Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আজ-হারেও সব ‘দোষ’ নেহরুর! মাসুদ নিয়ে বিজেপি-কংগ্রেসের নতুন বিতর্কের চিত্রনাট্য

তৈরি হল বিজেপি-কংগ্রেসের নতুন বিতর্কের চিত্রনাট্য। এবং সেই বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন জওহরলাল নেহরু!

মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র।

মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

যেটা হওয়ার কথা ছিল বিজেপির ভোট প্রচারের অন্যতম সেরা অস্ত্র, কার্যত সেটাই হয়ে গেল তাদের দুর্বলতার জায়গা! তা নিয়ে তৈরি হল বিজেপি-কংগ্রেসের নতুন বিতর্কের চিত্রনাট্য। এবং সেই বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন জওহরলাল নেহরু!

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক তালিকাভুক্ত করার কূটনৈতিক প্রয়াস শেষ পর্যন্ত ধাক্কা খেয়েছে। আজ সকাল থেকেই মোদীর বিদেশনীতির ব্যর্থতা নিয়ে মাঠে নামেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। বিবৃতি দিয়ে মোদীর উদ্দেশে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র। চিনের ভিটোতে এই আন্তর্জাতিক প্রস্তাব ফের আটকে যাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা পিছনের পায়ে মোদী সরকার। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দুই মন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং রবিশঙ্কর প্রসাদ পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে টেনে এনেছেন রাহুলের বাবার মাতামহ জওহরলাল নেহরুকে!

মাসুদ নিয়ে মোদী সরকারের ব্যর্থতাকে কটাক্ষ করে রাহুল টুইট করেন, ‘‘শি চিনফিংকে ভয় পান দুর্বল মোদী। ভারতের বিরুদ্ধে চিনের এই পদক্ষেপ নিয়ে একটি শব্দও তাঁর মুখ থেকে বেরোল না।’’ কিছুটা ব্যঙ্গের সুরে রাহুল লিখেছেন, ‘‘নমোর চিন-কূটনীতির তিনটি ভাগ। এক, গুজরাতে শি–র সঙ্গে দোলনায় দোল খাওয়া। দুই, দিল্লিতে শি-কে জড়িয়ে ধরা। তিন, চিনে শি-এর সামনে মাথা ঝোঁকানো।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁর টুইট নির্দেশিত পথেই একটি বিবৃতি দিয়েছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। বলা হয়েছে, ‘কম্পমান মোদী সরকারের ব্যর্থ চিনা-কূটনীতি দেশের জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করল। মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক তালিকভুক্ত করতে চিনের বাধা দেওয়ার ঘটনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের লড়াইকে ধাক্কা দিল।

আরও পড়ুন:জঙ্গি তালিকায় উঠলেও মাসুদ শাস্তি পেত কি?

দুঃখের বিষয়, মোদীর কূটনীতিতে একের পর এক বিপর্যয় ঘটেছে।’’ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছরে দুর্বল মোদী সরকারের চিনের সামনে ক্রমাগত ঝুঁকে থাকার জন্যই আজ এই অবস্থা তৈরি হল। ভারতের স্বার্থ যখন বারবার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তখনই তিনি মৌন মোদী হয়ে রয়েছেন কেন? এর উত্তর কি তিনি দেবেন?”

নিরাপত্তা পরিষদে ভারতে আসন দেওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে লোকসভায় যা বলেছিলেন নেহরু। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫ আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর।

জবাব দিতে গিয়ে জেটলি এবং রবিশঙ্কর টেনে এনেছেন নেহরু প্রসঙ্গ! জেটলির কথায়, ‘‘কাশ্মীর এবং চিন— উভয় ক্ষেত্রেই নেহরু ভুল করেছিলেন। ১৯৫৫ সালে ২ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা তাঁর সেই কুখ্যাত চিঠিতে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে ঘরোয়া ভাবে জানানো হয়েছে, চিনকে রাষ্ট্রপুঞ্জে নেওয়া হোক, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে নয়। ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদে আনা হোক। কিন্তু এটা ভারত মেনে নিতে পারে না। চিনের মতো এক মহৎ দেশকে নিরাপত্তা পরিষদে স্থান না দেওয়া খুবই আপত্তিজনক।’’

এই চিঠি উদ্ধৃত করে জেটলির প্রশ্ন, এ বার কংগ্রেস সভাপতি কি জবাব দেবেন, প্রকৃত দোষী কে? আর রবিশঙ্করের কথায়, ‘‘রাহুল গাঁধীকে দেখে তো মনে হচ্ছে, তিনি উৎসবের মেজাজে রয়েছেন। চিনের এই মানসিকতায় গোটা দেশ যখন শোকগ্রস্ত, তখন রাহুলের হলটা কী! ওনার টুইট নিশ্চয়ই পাকিস্তানে আজ হেডলাইন হবে।’’ জেটলির মতো তিনিও নেহরুর চিঠি তুলে ধরে সমালোচনা করেছেন।

জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেন, ‘‘এই অবোধ আইনমন্ত্রীকে আর কি বলব আমরা! তিনি জানেন না, ১৯৪৫-এর পর নিরাপত্তা পরিষদে কোনও পরিবর্তন হয়নি। ভারত স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭-এ। নেহরু নিজেই সংসদে বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ সংশোধন না করে নিরাপত্তা পরিষদে কোনও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কোনও প্রস্তাবও আমাদের কাছে নেই। নেহরুকে আক্রমণ করে মোদী সরকার আসলে নিজের দুর্বলতা আড়াল করতে চাইছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Priyanka Gandhi Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE