডবাণীর বাড়িতেই। আজ পর্যন্ত সংসদ ভবনে যে ঘরটিতে আডবাণী বসেন, সেটি বাজপেয়ীরই এনডিএ-র চেয়ারম্যান হিসেবে বরাদ্দ। মোদী ক্ষমতায় আসার পর আডবাণী বুঝতে পেরেছিলেন এনডিএ-র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি আর বেশি দিন থাকতে পারবেন না। তাই সেই ঘরের নেমপ্লেট খুলে নিজে সেখানে বসাও বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু সেটি নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় পরে দল তাঁকে সেখানে বসবার অনুরোধ করেন।
কিন্তু গতকাল যা ঘটল, তাতে স্পষ্ট, এনডিএ-র কাঠামো নতুন করে তৈরি না হলেও এই মঞ্চ থেকে বিদায় হল আডবাণীর। বিজেপি নেতারা অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। কিন্তু আডবাণী ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর লালকৃষ্ণ আডবাণীকে তো একেবারেই কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। গতকালের ঘটনা তারই অঙ্গমাত্র। কোনও ঘোষণা ছাড়াই তাঁকে ব্রাত্য করা হল। বিজেপিতে প্রবীণদের এমনিতেই অবজ্ঞা করা হচ্ছে। লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীদের নিয়ে যে পথপ্রদর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার একটি বৈঠকও এখনও পর্যন্ত হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই দলের প্রবীণদের ক্ষোভ থাকবেই। আজ শান্তা কুমারের মতো প্রবীণ নেতার থেকেও সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে বেরিয়ে এল।’’
হিমাচলের নেতা শান্তা কুমার দলের সভাপতি অমিত শাহকে চিঠি লিখে বলেছেন, যে ভাবে ব্যপম কাণ্ড হয়েছে, তাতে দলের মাথা ঝুঁকেছে। দলের এ ধরনের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি লোকপাল গঠন প্রয়োজন। এটি এথিক্স কমিটিতে পাঠানো দরকার, যাতে সরকারে থাকা নেতাদের উপর রাশ টানা সম্ভব হয়। সংসদের প্রথম দিনে এ হেন পত্রবোমা সামনে চলে আসার পর বিজেপি নেতারা আজ সকাল থেকেই উল্টে শান্তা কুমারের উপর হামলা করতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘কংগ্রেসের কু-প্রচারের ফাঁদে পড়েছেন দলের এই প্রবীণ নেতা। ভাল হত তিনি যদি হিমাচলের কংগ্রেস নেতা বীরভদ্র সিংহের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেন। তিনি চিঠি লিখেছেন অমিত শাহকে। ফলে অমিত শাহই এর জবাব দেবেন।’’ ইতিমধ্যেই হিমাচলে বিজেপি-র আর এক নেতা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী জয় প্রকাশ নাড্ডাকে দিয়ে শান্তা কুমারকে ‘শান্ত’ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতেও থামছেন না শান্তা কুমার। তিনি বলেন, ‘‘চিঠিতে লেখা সব বিষয়ের প্রসঙ্গে আমি এখনও অবিচল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিজেপি দল গড়ে উঠেছে। কিন্তু যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, সেটি বেদনাদায়ক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy