ভোটের ময়দানে পবন কল্যাণই এ বার চন্দ্রবাবুর ‘মুশকিল আসানে’র ভূমিকায়। ছবি: পিটিআই।
তিনি সিনেমার নায়ক। যেখানেই যান, হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করে তাঁকে দেখতে। আর তেলুগু ছবির এই নায়ক নিজেকে শুধু সিনেমার পর্দাতেই আটকে রাখেন না। মানুষের দুঃখদুর্দশায় পাশে দাঁড়ানোরও সুনাম রয়েছে তাঁর। ভোটের ময়দানে সেই পবন কল্যাণই এ বার চন্দ্রবাবুর ‘মুশকিল আসানে’র ভূমিকায়। পবন তেলুগু ছবির আর এক নায়ক চিরঞ্জীবীর ছোট ভাই। তাঁদের আর এক ভাই, তেলুগু ছবির পরিচিত নাম নগেন্দ্র বাবুও এ বার ভোটের ময়দানে নেমেছেন পবনের সঙ্গেই।
না, তেলুগু দেশমের হয়ে প্রচারে নামেননি পবন। বরং অন্ধ্রের ভোটে তাঁর দল জনসেনা প্রচার করে বেড়াচ্ছে নায়ডুর বিরুদ্ধেই। আর সেখানেই ভয় চন্দ্রবাবুর প্রধান প্রতিপক্ষ ওয়াই এস আর কংগ্রেসের নেতা জগন্মোহন রেড্ডির! কারণ, তাঁর মনে হচ্ছে, রাজ্যে বিরোধী ভোট ভাগ করতে এটা আসলে চন্দ্রবাবুরই চাল। পর্দার আড়ালে পর্দার নায়ক যেন মিশে চন্দ্রবাবুর সঙ্গেই!
এমন কথা মনে হল কেন? হায়দরাবাদের বানজারা হিলসে জগন্মোহনের দফতরে বসে দলের নেতা ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘২০০৮-এ চিরঞ্জীবীর প্রজা রাজ্যম পার্টির সঙ্গে ছিলেন পবন। কিন্তু ২০১৪-য় চিরঞ্জীবী যখন কংগ্রেসের সঙ্গে যোগ দিলেন, মেনে নিতে পারেননি তিনি। সেই বছরেই বিজেপি-চন্দ্রবাবুর জোটের হয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন। এ বার অন্ধ্রে ১৭৫টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে জনসেনার জোট। সবাই জানে এটা মুখ্যমন্ত্রীরই বিরোধী ভোট কাটার ছক।’’ সত্যিই, এ বার অন্ধ্রের যা চিত্র, তাতে যথেষ্ট কোণঠাসা চন্দ্রবাবু। কারণ, ২০১৪-র লোকসভা ও রাজ্যের বিধানসভা ভোটে আসন সংখ্যা কম হলেও ভোটের অঙ্কে তাঁর থেকে কোনও ভাবে পিছিয়ে ছিলেন না জগন। সে বার বিধানসভায় ১৭৫টি-র মধ্যে ১০২টি পেয়েছিল তেলুগু দেশম। জগন ৬৭টি। কিন্তু দু’পক্ষের ভোটের অঙ্ক প্রায় সমান। ৪৪ শতাংশের মতো। আর এ বার, রাজ্য চালাতে গিয়ে পাঁচ বছরে মানুষের ক্ষোভবিক্ষোভ সামলাতে হচ্ছে চন্দ্রবাবুকে, হাওয়াও জগনের দিকে। উল্টো দিকে বিজেপিও। কী ভাবে সামলাবেন চন্দ্রবাবু, যদি না বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
লোকসভা ২০১৪
মোট আসন ২৫
• টিডিপি ১৫
• ওয়াইএসআর কংগ্রেস ৮
• বিজেপি ২
এখন বিধানসভা
মোট আসন (১৭৫+১ মনোনীত)
• টিডিপি ৯৯
• ওয়াইএসআর কংগ্রেস ৬৬
• বিজেপি ৩
• নবোদয়ম ১
• নির্দল ১
• শূন্য আসন ৫
অন্ধ্রের সর্বত্র তাই জনসেনার ঝোড়ো প্রচারের পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন মদত দেখছেন অনেকে। জনসেনা অবশ্য একা লড়ছে না, এ রাজ্যে তাঁর সঙ্গী মায়াবতীর বিএসপি ও বামেরা। মায়াবতীর সঙ্গে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় যৌথ প্রচারও করবেন পবন। হায়দরাবাদের মাধাপুরাতে জনসেনার দফতরে বসে দলের নেতা পাল্লাম নেগা শ্রীনিবাস অবশ্য চন্দ্রবাবুর সঙ্গে তাঁদের যোগের কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের থেকে সাহায্য নিয়েও কিছু করেননি চন্দ্রবাবু। এখন এনডিএ জোট ছেড়ে আসার পরে নাটক করছেন।’’ তাঁর দাবি, তেলুগু সিনেমার সুপারস্টার পবন সমাজের ভেদভাব দূর করতে নেমেছেন। রাজ্যের ১৪৩টি আসনে জনসেনা যে সব প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে সাধারণ আসনেও প্রার্থী হয়েছেন তফসিলি জাতির অনেকে। আর পবনের সমাজসেবার কথাও সবাই জানে। শ্রীকাকুলামে ঝড়ের সময়ে সবার আগে পৌঁছে গিয়ে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে আমজনতার জন্য তাঁর কাজের প্রভাব এ বারের ভোটে পড়বে।
চন্দ্রবাবুর এই কৌশল বুঝে ভোটের মুখে মরিয়া প্রচার শুরু করেছেন জগনও। তাঁর হেলিকপ্টার চষে বেড়াচ্ছে গোটা রাজ্য। রোজ অন্তত চারটি এলাকায় জনসভা। এখনও পর্যন্ত ৭৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। তবে সভার ভিড় ইভিএমে কতটা ছাপ ফেলবে, চিন্তা সেটাই। বানজারা হিলসের দফতরে বসে দলের এক নেতা বলেন, ‘‘জগনের সভায় প্রথম থেকেই ভিড় হয়। এটা নতুন কিছু নয়। তবে ভিড় আর ভোট এক ব্যাপার নয়। বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেস, বিজেপির পাশাপাশি এ বার জুড়েছে জনসেনা। আসন না পেলেও এরা ভোট কাটতে পারে। তাই সে সব ভেবেই এগোতে হচ্ছে আমাদের।’’ অন্ধ্রের সর্বত্র চন্দ্রবাবুকে কৌশলী নেতা হিসেবেই জানে মানুষ। পিলেরুর ফল বিক্রেতা আদিনারায়ণ রেড্ডি যেমন বলেন, ‘‘হাওয়া ঘোরানোর গুণ
রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।’’
হাওয়া ঘুরবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy