Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Pranab Mukherjee

অসুস্থ ‘মামাবাবু’, দুশ্চিন্তায় লাভপুর

মিরিটির বাড়িতে গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আছেন ৬৭ বছরের পরিচারিকা সাদেশ্বরী কোনাই। দিনরাত তাঁর ‘মামাবাবু’র (প্রণববাবুকে এই নামেই ডাকেন) জন্য প্রার্থনা চলছে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৬:৩৭
Share: Save:

সকাল থেকেই টিভির পর্দায় চোখ অথবা মোবাইলে নিউজ আপডেটে নজর লাভপুরের পরোটা গ্রামের বাসিন্দাদের। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁদের বড় আপনজন। তাঁর আরোগ্য কামনায় অনেকেই উপোস করে পুজোপাঠ করছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই গ্রামের বাড়ি মিরিটি সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় হোমযজ্ঞও শুরু হয়েছে।

মিরিটির বাড়িতে গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আছেন ৬৭ বছরের পরিচারিকা সাদেশ্বরী কোনাই। দিনরাত তাঁর ‘মামাবাবু’র (প্রণববাবুকে এই নামেই ডাকেন) জন্য প্রার্থনা চলছে। বলেন, ‘‘৫৫ বছর হয়ে গেল তো এই বাড়িতে। মামাবাবু পুজোয় বাড়ি এসে প্রথমেই খোঁজ নেন কেমন আছি আমি। আর সেই মানুষটাই এখন কেমন আছেন তা ঠিক মতো বুঝতেও পারছি না। সুস্থ হন তাড়াতাড়ি, এটাই চাইছি মনেপ্রাণে।’’

টানা ২৩ বছর প্রণববাবুর বাড়িতে কেয়ারটেকার ছিলেন গৌতম সরকার এবং তার স্ত্রী রঞ্জুদেবী। প্রণববাবুর আরোগ্য কামনায় গ্রামের মন্দিরে কালীপুজো দেওয়ার জন্য এ দিন সকাল থেকে তাঁরা উপোস করেছেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘উনি আমাদের অভিভাবক। বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে যেমন দুশ্চিন্তা হয়, ওঁর জন্যও তাই হচ্ছে।’’ রঞ্জুদেবীও বলেন, ‘‘কাছ থেকে দেখেছি তো, এমন বড় মাপের মানুষকে কত বার লিকার চা আর দুধ গরম করে খাইয়েছি। উনি সুস্থ হলে শান্তি পাব।’’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি, এই ব্যস্ত ও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনেও ফি বছর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক দুর্গাপুজোয় ষষ্ঠীর বিকেলে এসেছেন তিনি। নিজে চণ্ডীপাঠ করেছেন। ষষ্ঠীর বিকেলে কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ডের কাছে মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামলে তাঁকে দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ বাঁশের ঘেরাটোপের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। প্রতি নমস্কারের পর্ব মিটলেই সোজা চলে যেতেন পরোটা গ্রামে দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ওই বাড়ির সামনেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। মাস কয়েক আগেই প্রণববাবুর দিদি প্রয়াত হয়েছেন।

কীর্ণাহার নাগডিহিপাড়ার নার্স তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়, লাভপুরের সুদেষ্ণা রায় গোস্বামীদেরও মন অশান্ত। ২০১৫ সালে দিল্লিতে প্রণববাবুর হাত থেকে ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল অ্যাওয়ার্ড ফর লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার নিয়েছিলেন তৃপ্তিদেবী। তাঁর বাবা প্রয়াত নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রণববাবুর সহপাঠী। সেই সুবাদে শৈশব থেকেই প্রণববাবুকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তাঁর। আর ১৯৯২ সালে প্রণববাবুর হাত থেকে চতুর্থ শ্রেণির মেধাবৃত্তি পুরস্কার নিয়েছিলেন সুদেষ্ণাদেবী। দু’জনেই বলেন, ‘‘সেই দিনটার কথা মনে পড়লেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ওঁর মতো মানুষের পা ছোঁয়ার সুযোগ হয়েছিল বলে নিজেদের সৌভাগ্যবতী মনে হয়। তাঁর অসুস্থতার খবর শোনার পর থেকেই মন ভাল নেই। প্রার্থনা করছি প্রতিনিয়ত।’’

স্থানীয় জুবুটিয়া জপেশ্বর শিব মন্দিরে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী মহামৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞ। তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ চট্টরাজ, প্রিয়রঞ্জন ঘোষরা বলেন, ‘‘নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এমন কি ভারতরত্ন পাওয়ার সময়ও প্রণববাবুর মঙ্গল কামনায় এই পুজো দেওয়া হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pranab Mukherjee Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE