Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পশুখাদ্য মামলায় ফের জেল লালুর

পৌনে দুটো নাগাদ বিচারক এস এস প্রসাদ জানিয়ে দিলেন, চাইবাসা ট্রেজারির ৩৩.৬৭ কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের মামলায় লালুপ্রসাদের পাঁচ বছরের জেল ও দশ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

উদ্বিগ্ন: তখনও সাজা ঘোষণা হয়নি। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আনা হচ্ছে লালুপ্রসাদকে। বুধবার রাঁচীতে। ছবি: পিটিআই।

উদ্বিগ্ন: তখনও সাজা ঘোষণা হয়নি। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আনা হচ্ছে লালুপ্রসাদকে। বুধবার রাঁচীতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচী ও পটনা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

সকাল এগারোটায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক এস এস প্রসাদ জানিয়েছেন, আজ দু’টোর মধ্যেই তিনি সাজাও ঘোষণা করবেন। এই ফাঁকে, জেলবন্দি লালু এজলাস থেকে বাইরে এসে পুলিশি প্রহরায় গেলেন আদালত চত্বরেরই এক চায়ের দোকানে। সেখানে প্রথমে জল খেলেন। তারপর চা। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হয়ে ভেতরে ভেতরে যে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন তা তাঁর শরীরি ভাষায় স্পষ্ট।

পৌনে দুটো নাগাদ বিচারক এস এস প্রসাদ জানিয়ে দিলেন, চাইবাসা ট্রেজারির ৩৩.৬৭ কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের মামলায় লালুপ্রসাদের পাঁচ বছরের জেল ও দশ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। শুধু লালুই নন, চাইবাসা ট্রেজারির ৩৩.৬৭ কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের মামলায় ৫৬ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৫০ জনই দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা পেয়েছেন আজ। এর মধ্যে রয়েছেন লালুর পূর্বসূরি বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, জগন্নাথ মিশ্র। তাঁরও পাঁচ বছরের জেল ও দশ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। চার বছর জেল হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যসচিব তথা পশ্চিম সিংভূমের তৎকালীন জেলাশাসক সজল চক্রবর্তীরও।

সকল অভিযুক্তই আদালতে হাজির থাকলেও হাজির থাকতে পারেননি জগন্নাথবাবু। গত সোমবারই অশীতিপর নেতার স্ত্রী বীণা দেবী প্রয়াত হয়েছেন। চাইবাসা ট্রেজারির আর এক মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে জামিনে মুক্ত আছেন। তবে এদিন তাঁর আইনজীবী আদালতে জগন্নাথবাবুর পত্নী-বিয়োগের কথা জানিয়ে বলেন, সে কারণেই তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। তবে তিন বছর বা তার কম সাজা হলে এই আদালত থেকেই জামিন পেতে পারতেন জগন্নাথবাবু। কিন্তু পাঁচ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় সেই সুযোগ ছিল না। জামিনের জন্য তাঁকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে। এক আইনজীবী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জগন্নাথবাবুকে জেলে যেতে হতো। কিন্তু তিনি হাজির না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এ বার নিয়মমাফিক তাঁর বিরুদ্ধে আদালত থেকেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে যাবে। তাঁকে শীঘ্রই কোর্টে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির এই মামলায় জগন্নাথ মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিরোধী দলনেতা হিসেবে তিনি সে সময়ে অন্যতম প্রধান অভিযুক্তকে বহাল রাখার দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তদন্তে নেমে সেই চিঠি উদ্ধার করে সিবিআই। সেই চিঠির প্রেক্ষিতেই তাঁকে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মামলা চলার পর দু’টি মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তি পেয়েছেন। তার একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জামিনও পেয়েছেন।

সুপোল জেলার জমিদার পরিবারের ছেলে জগন্নাথ মিশ্র কলেজে পড়ার সময়ে বিনোবা ভাবের ‘ভূ-দান’ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। নিজের পরিবারের ১৪০০ একর জমির প্রায় ৯০ শতাংশ দান করে দিয়েছিলেন তিনি। সে কারণে এলাকায় জনপ্রিয়তা ছিল প্রচুর। পরে রাজনীতিতে এসে মুখ্যমন্ত্রীত্বের চেয়ারে বসতে বেশি সময় লাগেনি তাঁর। ক্ষমতায় থাকার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ কখনও ওঠেনি।

তাঁর ছেলে, বিহার বিজেপির নেতা নীতীশ মিশ্র এ দিন বলেন, ‘‘কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি।’’ তিনি জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করবেন তাঁরা। উল্লেখ্য, একই ভাবে লালু-তনয় তেজস্বীও জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে আবেদন জানাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE