Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কুকথা বলায় শাস্তির ঢল, কোর্টের তোপ, সক্রিয় কমিশন

নির্বাচনী প্রচারে কুকথা ও বিদ্বেষ ছড়ানো নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন হরপ্রীত মনসুখানি নামে এক ব্যক্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের তোপের পরে পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন। চলতি নির্বাচনে এই প্রথম ‘নখদন্ত’ বার করে প্রচারে বিদ্বেষমূলক ও কুকথা বলার শাস্তি হিসেবে নেতাদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন। প্রচারে ধর্ম টেনে আনায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ৩ দিন, মায়াবতীকে ২ দিন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধীকে ২ দিনের শাস্তি দিয়েছে তারা। জয়া প্রদা সম্পর্কে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের জন্য এসপি নেতা আজম খানকে ৩ দিনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ সর্বভারতীয় স্তরে নেতাদের উপরে এমন নিষেধাজ্ঞা নজিরবিহীন।

নির্বাচনী প্রচারে কুকথা ও বিদ্বেষ ছড়ানো নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন হরপ্রীত মনসুখানি নামে এক ব্যক্তি। আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কুকথা আটকানোর জন্য কমিশনের হাতে কী ক্ষমতা রয়েছে। কারণ শীর্ষ আদালতের মতে, এ ভাবে চোখ বুজে থাকতে পারে না কমিশন। জবাবে কমিশনের আইনজীবী জানান, এ বিষয়ে কমিশনের ক্ষমতা সীমিত। কারণ কমিশন ‘নখদন্তহীন’। বর্তমান নিয়ম মেনে প্রচারে ধর্মীয় বা জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ালে সংশ্লিষ্ট নেতাকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিস, তার পরে উত্তর এলে ওই ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তার পরেও ওই নেতা কুকথা বললে কমিশন এফআইআর করে ফৌজদারি মামলা শুরুর নির্দেশ দিতে পারে। কমিশনের আইনজীবী জানান, এর বাইরে কমিশনের হাতে আরও কোনও ক্ষমতা নেই। যা শুনে প্রধান বিচারপতি জানান, কমিশনের হাতে কী ক্ষমতা রয়েছে তা আদালত আগামিকাল বিচার করে দেখবে।

এর কিছু ক্ষণ পরেই নেতাদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি শুরু করে কমিশন। সম্প্রতি সহারনপুর ও বরেলীর জনসভায় মুসলিম ভোট ভাগাভাগি রুখতে বার্তা দিয়েছিলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। এক দিন পরেই যোগী জনসভা থেকে হিন্দু ভোট একজোট করতে বলেন, ‘‘যদি এসপি-কংগ্রেস-বিএসপি আলিতে বিশ্বাস করে তো আমরা বিশ্বাস রাখি বজরঙ্গবলীতে।’’ ভোটের পরে তাঁকে মুসলিমদের প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন মেনকা। নিষেধাজ্ঞার পরে মায়াবতী বলেন, ‘‘এই নির্দেশ সংবিধান-বিরোধী। কমিশনের নোটিসের জবাবে জানানো হয়েছিল যে, আমি জাত-ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাইনি। মুসলিমদের অনুরোধ করেছিলাম, সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভোট ভাগ না করে বিজেপিকে হারানোর জন্য ভোট দিতে। সেনার নামে ভোট চাওয়া সত্ত্বেও নরেন্দ্র-মোদী অমিত শাহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সাহস কমিশনের নেই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কংগ্রেস অবশ্য কমিশনের বেনজির পদক্ষেপে চনমনে। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানান, রাহুল গাঁধী অমেঠীর পাশাপাশি ওয়েনাড থেকে নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই কংগ্রেস সভাপতিকে আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাহুল ভয় পেয়েছেন। তাই অমেঠীর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ-প্রধান কেন্দ্র ছেড়ে সংখ্যালঘু-প্রধান কেন্দ্র থেকে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ অমিত শাহ বলেন, ‘‘ওয়েনাডে রাহুলবাবার শোভাযাত্রা দেখে বোঝা যাচ্ছে না, সেটি ভারতে না পাকিস্তানে বেরিয়েছে।’’ এই মন্তব্য নিয়ে কমিশনে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস।

মনু সিঙ্ঘভির কথায়, ‘‘শ্রীযুক্ত বিষ্টের (যোগী আদিত্যনাথের পূর্বাশ্রমের পদবি) কুকথার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ জানায় কংগ্রেস।’’ কংগ্রেস কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জানায়, নির্বাচনে ৪০ থেকে ৪৫ দিন প্রচারের সময় থাকে। কংগ্রেসের পরামর্শ ছিল, নেতার অপরাধের মাত্রা বিচার করে তাঁর কাছ থেকে প্রচারের দিন কেড়ে নেওয়াই হল সর্বোচ্চ শাস্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE