Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

ভোটের আগে আয়কর দফতরের নিশানায় শুধু বিরোধীরাই? জানতে চাইল কমিশন, অভিযোগ ওড়াল কেন্দ্র

মঙ্গলবার সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-ও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বেঙ্গালুরুতে আয়কর দফতরের সামনে কংগ্রেস-জেডিএস কর্মীদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র।

বেঙ্গালুরুতে আয়কর দফতরের সামনে কংগ্রেস-জেডিএস কর্মীদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৪
Share: Save:

নির্বাচনের আগে আয়কর দফতর তাদের তল্লাশি অভিযানের জন্য বেছে নিচ্ছে শুধু মাত্র বিরোধী নেতা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদেরই? গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় এই অভিযোগ তুলেছেন দেশের বিরোধীরা। বিরোধীদের লাগাতার অভিযোগের চাপে শেষ পর্যন্ত আসরে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবারই কমিশনের প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। গত ছ’মাসে কোন কোন রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে আয়কর অভিযান চালানো হয়েছে, সেই তথ্যে নজর রাখলে অবশ্য সামনে আসছে অন্য ছবি।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ছ’মাসে সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে মোট পনেরোটি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে আয়কর দফতর। এই একই সময়ে শুধু এক জন বিজেপি নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আয়কর দফতর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উত্তরাখণ্ডের যে বিজেপি নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আয়কর, তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই দূরত্ব বাড়ছিল দলের।

বিরোধী নেতা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের লক্ষ্য করে গত ছ’মাসে যে ১৫টি অভিযান চালিয়েছে আয়কর দফতর, তার মধ্যে পাঁচটি কর্নাটকে, তিনটি তামিলনাড়ুতে, দু’টি অন্ধ্রপ্রদেশে, দু’টি দিল্লিতে এবং একটি করে অভিযান চালানো হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরপ্রদেশে।

গত রবিবার মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক এবং তাঁর প্রাক্তন উপদেষ্টার বাড়িতে আয়কর হানার খবর এখনও টাটকা। আয়কর দফতরের তথ্য ঘাঁটলে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, এই তল্লাশি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মধ্যপ্রদেশের এই তল্লাশির ঠিক আগেই অন্ধ্রের তেলুগু দেশম নেতা এবং ব্যবসায়ী সি এম রমেশের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল আয়কর দফতর। একই সঙ্গে তল্লাশি চালানো হয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের মাইদুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের তেলুগু দেশম প্রার্থী পুত্তা সুধাকর যাদবের বাড়িতেও। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং জাতীয় রাজনীতিতে তেলুগু দেশম এবং তাদের নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডুর পরিচিতি বিজেপি বিরোধী শক্তির নেতা হিসেবেই।

তার ঠিক আগেই, ২৯ মার্চ আয়কর দফতর তল্লাশি চালিয়েছিল তামিলনাড়ুতে। এ ক্ষেত্রে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিলেন ডিএমকে কোষাধ্যক্ষ এবং কাঠপাডির বিধায়ক দুরাই মুরুগান। তামিলনাড়ু ও জাতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে ডিএমকে-র অবস্থান বিজেপি বিরোধী শিবিরেই।

আরও পড়ুন: ফাঁস হওয়া নথি পেশ করা যাবে আদালতে, রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা কেন্দ্রের

তামিলনাড়ুর সঙ্গে একই সময়ে আয়কর দফতরের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল কর্নাটকেও। এখানেও আয়করের নজরে ছিলেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন জনতা দল (সেকুলার)-কংগ্রেস জোটের নেতা-মন্ত্রীরাই। তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল জেডিএস নেতা এবং কর্নাটকের সেচমন্ত্রী সি এস পুত্তারাজুর বাড়িতে। তিনি একই সঙ্গে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। একই দিনে অভিযান চালানো হয়েছিল কুমারস্বামীর ভাইয়ের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিদের বাড়িতে। অভিযান চালানো হয়েছিল কর্নাটকের পূর্তমন্ত্রী এইচ ডি রেভান্নার হাসনের বাড়িতেও।

গত ছ’মাসের মধ্যে দিল্লিতে কৈলাশ গহলৌত এবং নরেশ বালিয়ান নামের দুই আম আদমি পার্টির নেতাদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দফতর। গত মাসেই উত্তরপ্রদেশে তল্লাশি চালানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিক এবং বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতীর সহযোগী নেট রামের বাড়িতেও।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বেছে বেছে বিরোধীদের লক্ষ্য করেই তল্লাশি চালাচ্ছে আয়কর, এই অভিযোগ নিয়ে শুরু থেকেই সরব বিরোধীরা। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী বলেছেন, ‘‘আয়কর অভিযানই হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসল সার্জিকাল স্ট্রাইক। এই রাজনৈতিক প্রতিশোধের খেলায় তাঁকে সাহায্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রকের তথ্যপ্রযুক্তি আধিকারিক বালাকৃষ্ণ। নির্বাচনের সময় দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের দিয়ে বিরোধীদের হেনস্থা করাই এই খেলার একমাত্র উদ্দেশ্য।’’ অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুরও দাবি, বিরোধীদের নিশানা করে অভিযান চালাতে বিশেষ দলও তৈরি করেছে কেন্দ্র। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের দাবি, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে আমার ওপর চাপ বাড়ানোর খেলা চলছে। আমার এ ভাবে আমাকে চাপে ফেলা যায় না। আসল বিষয় থেকে মুখ ঘোরাতেই এই চেষ্টা চলছে। এ সবই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে করানো হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: সিইও-কে বলে তল্লাশির নির্দেশ কমিশনের

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে বিরোধীদের হেনস্থা করার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একের পর এক বিরোধী নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশনও। তাদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ রাজস্ব ও শুল্ক দফতর জানিয়েছে, তাদের এই অভিযানে কোথাও কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। মঙ্গলবার সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-ও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার কথায়, ‘‘এই সমস্ত অভিযানের জন্য সরকারকে দায়ী করা ঠিক নয়। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী সংস্থাগুলি নিরপেক্ষ ভাবে এই অভিযান চালিয়েছে।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE