মনু সরগড়া। —নিজস্ব চিত্র।
পুষ্করের মেলা থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা উটের গলায় হাত বোলাচ্ছিলেন মনু সরগড়া। বৈশাখী দহনে পর্যটকদের আনাগোনা বিশেষ নেই অজমের-পুষ্করে। মনুর ‘ক্যামেল সাফারি’-র ব্যবসায় এখন তাই মন্দা। লোক জুটলে দেড় হাজার টাকার সাফারি ৬০০ টাকাতেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। উটগুলোর দানাপানির খরচটুকু অন্তত উঠুক!
ছোটবেলায় পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দিরের সামনের দোকানে ফাই-ফরমাস খেটে রোজগার শুরু। টাকা জমিয়ে একদিন নিজের ‘ক্যামেল সাফারি’-র ব্যবসা খোলা। রাজস্থানে কংগ্রেসের নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে চাষিদের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুবের ঘোষণা করেছে। মনুকে প্রশ্ন করা গেল, উট কেনার সময় ব্যাঙ্কের ঋণ মিলেছিল?
প্রশ্ন শুনেই মনুর মুখে বিদ্রুপের হাসি খেলে যায়। জবাব মেলে, ‘‘চারটে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। বলে দিল, উটের ব্যবসায় ঋণ মেলে না। তাই মহাজনের থেকে ধার করতে হয়েছে।’’ তফসিলি জাতি-ভুক্ত সরগড়া সম্প্রদায় কংগ্রেসের চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক। কিন্তু মনু সরগড়ার যুক্তি, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে আরও পাঁচটা বছর সুযোগ দেওয়া উচিত। উনি গরিবদের জন্য ভাবছেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ব্রহ্মা মন্দিরের পথে পুষ্করের ঘাটের পুরোহিত-পাণ্ডাদের সঙ্গে দেখা। আপনারা তো ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের, নিশ্চয়ই বিজেপিকে ভোট দেবেন? হাতে পুজোর ফুল নিয়ে দীননাথ পরাশর খিঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘কে বলল, ব্রাহ্মণরা সবাই বিজেপিকে ভোট দেয়? এই ব্রহ্মা মন্দির, পুষ্কর হ্রদের জন্য পাঁচ বছরে কী করেছেন মোদী?’’
রাজস্থানের ভোটে এটা নাকি চেনা অঙ্ক— ব্রাহ্মণ, রাজপুত, বৈশ্যরা ভোট দেবেন বিজেপিকে, আর জাঠ, গুর্জর, মিনা, মুসলিম, দলিত, ওবিসিদের ভোট পাবে কংগ্রেস। কিন্তু এ বার ভোটে দুই দলই সেই জাতপাতের সমীকরণ বদলে দিতে মরিয়া। তারই নমুনা মিলল অজমের থেকে পুষ্করের পথে।
বিজেপির বাহ্মণ, বৈশ্য ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে চাইছে কংগ্রেস। আবার জাঠ নেতা হনুমান বেনিওয়ালকে নিয়ে কংগ্রেসের চিরাচরিত জাঠ ভোটে ভাগ বসাতে চাইছে বিজেপি।
পাঁচ বছর আগের মোদী-ঝড়ে এই অজমের কেন্দ্র থেকেই হেরে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের তরুণ তুর্কি শচীন পাইলট। এখন তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। গত ডিসেম্বরে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী। পাইলট গুর্জর সম্প্রদায়ের। শচীনকে মুখ্যমন্ত্রী না করে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, এ কথা তুলে গুর্জরদের ক্ষোভ উসকে দিতে চাইছে বিজেপি। পাল্টা কংগ্রেস উদাহরণ দিচ্ছে, বসুন্ধরা রাজের আপত্তিতে রাজপুত নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকে রাজ্য সভাপতির পদে বসায়নি বিজেপি। উদ্দেশ্য বিজেপির রাজপুত ভোট কাটা। আবার বিজেপি যাতে জাঠ ভোটে ভাগ বসাতে না পারে, সে জন্য হরিয়ানার জাঠ নেতাদের রাজস্থানে উড়িয়ে এনে প্রচার করছে কংগ্রেস।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত ওবিসি-ভুক্ত মালি সম্প্রদায়ের নেতা। বলা হয়, তিনি তিন ম-এ নির্ভর করে ভোটের অঙ্ক কষেন। মুসলিম, মেঘওয়াল (দলিত) ও মালি। শচীন পাইলট তার সঙ্গে জুড়েছেন আরেক ম-কে। তফসিলি জনজাতি-ভুক্ত মিনা সম্প্রদায়কে।
এক সময়ে মিনা-রা রাজস্থানের অনেক এলাকা শাসন করত। বুন্দির মতো এলাকা মিনাদের থেকেই রাজপুতরা দখল করে। রাজস্থানে জনসংখ্যায় রাজপুতরা ১২ শতাংশ হলে মিনাদের হার ১৪ শতাংশ। অশোক-শচীন মিনা ভোটব্যাঙ্ক ঝোলায় পুরতে তফসিলি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বাইরেও এ বার মিনাদের প্রার্থী করেছেন।
এই জাতপাতের অঙ্ক মুছে দিতেই রাজস্থানে মোদী ও তাঁর ‘বীরত্ব’-কে সামনে রেখে ভোটে নেমেছে বিজেপি। দলের নেতাদের যুক্তি, চার মাস আগে বিজেপিকে সরিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে ঠিকই। কিন্তু দু’দলের ভোটের ফারাক ছিল মাত্র ০.৫ শতাংশ। বিজেপি যখন মোদীকে সামনে রেখে ভোটে নেমেছে, তখন স্থানীয় স্তরে জাতপাতের অঙ্ককেই ভরসা করছে কংগ্রেস।
আর তা করতে গিয়েই, কংগ্রেসের প্রচারে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে রাহুল গাঁধীর ঢাকঢোল পেটানো ‘ন্যায়’ প্রকল্প। গরিবদের জন্য বছরে ৭২ হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি। সদ্য ক্ষমতায় আসা কংগ্রেসের তিন রাজ্য— ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মধ্যে এই রাজ্যেই কংগ্রেসের প্রচারে সব থেকে কম জায়গা পাচ্ছে ‘ন্যায়’। কংগ্রেস মুখপাত্র স্বর্ণিম চতুর্বেদীর যুক্তি, ‘‘আমরা ন্যায় নিয়ে প্রচার চালাচ্ছি। আর টাকা কোথা থেকে আসবে, এই প্রশ্ন তুলে গুলিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy