Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দলের জন্মদিনে ডাকাই হল না আডবাণীকে

বেঙ্গালুরুতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল দেওয়াল লিখনটা। আজ দিল্লিতে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হল। দিল্লিতে থেকেও দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আমন্ত্রণই পেলেন না বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণী! মাত্র দু’দিন আগেই বেঙ্গালুরুতে শেষ হয়েছে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক। মঞ্চে থাকলেও দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের নিয়ম ভেঙে সেই বৈঠকে একটি কথাও বলেননি প্রবীণ এই নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

বেঙ্গালুরুতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল দেওয়াল লিখনটা। আজ দিল্লিতে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হল। দিল্লিতে থেকেও দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আমন্ত্রণই পেলেন না বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণী!

মাত্র দু’দিন আগেই বেঙ্গালুরুতে শেষ হয়েছে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক। মঞ্চে থাকলেও দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের নিয়ম ভেঙে সেই বৈঠকে একটি কথাও বলেননি প্রবীণ এই নেতা। বিজেপি সূত্রেরই বক্তব্য, বক্তব্য রাখার জন্য আডবাণীকে অনুরোধ-উপরোধও করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-সমেত বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব গোড়াতেই তা এক রকম ধামাচাপা দিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, অটল-আডবাণী যুগের পাকাপাকি অবসান হতে চলেছে বিজেপিতে। তার পরে আজ। যে আডবাণী দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, তাঁকে দিল্লিতে দলের সদর দফতরে মূল অনুষ্ঠানটিতে আমন্ত্রণই জানানো হল না! দলের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, আডবাণীর কাছে এসএমএস মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। যা শুনে আডবাণী-ঘনিষ্ঠ নেতাদের দাবি, সেটি একটি সাধারণ বার্তা, যেটি সব কর্মীর কাছে গিয়েছে। প্রতি বার যে ভাবে আডবাণীকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হতো, এ বারে সেটি হয়নি।

আডবাণী-হীন প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে বিজেপি সভাপতি হিসেবে অমিত শাহ যে বক্তৃতা দিলেন, তাতেও এই প্রবীণ নেতাকে নিয়ে দলের নতুন নেতৃত্বের মনোভাব ফুটে উঠেছে। বক্তৃতায় অটল-আডবাণীর নাম উল্লেখ না করলেও সে দিকেই ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘যা পুরনো ছিল, তা শ্রেষ্ঠ ছিল। কিন্তু যা নতুন শ্রেষ্ঠ, তাকে স্বীকার করেই এগোতে হবে। তার জন্য দলের পুনর্গঠন প্রয়োজন।’’ সভাপতির বক্তব্যের মানে বুঝতে অসুবিধা হয়নি উপস্থিত বিজেপি নেতাদের। তাঁদের মতে, অটল-আডবাণী যুগের শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার না করেও বুঝিয়ে দেওয়া হল যে, এটা মোদী-অমিত শাহের যুগ। এটা মেনে নিয়েই এ বার এগোতে হবে। সে জন্য অতীতের খোলনলচে বদলে নতুন করে গড়ে তোলা হবে দলকে।

আডবাণীকে নিয়ে একের পর এক বিতর্ক তৈরি হলেও তা নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন মোদী, অমিতরা। বরং নানা ভাবে বোঝাতে চাইছেন, আডবাণী-প্রসঙ্গকে তাঁরা উপেক্ষাই করছেন। অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘দলের নতুন নেতৃত্ব আডবাণীকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। আডবাণী যদি তাতে সন্তুষ্ট না হন, তা হলে দল কিন্তু তাঁর মন পাওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবে না! তিনি যদি কোনও ভাবে মনে করেন যে তাঁর সম্মানহানি হচ্ছে, তা হলে তার জন্য দায়ী তিনি নিজেই।’’

আডবাণী-বিতর্ককে যে তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না, তা বোঝাতে এ দিন প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে দলের সদর দফতরেই বসে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন অমিত শাহ। কর্মী-নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সময় পান না, এই অভিযোগ ওঠার পরে অমিত ঠিক করেছিলেন, মাসের প্রথম ও তৃতীয় সোমবার তিনি সকলের সঙ্গে দেখা করবেন। এমনকী ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে দলীয় দফতরের খোলা মাঠে রীতিমতো সামিয়ানা টাঙিয়ে বসেছিলেন তিনি।

আডবাণী-বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রেখে ভাবমূর্তি শোধরাতে সক্রিয় হয়েছিলেন মোদী নিজেও। ইস্টারের দিন বিচারপতিদের নৈশভোজ নিয়ে বিতর্কের ছায়ায় আজ নিজের বাসভবন সাত রেস কোর্সে ডেকে পাঠান একাধিক মুসলিম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। অজমের শরীফ, মুম্বই, বারাণসী, মধ্যপ্রদেশ, চেন্নাইয়ের বিভিন্ন দরগার প্রধানরা এ দিন দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে জানানো হয়, বর্ধিত মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের হুমকির মধ্যে সংখ্যালঘু নেতারা আরও ঐক্য বজায় রাখার উপর জোর দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE