লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ স্যাম পিত্রোদা। কংগ্রেসের প্রবাসী মোর্চার প্রধান।
এখনও লোকসভা ভোটের শেষ লগ্নের প্রচার শুরু করেননি মোদী-অমিত শাহ। কিন্তু স্যাম পিত্রোদার মন্তব্য লুফে নিল শাসক দলের জুটি। টুইটারে প্রচার শুরু করলেন, ‘‘জনতা মাফ করবে না!’’ গোটা বিজেপি এখন সেই স্লোগান ধরে প্রচার শুরু করছে।
সার্জিকাল স্ট্রাইককে পুঁজি করে দেশভক্তির রেশটা অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছিল। মোদীকেও তাই ‘আমিও চৌকিদার’ প্রচারে জোর দিয়ে তার সঙ্গে খানিকটা জোর করেই ‘দেশভক্তি’ টানতে হচ্ছিল। সেই সময়ে আজ এক সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বায়ুসেনার সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়েই প্রশ্ন তুলে ফেললেন পিত্রোদা। বললেন, ‘‘৮ জন জঙ্গি (২৬/১১) ঢুকে হামলা চালাল, একটা গোটা দেশকে (পাকিস্তান) তার জন্য দায়ী করা যায় না। সে দেশের সব মানুষ সে জন্য দায়ী— আমি বিষয়টা এ ভাবে মনে করি না।’’ পুলওয়ামার জঙ্গি হানার পর ভারতের পাল্টা হামলাও সঠিক পদক্ষেপ বলে তিনি মনে করেন না। বলেন, ঠিক নয় বলেই মুম্বই হামলার পরে পাকিস্তানে পাল্টা বিমান হানা করা হয়নি। পিত্রোদার পাল্টা প্রশ্ন— ‘‘তিনশো জঙ্গি মারা গিয়েছে? এটা বিশ্বাস করার জন্য আরও প্রমাণ চাই।’’
সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব আগেই অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘পথের সুরক্ষা যাচাই না-করে আধা-সেনাদের বাসে পাঠানোটা ষড়যন্ত্র। সরকার বদলালে এর তদন্ত হবে। তখন বড় বড় লোক ফাঁসবেন!’’ এসপি-র এই নেতার মন্তব্যের পরেও বিজেপি নেতৃত্ব চুপ ছিলেন। হামলায় ৩০০ মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু গাঁধী পরিবারের ‘কাছের লোক’-এর মন্তব্য আসতেই রাহুল গাঁধীকে নিশানা করে তেড়েফুঁড়ে উঠলেন মোদী-শাহ।
টুইটে মোদী বললেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতির গুরু ও সব থেকে বিশ্বস্ত উপদেষ্টা সেনাকে অপমান করে পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের উৎসব পালন করতে শুরু করেছেন। এটা লজ্জার। কংগ্রেসের রাজকীয় পরিবারের অনুগামী এই সভাসদ স্বীকার করলেন, কংগ্রেস সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে চায়নি। কিন্তু আমরা সুদ সমেত করব। জঙ্গিরা যে ভাষায় বোঝে, তাতেই জবাব দেব।’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর আবেদন, ‘‘সব সহ-নাগরিককে আবেদন করছি, বিরোধী নেতাদের প্রশ্ন করুন। তাঁদের বলুন, ১৩০ কোটি ভারতীয় ক্ষমা করবে না। দেশ সেনার পাশে রয়েছে।’’
অমিত শাহ বললেন, ‘‘বিরোধীরা সেনাকে সন্দেহ করে, আমরা তাদের জন্য গর্ব করি। জঙ্গিদের জন্য ওদের প্রাণ কাঁদে, আমাদের কাঁদে তেরঙার জন্য। ভোটের ক্ষমতা দিয়ে কংগ্রেসের সংস্কৃতিতে সার্জিকাল স্ট্রাইক করুন!’’ অরুণ জেটলিও বলেন, ‘‘পাকিস্তান ছাড়া আর কেউ ভারতের বায়ুসেনার হামলার নিন্দা করেনি। গুরুই (পিত্রোদা) যদি এমন হয়, শিষ্য তো নিষ্কর্মা হবেই?’’
পিত্রোদার মন্তব্যে মোদী ফায়দা তুলছেন দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে ডেকে পাঠান রাহুল। বিবৃতি লঘু করতে বলেন। এর পর স্যাম বলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতা নয়, সাধারণ নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে তাঁর জানার অধিকার আছে। এতে ভুলটা কী?’’ ক্ষত মেরামত করতে কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট, পুলওয়ামার ঘটনা মোদী সরকারের বড় ব্যর্থতা। কিন্তু বায়ুসেনার হামলা তাদের সাহসের উৎকৃষ্ট নজির। পুলওয়ামার খবর পেয়েও প্রধানমন্ত্রী শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিজেপি সরকারই মাসুদ আজহারকে ছেড়েছে। এখন দুর্নীতি, বেকারি, কৃষি সঙ্কট, নোটবন্দি, জিএসটি থেকে নজর ঘোরাতেই এক জনের ব্যক্তিগত মতামতকে সামনে রেখে বিষ ছড়াচ্ছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy