অজিত পওয়ার ও সুপ্রিয়া সুলে।
রাজা বৃদ্ধ হয়েছেন। উত্তরাধিকারী কে হবেন সেই প্রশ্নে এখন আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে পড়েছেন মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতৃত্ব। দলের একাংশ মনে করছেন, চলতি লোকসভা নির্বাচনই স্পষ্ট করে দেবে— মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে, না ভাইপো অজিত পওয়ার, অবসরে যাওয়ার আগে রাজ্যপাট কার হাতে দিয়ে যাবেন শরদ পওয়ার। লোকসভার লড়াই এ বার তাই গৌণ পওয়ার পরিবারে। ক্ষমতা দ্বন্দ্বে দীর্ণ গোটা পওয়ার পরিবার এবং এনসিপি।
শরদ পওয়ার চান মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে দলের দায়িত্ব নিন। লোকসভার পরে হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁকেই দেখতে চাইছেন বাবা শরদ। দলের পওয়ারপন্থী তথা বর্ষীয়ান নেতারা সুপ্রিয়ার দিকেই। অথচ মেয়ে চান দিল্লির রাজনীতিতে থাকতে। সেই সুযোগে গত কয়েক বছর ধরে তলে তলে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা সংহত করে প্রচ্ছন্ন ভাবে উত্তরাধিকারের দাবি তুলে ধরেছেন শরদের ভাইপো অজিত পওয়ার। দলের অধিকাংশ বিধায়ক পাশে থাকাটাই কুর্সি দখল করার শক্তি জোগাচ্ছে অজিতকে।
আর সেই শক্তিতে ভর করেই, এ বার নির্বাচনে খোদ শরদকে সরিয়ে নিজের ছেলে পার্থকে সেই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়েছেন অজিত। শুরু থেকেই ঠিক ছিল সুপ্রিয়া সুলে বারামতী থেকে যেমন লড়েন লড়বেন। আর শরদ লড়বেন মাভাল কেন্দ্র থেকে। গোড়াতেই পার্থর লড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে শরদ জানিয়েছিলেন, ‘‘একই পরিবারের তিন জনকে টিকিট দেওয়ার প্রশ্ন নেই।’’ কিন্তু মাভাল কেন্দ্র থেকে নিজের ছেলে পার্থকে দাঁড় করানোর প্রশ্নে অনড় থাকেন অজিত। কাকা শরদকে সেই আবদার পৌঁছেও দেন তিনি।
এ যাবৎ এনসিপি-তে শরদ শেষ কথা বললেও, লোকসভার আগে দলে গৃহযুদ্ধ ও ভাঙনের আশঙ্কা করে মাভাল কেন্দ্রে লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেন পওয়ার-প্রধান। পরিবর্তে অজিতের ইচ্ছা মতো পার্থর নাম ঘোষণা করেন তিনি। রাজা যে বৃদ্ধ হচ্ছেন সেটা ইঙ্গিত দেওয়া ছিল লক্ষ্য। যার সুযোগ নিয়ে এখন এ রাজ্যে বিধানসভার আগেই দলের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার ছক কষছেন অজিত। কারণ শরদ ভাল করেই জানেন, পার্থ জিতে দিল্লিতে গেলে খুঁটি শক্তি হবে অজিতের। আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া যাবে তাঁকে। অন্য দিকে তৎপর হয়েছেন শরদও। পার্থর মোকাবিলায় দাদার ছেলে রোহিতকে বিধানসভা নির্বাচনে সামনে তুলে আনতে চাইছেন শরদ। যাতে অজিতকে পাল্টা চাপে রাখা সম্ভব হয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নির্বাচন থেকে শরদের সরে আসা নিয়ে শুরু হয়েছে নান জল্পনা। কারওর মতে, ভাইপো অজিতের চাপে, কেউ বলছেন গৃহযুদ্ধ এড়াতে সরে গিয়েছেন শরদ। যদিও কংগ্রেসের পশ্চিম মহারাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা সোনাল পটেলের মত ভিন্ন। তাঁর কথায়, ‘‘মাভাল দীর্ঘ দিন এনসিপির গড় হলেও, এ বার সেখানে দাঁড়ালে লড়াই কঠিন ছিল।’’ ছেলেকে না দাঁড় করানোর বদলা নিতে বিভীষণের ভূমিকা নিতেন অজিত। সেটা আঁচ করেই মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আসলে শরদ পওয়ার বুঝে গিয়েছেন হাওয়া কোন দিকে বইছে। অজিত দলের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলেছেন। তাই শরদ পওয়ার সরে আসতে বাধ্য হলেন।’’
মঙ্গলবার ভোট বারামতীতে। সেখানে অবশ্য সুপ্রিয়া সুলে এগিয়ে। দশ বছর সাংসদ থাকার সুবাদে বারামতীর উন্নয়ন ঘটিয়েছেন বিস্তর। মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে ট্রেনের যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও প্রভূত উন্নতিসাধন করেছেন তিনি। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের অন্যত্র যেখানে জলের সমস্যা, সেখানে বারামতীর গ্রামীণ এলাকাতেও পৌঁছেছে পানযোগ্য জল।
বারামতী শহরকে পিছনে রেখে কিছুটা পুণের দিকে এগোলেই দাড়ি গ্রাম। আগাছা পোড়ানো ছাইয়ে মুখ কালো করে চাতকের মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় নিঃসঙ্গ পড়ে রয়েছে হাল দেওয়া জমি। কথা হচ্ছিল স্থানীয় যুবক মিলিন্দ কামাথের সঙ্গে। কাজ করেন স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংস্থায়। জানালেন, গত দশ বছরে সুপ্রিয়ার চেষ্টায় এক দিকে যেমন চাষের খেতে জল পৌঁছেছে, তেমনি গ্রামের লোকেদের স্বল্প ঋণে আধুনিক চাষবাসের যন্ত্রও পাইয়ে দিয়েছেন সাংসদ। ফলে আয় বেড়েছে গ্রামে। সেচের ব্যবস্থা হওয়ায় বেড়েছে উৎপাদনও। পরিবারের ওই ক্ষমতার দ্বন্দ্বেও খুড়তুতো ভাই অজিতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন সুপ্রিয়া। ফলে শত পারিবারিক কলহের মধ্যেও বোনকে জেতাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছেন বারামতীর বিধায়ক অজিত।
তবে লোকসভার লড়াই ছাপিয়ে পশ্চিম মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটাই প্রশ্ন— এর পরে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy