জোহরা রশিদ শাহ। ফাইল চিত্র
বছর ঘুরে গিয়েছে। পারিবারিক টানাপড়েনে বাড়িতে টাকার আকাল সব সময়েই। কিন্তু আট বছরের ছোট্ট জোহরা এখনও বিশ্বাস করে, ‘পাপা’ এক দিন ফিরে আসবে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর ছিলেন জোহরার ‘পাপা’ আব্দুল রশিদ শাহ। ২০১৭ সালের ২৮ অগস্ট অনন্তনাগে নিরস্ত্র অবস্থায় তাঁকে গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। স্কুল ইউনিফর্ম পরে ‘পাপা’র শেষকৃত্যে গিয়েছিল জোহরা। তার চোখের জলে ভেসে যাওয়া মুখের ছবি দেখে জল এসেছিল বহু মানুষের চোখে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছিলেন, ‘‘জোহরার চোখের জল আমি সহ্য করতে পারছি না।’’
শ্রীনগরের শহরতলিতে মা নাসিমা আর বড় বোন বিলকিসের সঙ্গে থাকে জোহরা। ‘‘পাপা মারা যাওয়ার পরে জোহরাকে সামলানো যাচ্ছিল না। শেষে অনেক কষ্টে আমি আর মা বোঝাই, পাপা হজে গিয়েছে। ফিরে আসবে,’’ বলছে বিলকিস। জোহরা বলে, ‘‘এ বার আর পাপাকে কিছুতেই ছা়ড়ব না।’’
আব্দুল রশিদ চলে গিয়েছেন। আর্থিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে জট। প্রথম স্ত্রী নাসিমাকে ছেড়ে সগুফতাকে বিয়ে করেছিলেন আব্দুল রশিদ। কিন্তু নাসিমার সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের কথা আদালতে প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে নাসিমাকে মাসে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। রশিদের মৃত্যুর পরে সে টাকাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, পুলিশের ক্ষতিপূরণের দাবিদার সগুফতাও। তিনিও চার বছরের এক শিশুর মা। জানাচ্ছেন, তাঁরও সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কর্তাদের দাবি, নাসিমা ও সগুফতা সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে ক্ষতিপূরণদেওয়া কঠিন।
নাসিমা-বিলকিস-জোহরাদের দায়িত্ব আপাতত নিয়েছেন নাসিমার ভাইয়েরা। রশিদের মৃত্যুর পরেই জোহরার পড়াশোনার খরচ দেওয়ার দায় নিয়েছিলেন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। ‘‘গম্ভীর স্যার মাঝে মাঝে ফোন করে জোহরার খবর নেন। ওর স্কুলের ফি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন,’’ বলছে বিলকিস।
কাকে সবচেয়ে ভালবাসে জোহরা? আট বছরের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, ‘‘পাপা।’’ তার প্রিয় গান কি? ‘তকদির’ ছবির ‘পাপা জলদি আ জানা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy