আকাশ বিজয়বর্গীয়। নিজস্ব চিত্র
ইনদওর শহরের যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে যে কোনও অটোচালককে বলুন, কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বাড়ি যাবেন। তিনি নন্দনগরের বাড়িতে নিয়ে চলে যাবেন। বাড়ির পাশেই ‘কাকিজি কি দুকান’ নামের বড় মুদিখানা। একসময় কৈলাসের প্রয়াত মা, অযোধ্যাবাই এই মুদিখানা চালাতেন। পাড়ার লোক তাঁকে ‘কাকিজি’ বলে ডাকতেন। সেই থেকেই দোকানের নামকরণ।
এ বার বাড়ির ভিতরে চলুন।যদি ভেবে থাকেন, লোকসভা নির্বাচনের বাজারে এই বাড়ির মধ্যে মধ্যপ্রদেশের ভোট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, তার কৌশল তৈরি হচ্ছে, ভুল করবেন। ইনদওরের নন্দনগরে আটপৌরে গলির এই বাড়িতে ভোটের কৌশল তৈরি হয় ঠিকই। সেটা মধ্যপ্রদেশের নয়। পশ্চিমবঙ্গের।
কৈলাস বিজয়বর্গীয় কলকাতায়। বাড়ির সদর দরজাতেই দেখা মিলল তাঁর পুত্র, ইনদওরের বিধায়ক আকাশ বিজয়বর্গীয়ের। গত ডিসেম্বরে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও, কৈলাস-পুত্র আকাশ বিধানসভায় জিতেছেন। কলকাতার কাগজের সাংবাদিককে পেয়ে আকাশের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের কী হাল? বিজেপির পক্ষে হাওয়া কেমন? হাসতে হাসতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবা বাড়িতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়েই আমাদের আলোচনা হয়।’’ হরিয়ানার দায়িত্ব নিয়ে দলকে ক্ষমতায় আনার পর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কৈলাসকে পশ্চিমবঙ্গের ভার দিয়েছিলেন। আকাশ বলেন, ‘‘বাবা এখন পশ্চিমবঙ্গ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।’’
না-ই বা হলেন প্রার্থী। ইনদওরের অটোওয়ালারা যেমন নন্দনগরের গলি চেনে, কৈলাসেরও তেমন ইনদওরের অলিগলি নখদর্পণে। এক সময় মায়ের সঙ্গে মুদি-দোকানে বসতেন। প্রথমে এবিভিপি, যুব মোর্চা, তার পর কাউন্সিলর থেকে ইনদওরের মেয়র, বিধায়ক থেকে রাজ্যের মন্ত্রী— কৈলাসের রাজনৈতিক উত্থানের সাক্ষী ইনদওর। গোটা শহর তাঁকে এক ডাকে ‘ভাই’ বলে চেনে। কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে ইনদওরের সাংসদ সুমিত্রা মহাজন ওরফে ‘তাই’-এর সঙ্গে কৈলাসের ‘রেষারেষি’-ও সুবিদিত। ‘ভাই’ না ‘তাই’, ইনদওরে কে বেশি কাজ করেছেন, কার হাত ধরে ইন্দ্রেশ্বর মন্দিরের শহরে বেশি উন্নয়ন হয়েছে, তা নিয়ে দুই শিবিরে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের লড়াই।
দুই শিবির শুধু এক বিষয়ে একমত। ভাই আর তাইয়ের দৌলতেই ইনদওর গত তিন দশক ধরে বিজেপির দুর্ভেদ্য দুর্গ। ৭৫ বছর গণ্ডি পার করে ফেলা সুমিত্রা এ বার প্রার্থী হননি। ইনদওর ভেবেছিল, তাই-এর বদলে এ বার ভাই। কিন্তু কৈলাস জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি প্রার্থী হবেন না। কারণ? তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাবা বাংলায় ব্যস্ত। তাই ইনদওরের গড় সামলানোর দায়িত্ব পড়েছে ছেলের কাঁধে। বাড়ি থেকে বের হলেই নানা জনে নানা সমস্যা নিয়ে হাজির। ইনদওরের বিজেপি দফতরের পাশেই নতুন বিধায়কের দফতর। সেখানে নিয়ম করে জনতার দরবারও বসে। আকাশ বলেন, ‘‘বাবার সুবাদে একটা রাজনৈতিক পরিবেশের বড় হয়েছি। তাই কোনও সমস্যা হয় না।’’
কিন্তু ‘ভাই’ ব্যস্ত বাংলায় থাকায় ইনদওর হাতছাড়া হয়ে যাবে না তো?
বিজেপির চিন্তা ছিল, তাই-শিবিরের লোককে প্রার্থী করা হলে ভাই-শিবির চটবে। আবার ভাই-এর অনুগামীকে প্রার্থী করলে তাই-ভক্তদের গোসা হবে। অনেক চিন্তাভাবনা করে বিজেপি ইনদওরে দলের পোড়খাওয়া নেতা শঙ্কর লালওয়ানিকে প্রার্থী করেছে। কংগ্রেস প্রার্থী পঙ্কজ সাঙ্ঘভির দাবি, ‘‘এমনিতেই জিততাম। বিজেপি এমন প্রার্থী করায় আমরা কার্যত ওয়াকওভার পেয়ে গেলাম।’’
আকাশ মুচকি হাসেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘মধ্যপ্রদেশে ১৫ বছরের বিজেপি সরকারকে হঠিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতেই পারে। কিন্তু ইনদওর লোকসভা? প্রার্থী যে-ই হোন। জিতবে বিজেপি-ই। আপনি বরঞ্চ বাংলায় কী হচ্ছে বলুন!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy