অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
‘উনিশটি বার’ হয়নি। তবে ‘ঘায়েল’ হয়েছেন অন্তত ১৬ বার। কিন্তু তাতেও থামেননি। ধন্যি তাঁর ‘অধ্যবসায়’। নামটা অবশ্য গঙ্গারাম নয়— ফক্কর রামায়ণী। ‘পিলের জ্বর’ বা ‘পাণ্ডু রোগ’ও তাঁর নেই। ‘রোগ’ একটাই। ভোটে দাঁড়ানো। এ পর্যন্ত মোট ১৬ বার ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এ বার লোকসভা ভোটে ফের প্রার্থী তিনি। মথুরা লোকসভা কেন্দ্রে। নির্দলের হয়ে। লক্ষ্য একটাই, সাংসদ হয়ে অযোধ্যায় রামমন্দির গড়বেন। আর নির্মল করবেন যমুনা নদীকে।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় আট বার। আর লোকসভা ২০১৯ অর্থাৎ এ বার ধরলে ন’বার। জরুরি অবস্থার পর যে লোকসভা ভোট হয়েছিল, তখন থেকে লোকসভা নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছেদ পড়েনি। বিধানসভা-লোকসভা মিলিয়ে মোট ১৭ বার প্রার্থী হয়েছেন। ভোট এলেই নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন ফক্কড় রামায়ণী ওরফে ফক্কড় বাবা (নির্বাচন কমিশনে এই নামেই মনোনয়ন পেশ করেছেন)। ২০১৪ সালে তো জামানত জব্দ হয়েছিল বাবার। কিন্তু তাতেও আক্ষেপ নেই। জনগণ একদিন তাঁকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন— বক্তব্য ফক্কড় বাবার।
ফক্কড় বাবা ভোটে লড়তে ৭৩ বসন্ত পার করে ফেলেছেন। পেশায় সাধু বা সন্ত। মথুরার গলতেশ্বর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। পুজোপাঠ আর অন্যের দরজায় ভিক্ষে করেই ‘কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে যায়’। এখন অবশ্য দোরে দোরে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করে ফিরছেন। এ বারও গত ২৬ মার্চ নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেলেছেন। মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হওয়ার পর প্রথম দিনই। তার আগে জয়ের প্রার্থনা করে পুজো দিয়েছেন যমুনায়।
আরও পড়ুন: ‘শান্তিপ্রিয় হিন্দু’দের সন্ত্রাসী বলেছে কংগ্রেস, দেশ ক্ষমা করবে না, ভোটপ্রচারে মেরুকরণ তাস মোদীর
আরও পড়ুন: আখলাক খুনে মূল অভিযুক্ত যোগীর সভার প্রথম সারিতে!
যমুনাকে দূষণমুক্ত করে নির্মল নদী উপহার দেওয়াই এবারও ফক্কড় বাবার অন্যতম প্রতিশ্রুতি। তার সঙ্গে রাম মন্দির। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে ফক্কড় বাবা বলেছেন, ‘‘জিতলে অন্য সাংসদদের বুঝিয়ে রাজি করাব, কেন ইতিহাস পুনঃস্থাপনে রাম মন্দির নির্মাণের প্রয়োজন। আমি মনে করি ভোটাররা এক দিন ঠিকই এর গুরুত্ব বুঝতে পারবেন এবং আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেবেন।’’
জিতিয়ে যদি সত্যি দেন, তাহলে কী করবেন ফক্কড় বাবা? দেশের জন্য ‘রামমন্দির’ আর ‘নির্মল যমুনা’। কিন্তু নিজের জন্য? বাবা বলছেন, ‘‘হাঁটুতে খুব ব্যথা। হাঁটতে কষ্ট হয়। তাই জিতলে একটা গাড়ি কিনব। সেটাতেই যাতায়াত করব।’’ যদিও পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলেন, সে গাড়ির ‘খরচ বহন করবেন তাঁর শিষ্যরাই’।
শিষ্যরা ভোট দেবেন তো? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য ২৩ মে গণনার পরেও বোঝা খুব দুষ্কর হবে। কে ভোট দিল বা দিল না, প্রতিটি ভোট বিশ্লেষণ করে তার উত্তর পাওয়ার মতো মেকানিজম কি আর বাবার আছে? রাজনীতি যতই সম্ভাবনার শিল্প হোক, শুধু শিষ্যদের ভরসায় যে ভোটে জেতা যে বড্ড কঠিন, ১৬ বার লড়াই করে এত দিনে বুঝে যাওয়ার কথা ফক্কড় বাবার। তবু ভোট এলেই বাবার মধ্যে যেন লড়াইয়ের প্রবৃত্তি জেগে ওঠে।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ফক্কড় বাবার হলফনামা।
লড়াইয়ে এ বার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হেভিওয়েট তারকা প্রার্থী হেমা মালিনী। ফলে তাঁর পক্ষে মথুরায় জয় পাওয়া যে কার্যত অসম্ভব, সেটা জানেন ফক্কড় বাবা। তবু শুধু মনের কোণায় জমে থাকা বিশ্বাসে ভর করেই ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েন বারবার। হেরেছেন ১৬ বার। এই নির্বাচনে না হয় আরও একবার....
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy