Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের অবস্থা ফিরিয়ে ভোটের মাঠে অতিশী

ব্যতিক্রম নয়। অরবিন্দ কেজরীবালের শাসনে এটা অধিকাংশ সরকারি স্কুলের গড় ছবি। যে কারণে বেসরকারি স্কুল ছেড়ে সরকারি স্কুলে পড়তে ভিড় করছেন নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারাও।

অতিশী মারলেনা

অতিশী মারলেনা

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে দেখেছিলাম, পলেস্তারা খসা, বিবর্ণ, ধুঁকতে থাকা বাড়িটাকে। অবাক হইনি। সরকারি স্কুল উঠে যাওয়াটাকেই তখন মনে হয়েছিল, বিবর্তনের অনিবার্য অঙ্গ। কিন্তু দিল্লিতে আম আদমি সরকারের চার বছর শেষে পশ্চিম বিনোদনগরের সেই সর্বোদয় স্কুলেরই খোলনলচে বদলে গিয়েছে। ঝাঁ-চকচকে ক্লাসরুমে বসেছে প্রজেক্টর, ডিজিটাল বোর্ড। তৈরি হয়েছে গবেষণাগার। রয়েছে সুইমিং পুল। তৈরি হচ্ছে জিম, বাস্কেটবল কোর্ট, অডিটরিয়াম। প্রধানশিক্ষক এল কে দুবে বলেন, ‘‘বন্ধ হওয়া ১৯টি সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা এখানে পড়ছে।’’

ব্যতিক্রম নয়। অরবিন্দ কেজরীবালের শাসনে এটা অধিকাংশ সরকারি স্কুলের গড় ছবি। যে কারণে বেসরকারি স্কুল ছেড়ে সরকারি স্কুলে পড়তে ভিড় করছেন নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারাও।

এই অসাধ্য সাধন যিনি করেছেন, সেই অতিশী মারলেনা বকলমে গত চার বছর দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার পরামর্শদাতা ছিলেন। দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়ানোয় জোর দিয়েছিলেন। অক্সফোর্ড-ফেরত সেই অতিশীকে পূর্ব দিল্লিতে প্রার্থী করেছেন কেজরীবাল। বিবাহসূত্রে অতিশী নাকি খ্রিস্টান, কারও মতে ইহুদি! বিতর্ক বেড়ে যাওয়ার আগে লড়তে নেমেছেন স্রেফ অতিশী নামেই। বিপক্ষে বিজেপির গৌতম গম্ভীর, কংগ্রেসের অরবিন্দ সিংহ লাভলি।

অতিশী জানেন, যে পড়ুয়ারা সরকারি স্কুলে আসছে, তাদের পরিবারই তাঁর ভোটব্যাঙ্ক। মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যারা পেশায় ছোট ব্যবসায়ী, অটোচালক, রিক্সাওয়ালা, মজদুর। গত বিধানসভায় কার্যত তাঁদের ভোটেই বিপুল জয় পেয়েছিলেন কেজরী। অটোচালক রাকেশ পাসোয়নের কথায়, ‘‘প্রতি ছ’মাসে ছেলে কতটা উন্নতি করেছে, তা আমাদের ডেকে জানান শিক্ষকেরা। আগে এ সব কিছুই ছিল না।’’

পাল্টেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ছবিও। সরকারি হাসপাতালে এখন চিকিৎসককে দেখতে পাওয়া যায়, থাকে ওষুধ। বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে কয়েকশো মহল্লা ক্লিনিকও। কলা বিক্রি করতে করতে জানালেন পুনিত।

পূর্ব দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের ৮০ শতাংশ মানুষ থাকেন কলোনিতে। যা অধিকাংশই বেআইনি। ছোট-ছোট ঘুপচি ঘর, আলো-বাতাসের অভাব, ঘিঞ্জি গলি, উপচে পড়া ভ্যাট— কার্যত বস্তির সামান্য উন্নত সংস্করণ। পূর্ব দিল্লির লক্ষ্মীনগর, কৃষ্ণনগর, সাহাদ্রা, ত্রিলোকপুরী, জঙ্গপুরা, কোন্ডলির মতো এলাকাগুলিতে উত্তরপ্রদেশ-বিহার ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বড় সংখ্যক মানুষ বাস করেন। ইতিমধ্যেই কলোনিগুলিতে কম দামে বিদ্যুৎ ও জল পৌঁছে দিয়েছে আপ সরকার। লোকসভায় জিতলে কলোনিগুলি সরকারি ছাড়পত্র পাবে, এই আশ্বাস দিচ্ছেন অতিশী। পটপরগঞ্জ সোসাইটি, ময়ূর বিহারের আবাসন এলাকার উচ্চ-মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ভোট সরিয়ে রেখেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন আপ নেতৃত্ব।

আগের বারের বিজেপির সাংসদ মহেশ গিরি জেতার পরে সেই যে উধাও হয়েছিলেন, পাঁচ বছরে পাঁচবারও দেখা যায়নি তাঁকে। মহেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখে প্রার্থী হিসাবে বিজেপি বেছে নেয় গৌতম গম্ভীরকে। প্রাক্তন কেকেআর অধিনায়ক দিল্লিরই ছেলে। পারিবারিক ব্যবসাও রয়েছে পূর্ব দিল্লিতে। তাই ছোট থেকে হাতের তালুর মতো চেনেন গোটা এলাকাকে। পূর্ব দিল্লির বিখ্যাত যানজট, পার্কিং-এর সমস্যা, কলোনিগুলির জলের সমস্যা মিটিয়ে ভবিষ্যতে পূর্ব দিল্লিকে ‘মডেল’ লোকসভা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি। নতুন মুখ হওয়ায় দল ও সঙ্ঘ পরিবারের সাংগঠনিক শক্তির উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা করতে হচ্ছে গৌতমকে। বালাকোট-পুলওয়ামার মতো ঘটনার উল্লেখ করে গৌতম জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুললেও লক্ষ্মীনগর, কীর্তিনগর, ওখলা, পটপরগঞ্জ-সহ পূর্ব দিল্লির ছোট-ছোট ব্যবসায়ীরা যে নোটবাতিল ও জিএসটি নিয়ে সরকারের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে দল। ফলে বণিক শ্রেণির একাংশের ভোট বিজেপি ঝুলিতে যাবে না, এটা স্পষ্ট পূর্ব দিল্লিতেও। ওখলার নিরু চকে গাড়ির ব্যাটারি ব্যবসায়ী মারুফ স্পষ্ট জানালেন, ‘‘জোড়া ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি ছোট ব্যবসায়ীরা। কেন ভোট দেব এই সরকারকে?’’ সঙ্গী মহসিন বলে ওঠেন, ‘‘জিএসটি না হয় বুঝলাম, কিন্তু নোট বাতিল কেন হয়েছিল, বুঝতে পারিনি। আপনি বলতে পারবেন?’’

২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসের আগে পর্যন্ত গোটা পূর্ব দিল্লিকে ‘যমুনাপার’ বলেই নাক সিঁটকাতেন অন্য প্রান্তের বাসিন্দারা। দক্ষিণ দিল্লির গরিব তুতো ভাই পূর্ব দিল্লির হাল ফেরে গেমসের সৌজন্যে। চওড়া হয় রাস্তাঘাট। একাধিক মেট্রো লাইনের সাহায্যে এক দিকে দক্ষিণ দিল্লি ও অন্য দিকে নয়ডার সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। গত দশ বছরের সেই পাল্টানো ছবিকেই হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছেন শীলা দীক্ষিত সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী অরবিন্দ সিংহ লাভলি। ময়ূর বিহারের অ্যালকন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘কংগ্রেসই একমাত্র পারে দিল্লির উন্নতি করতে।’’ সত্যিই কি তাই? উত্তর দেবে ১২ মে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government School Arvind kejriwal New Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE